মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক হিন্দি সিনেমা ‘পিপ্পা’র জন্য গানটিতে নতুন কম্পোজিশন করেন অস্কারজয়ী এ সুরকার।
Published : 19 Nov 2023, 06:04 PM
কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এর সুর বদলে ‘পিপ্পা' সিনেমায় যে গান ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সব ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অপসারণে সরকারকে উকিল নোটিস দেওয়া হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে এ নোটিস পাঠানো হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার, সোলায়মান তুষার, মাহদি জামান, শেখ মঈসুল করিম, আহমেদ ফারজাদ, শহিদুল ইসলাম, শাহেদ সিদ্দিকী, আনাস মিয়া ও বাহাউদ্দিন আল ইমরানের পক্ষে রোববার এ নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসে স্বাক্ষর করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ কাওসার।
নোটিস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেইসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমসহ সব ধরনের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ওয়েবসাইট থেকে এ আর রহমানের সুরে প্রকাশিত ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি অপসারণ করতে বলা হয়েছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অনুপ্রেরণা জোগানো শতবর্ষীগান ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ নিয়ে এ বিতর্কের সূচনা সোশাল মিডিয়ায় পিপ্পার গানটি প্রকাশের পর থেকে।
রাজাকৃষ্ণ মেনন পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক হিন্দি সিনেমা ‘পিপ্পা’র জন্য নজরুলের ঐ গানটির নতুন কম্পোজিশন করেন অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।
কিন্তু শ্রোতাদের অনেকের অভিযোগ, এ আর রহমানের হাতে পড়ে গানটি থেকে বিদ্রোহই হারিয়ে গেছে। সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মহলের মানুষেরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, সমালোচনায় সরব হয়েছেন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। কবি পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি।
কাজী নজরুলেন নাতি নাতনিরা গানটির সুর বদলকে ‘গর্হিত অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গানটি বিকৃত করার অভিযোগ এনেছেন তারা; এ আর রহমানকে ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার পাঠানো উকিল নোটিসে বলা হয়েছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের কথা এ আর রহমান ঠিক রাখলেও সুর পরিবর্তন করেছেন। এ গান নজরুলের নিজের সুরারোপিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত।
“আমাদের সব বিপ্লব-বিদ্রোহ তথা আন্দোলন–সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’।”
নোটিসে এও বলা হয়েছে, জাতীয় কবির এ গানটি শত বছরের এক অবিনাশী অমর গান। সময়ের প্রয়োজনে লেখা হলেও গানটির লোকপ্রিয়তায় সামান্য ঘাটতি হয়নি। ব্রিটিশবিরোধী মানসে লেখা গানটি সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার, ফলে এখনও সমানভাবে এটি প্রাসঙ্গিক। একই গান একটি কাজী নজরুলের সুরে, আরেকটি বিকৃত সুরে থাকলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে।
নোটিস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ আর রহমানের সুর করা গানটি অপসারণ করা না হলে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে রিট মামলা করে নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯২১ সালে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি লিখেছিলেন নজরুল, যা পরের বছরের ২০ জুন ‘ভাঙার গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় ‘বাঙ্গলার কথা’ পত্রিকায়।
ওই পত্রিকার সম্পাদক ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশ যখন কারারুদ্ধ হন, তখন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে বাংলার মানুষকে নিয়ে কবিতা হিসেবে সেটি লিখেছিলেন জাতীয় কবি। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে গিরীন চক্রবর্তীর কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল।