আট দিনের এ উৎসবে প্রতিদিন বিকালে থাকছে নানা আয়োজন।
Published : 10 Dec 2022, 12:37 AM
ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শুক্রবার পর্দা উঠল বিজয় উৎসবের, যা চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এ উৎসবের অনুষ্ঠানমালা পরিবেশিত হবে জাদুঘর মিলনায়তন ও মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রাঙ্গণে।
এতে বিশিষ্টজনদের আলোচনা পর্বের পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি, বাউল গান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও নাটক মঞ্চায়ন করা হবে।
উৎসবের প্রথম দিন শুক্রবার বিকালে আলোচনা অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালের গণহত্যা স্মৃতি সংরক্ষণ প্রচেষ্টার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে সাধুবাদ জানান ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর মেমোরিয়াল মিউজিয়ামস ইন রিমেম্বারেন্স অব দ্য ভিকটিম অব পাবলিক ক্রাইমসের (আইসিএমইএমও) সাবেক চেয়ারপার্সন ওফেলিয়া লিয়ঁ।
গণহত্যা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জাদুঘরের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, "জাদুঘর একটি দেশের ইতিহাসের ধারক ও সমাজ পরিবর্তনের মোক্ষমপন্থা। ভাষা যেকোনো দেশের আত্মপরিচয়ের মূল প্রতীক, যা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যার সংগঠনের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।
“গণহত্যা স্মৃতি জাদুঘরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার জাদুঘর স্থাপন করাও প্রয়োজন।”
একাত্তরে সংঘটিত গহণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে ওফেলিয়া লিয়ঁ বলেন, "গণহত্যার স্মৃতি বা সাক্ষ্য সংরক্ষণ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশকেও গণহত্যা স্মৃতিসমূহ সংরক্ষণ করে সেগুলোকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।"
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে লিয়ঁ বলেন, “আসুন আমরা হত্যা বন্ধ করি, আমরা সবাই বৈচিত্র্যকে সঙ্গে নিয়ে এক প্রাণ, এক পৃথিবী নির্মাণ করি। আসুন আমরা পশুর ন্যায় আচরণ করা বন্ধ করি।"
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “একাত্তরে আমরা গণহত্যা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা এসব ঘটনার সাক্ষী।
“আমি যে শহরে বেড়ে উঠেছি, সেই শহরের পাশেই সৈয়দপুর। সেখানে বাঙালিদের পাশাপাশি অবাঙালিদের বাস ছিল। সেখানে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল, সেটি ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব হবে না।”
জাদুঘরের আরেক ট্রাস্টি গবেষক মফিদুল হক বলেন, “স্মৃতি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে আমাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এখানে নতুন প্রজন্মের অনেকেই আছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল, পঁচাত্তের পর সেই ইতিহাসকে বিকৃত করার নানা রকম চেষ্টা হয়েছে৷ তবে সেই ইতিহাসকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।”
আলোচনা পর্বের পর মঞ্চস্থ হয় নাটক 'নিমজ্জন'। সেলিম আল দীনের রচনায় ঢাকা থিয়েটার প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণহত্যাকে উপজীব্য করে তার বিরুদ্ধে মানবতার কথা বলা হয়েছে এতে।
শিমূল ইউসুফের সুর ও সঙ্গীতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ে অংশ নেওয়াদের মধ্যে আছেন মিলু চৌধুরী, আসাদুজ্জামান আমান, সিমরাজুল ইসলাম, মোস্তফা রতন, তরিকুল ইসলাম লিটনস, রনি হোসাইন, সাজ্জাদ রহমান, জয়শ্রী মজুমদার লতা, ফাহমিদা কামাল রিপা, হাবিবা আজিজ।
শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল ৪টায়। অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসের সভাপতিত্বে ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ধারণা একটি মিথ’ শীর্ষক প্রীতি বিতর্কে অংশগ্রহণ করবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) বনাম ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বিতর্কের পর নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যদল ‘স্পন্দন’ এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করবে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ।
১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল চারটায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সকাল ১০টায় পরিবেশিত হবে শিশু-কিশোর আনন্দানুষ্ঠান। সন্ধ্যায় থাকবে বাউল গান।
এছাড়া ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকালে জলাদ্দখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে থাকবে পৃথক অনুষ্ঠানমালা।