মঞ্চ, টেলিভিশনের দাপুটে এই অভিনেতা মারা যান ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর।
Published : 24 Nov 2023, 10:07 PM
নাচ, গান, আবৃত্তি ও বক্তৃতার মধ্য দিয়ে অভিনেতা আলী যাকেরকে স্মরণ করল নাট্য সংগঠন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মহিলা সমিতি মিলনায়তনে এই আয়োজন করা হয়।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় আজকে যে টিকেটের বিনিময়ে নিয়মিত নাট্যচর্চা হয়, তার শুরুটা করেছিলেন আলী যাকের। এখন নিয়মিত টিকেট কেটে দর্শক নাটক দেখছেন।
“সেটা প্রথম যখন শুরু করা হয়, তখন নানা রকম সংশয় ছিল; দর্শক টিকেট কেটে নিয়মিত নাটক দেখতে আসবেন কি না? কিন্তু নাগরিক যখন সেই যাত্রা শুরু করল, তা পরে নিয়মিত একটি ধারা হয়ে উঠলো। আলী যাকের এই যাত্রার পথিকৃৎ।"
ভারতীয় নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী এই আয়োজনে স্মারক বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “যাকে ঘিরে আজকে এই আয়োজন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমার শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। আগামী বছর আমিও আর বাংলাদেশে আসতে পারব কি না, জানি না।"
স্মারক বক্তৃতার পর আলী যাকেরের বর্ণিল জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
পরে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় পরিবেশন করে আলী যাকেরের লেখা ‘সেই অরুণোদয় থেকে' বইয়ের বিশেষ অংশের পাঠ। একই সঙ্গে চলে সাথে গান, নাচ ও আবৃত্তি।
সুইটি দাস ও তার দল ‘কায়াশ্রম' পরিবেশন করে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে' এবং ‘ভয় কি মরণে' গানের সঙ্গে নাচ।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও নিমা রহমান। সঙ্গীত পরিবেশন করেন খাইরুল আনাম শাকিল ও অভয়া দত্ত।
আবৃত্তি পরিবেশনের ফাঁকে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আলী যাকের আমাদের ছটলু ভাই। অনেক দিন আমরা শুটিং সেটে সময় কাটিয়েছি। একবার তিনি আমাকে বলেছিলেন, জীবনানন্দ পড়ুন। জীবনানন্দ তার ভীষণ প্রিয় ছিলেন। ছটলু ভাইয়ের এই শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠানে তার লেখা থেকে পাঠ করতে পেরে আনন্দিত।"
নিমা রহমান বলেন, “ছটলু ভাইয়ের প্রিয় ঋতু বর্ষা।"
পরে নিমা রহমান আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’।
‘সেই অরুণোদয় থেকে' থেকে পাঠ পর্বে অংশ নেন নাসিরুল হক খোকন, পান্থ শাহরিয়ার, ফখরুজ্জামান চৌধুরী, মুস্তাফিজ শাহীন, মাহফুজ রিজভী। সবশেষে ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ নাটকের অংশবিশেষ পাঠ করেন আসাদুজ্জামান নূর।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক সারা যাকেরের বক্তব্যের মধ্য শেষ হয় অনুষ্ঠান।
সারা যাকের বলেন, “নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিটি সদস্য ছিল আলী যাকেরের কাছে খেলার সাথী। আলী যাকের ছিল আমাদের কাছে নূরুলদীন। আলী যাকের ছিল আমাদের নেতা।"
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর মারা যান একুশে পদক পাওয়া অভিনেতা আলী যাকের। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর। মঞ্চ, টেলিভিশনের দাপুটে এই অভিনেতা একাত্তরের একজন শব্দসৈনিক।
১৯৭২ সালে আরণ্যকের ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন আলী যাকের, শুরু হয় মঞ্চে তার পথচলা। সে নাটক দেখে পরে লেখক জিয়া হায়দার ও অভিনেতা নির্দেশক আতাউর রহমান তাকে নিয়ে যান তাদের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে। মৃত্যু পর্যন্ত আলী যাকের ওই নাট্যদলের সভাপতি ছিলেন।
মঞ্চে নূরলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর চরিত্রে আলী যাকেরের অভিনয় এখনও দর্শক মনে রেখেছে। ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি পাথর’, ‘আজ রবিবার’এর মত টিভি নাটকে অভিনয় করেও তিনি প্রশংসা পেয়েছেন।
‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আলী যাকের। বেতারে অর্ধশতাধিক শ্রুতি নাটকেও কাজ করেছেন।
অভিনয়, নির্দেশনার বাইরে তিনি ছিলেন একজন নাট্যসংগঠক; পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন লেখালেখির সঙ্গে। নাটকে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
দীর্ঘ কর্মজীবনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন আলী যাকের।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকের যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটিরও সদস্য ছিলেন।