শুরু হল জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন

ঢাকায় তিন দিনের আয়োজনে অংশ নিচ্ছে পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2023, 02:18 PM
Updated : 4 May 2023, 02:18 PM

ঢাকায় শুরু হয়েছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের একচল্লিশতম সম্মেলন। দেশের ৭২টি শাখা থেকে পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক তিন দিনের এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।

এর আগে ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’ বোধনসংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এ সময় শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়ায় প্রাণে’ গানটি।

সম্মেলনের তিন দিনই সান্ধ্য-অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে।

আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রবীন্দ্রনাথের বাণী আমাদের উদ্দীপ্ত করুক, জাগ্রত করুক-এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এবারের রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে আমরা মিলিত হয়েছি।”

শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, “আমরা তো কথা বলি সুরে সুরে, তবে আমাদের জীবন থেকে গান কী করে বাদ দেব? গান হঠাৎ করে খারাপ হলো কেন আমি বুঝতে পারি না।”

রবীন্দ্রনাথ মানুষের কথা বলার ভঙ্গীটা নিয়েই তার গানে সুর দিয়েছেন উল্লেখ করে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, “আমরা যেভাবে সুরে সুরে কথা বলি, দূরের কাউকে ডাকতে গেলে কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে কি ডাকা যায়? গলাটাকে চড়া স্কেলে নিতে হয়। আবার কাছের কারও সাথে কথা বলতে গেলে কণ্ঠটা আরেক রকম হয়। কথা বলার এই ভঙ্গিমাটা রবীন্দ্রনাথ তার সুরে ব্যবহার করেছেন।”

আতিউর রহমান বলেন, “রবীন্দ্রনাথ কেবল শিল্পচর্চায় নয়, সমাজের নানা ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছেন। তিনি সিন্ধু প্রদেশ থেকে গাভী এনে পতিসরের কৃষকদের দিয়েছিলেন, চেন্নাই থেকে বীজ এনে কৃষকদের দিয়েছিলেন। তার ফলে সেই অঞ্চলের অর্থনীতির যে বিকাশ ঘটেছে, তার সুফল কিন্তু আমরা এখনো পাচ্ছি। আমরা বাঙালি নানাভাবে রবীন্দ্রনাথের কাছে ঋণী।”

কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রভাবনা থেকে প্রেরণা নেওয়ার পরামর্শ দেন অর্থনীতির এই শিক্ষক।

উদ্বোধনের পর ঢোল চলন পরিবেশন করেন মণিপুরী শিল্পীরা। পরে মঞ্চস্থ হয় গীতি–আলেখ্য আন অমৃতবাণী। গ্রন্থনায় ছিলেন মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা ও দীপ্র নিশান্ত। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা।

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ’ নামে। ১৯৮১ সালে বিভাগীয় রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতা ও সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের আয়োজন করে ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ’। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে এই সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপকতর ভিত্তিতে ‘দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ’ গঠন করে দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

দ্বিতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিরা প্রতিবছর জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন অনুষ্ঠান এবং সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশ সাধনের জন্যে বছরব্যাপী কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একটি স্থায়ী জাতীয় কমিটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

তার পরিপ্রেক্ষিতে কবিগুরুর নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় ‘জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ’। নাম পরিবর্তন হলেও অব্যাহত আছে প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী জাহিদুর রহিমের স্মৃতিবহ ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি-ফলক’ পুরস্কার প্রতিযোগিতার আয়োজন।

প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকের বার্ষিক অধিবেশনগুলো কেবল রাজধানী ঢাকাতেই হত। তবে ১৯৮৪ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এক বছর ঢাকায় হলে পরের বছর হবে অন্য কোনো জেলায়।

সে অনুযায়ী এ বছর ১৭, ১৮ ও ১৯ মার্চ নওগাঁয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সাংগঠনিক কিছু অসুবিধার কারণে একচল্লিশতম বার্ষিক অধিবেশন ঢাকাতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিকাল ৫টায় আছে সেমিনার। এবারের বিষয়: নদী তীরের প্রেমের গান। প্রবন্ধ রচনা করেছেন অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক মো. শাহ আযম শান্তনু ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী আজিজুর রহমান তুহিন।

দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে রবিরশ্মির সুবচনে অংশ নেবেন সংস্কৃতিজন ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। এদিন সাড়ে ৮টায় পরিবেশিত হবে লাইসা আহমদ লিসার সংগীত ও শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের নৃত্য পরিচালনায় গীতি–আলেখ্য ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’।

শেষ দিন থাকবে প্রতিনিধি সম্মেলন এবং তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্যম নৃত্যশীলনের পরিবেশনায় নৃত্যালেখ্য বিদায় অভিশাপ।

বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক এবং সংস্কৃতি বিষয়ে বিশিষ্টজনের লেখা প্রবন্ধের সংকলন ‘সঙ্গীত সংস্কৃতি’।

সম্মেলনের সমাপনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষাবিদ অনুপম সেন। এছাড়া রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণী সম্মাননা জানানো হবে মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম এবং শিক্ষাবিদ সঙ্গীতজ্ঞ অধ্যাপক আ ব ম নুরুল আনোয়ারকে।