এক প্রিয়র জন্মদিনে আরেক প্রিয়র মৃত্যু বেদনার: জয়া আহসান

প্রিয় এক সাহিত্যিকের জন্মদিনে জনপ্রিয় আরেক কথাসাহিত্যিকের চলে যাওয়া যেন মানতে পারছেন না জয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2023, 10:35 AM
Updated : 9 May 2023, 10:35 AM

একদিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী, অন্যদিকে কালবেলা-কালপুরুষ স্রষ্ট্রা সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণ; একদিনে এ দুটি ঘটনা দাগ কেটেছে অভিনেত্রী জয়া আহসানের মনে।

প্রিয় এক সাহিত্যিকের জন্মদিনে জনপ্রিয় আরেক কথাসাহিত্যিকের চলে যাওয়া যেন মানতে পারছেন না তিনি, ফেইসবুকে এক পোস্টে সেই বেদনার কথা লিখেছেন এই অভিনেত্রী।

দুই সাহিত্যিকের ছবি শেয়ার করে মঙ্গলবার দুপুরে জয়া লিখেন, “এক প্রিয়র জন্মদিনের আলোতে আর এক প্রিয়র মৃত্যুর বেদনা বুকে বেজে চলেছে নিরন্তর।

“পৃথিবীর এই কালবেলায় সমরেশ মজুমদার এই পার্থিব পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। ২৫ এর সকালে সারা আকাশজুড়ে তারই যেন অনুরণন। সৃষ্টিতে, সাহিত্যে এই দুই প্রিয়ই নিরন্তর যাতায়াত করে চলুন আজীবন, এই তো প্রাপ্তি, এখানে মৃত্যুর মহিমা শূন্য হয়ে আসে।”

সোমবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকীর ক্ষণে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার।

৭৯ বছর বয়সী এই লেখক গত কিছু দিন ধরেই অসুস্থ হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

তার ট্রিলজি উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ তরুণ বয়সে অনেককে স্বপ্নচারী করে তুলেছিল, তার সাতকাহনে উঠে দাঁড়ানোর প্রেরণা খোঁজেন অনেক নারী, তার সৃষ্ট অর্জুন চরিত্রে ‘থ্রিলড’ হন অনেকে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জন্ম নেওয়া এই কথাসাহিত্যিকের সৃষ্টিকর্ম কিংবা দর্শন নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও তার লেখা দুই বাংলায় ছিল সমান জনপ্রিয়। ফলে শোকের বাতাসও বইছে দুই বাংলা জুড়ে।

জয়া আহসানের মত চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেক তারকাই প্রিয় কথাসাহিত্যিকের মৃতুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তার লেখা সম্বলিত একটি পোস্টার শেয়ার করে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’।

অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন, ‘সমরেশদা’।

নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত লিখেছেন, “শ্রদ্ধা ও বিদায়। প্রিয় সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার।”

সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১৯৪৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গয়েরকাটায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ডুয়ার্স এলাকায় কেটেছে তার ছেলেবেলা, আর তার গল্পে, উপন্যাসে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে সেখানকার অনন্য সৌন্দর্য।

জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে পড়েছেন সমরেশ, তারপর চলে আসেন কলকাতায়, ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন তিনি। পরে স্নাতকোত্তরে পড়েন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গ্রুপ থিয়েটার করতেন সমরেশ, নাটক লিখতে গিয়ে তার গল্প লেখার শুরু। ১৯৬৭ সালে দেশ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ‘অন্তর আত্মা’ প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘দৌড়’, যা ১৯৭৫ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

এরপর একের পর এক উপন্যাস লিখেছেন সমরেশ, যে সংখ্যা দেড়শর বেশি। এর মধ্যে ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’  সবচেয়ে জনপ্রিয়। ‘কালবেলা’কে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আধুনিক ‘ক্ল্যাসিক’ বলেও মনে করেন অনেকে। উত্তাল নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা স্লোগান, বিপ্লব, রক্ত, বোমা ও প্রেমের এক তোলপাড় ফেলা এই কাহিনীর জন্য ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান তিনি।