চালু হলো স্টার সিনেপ্লেক্স, ৪ বছর পর বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে পাচ্ছেন রাজশাহীবাসী।
Published : 13 Jan 2023, 11:28 PM
“রাজশাহী বসে পরিবারের সঙ্গে থ্রিডি সিনেমা দেখতে পাব এটা কখনও ভাবিনি। আমার দুই সন্তান এই প্রযুক্তিতে সিনেমা দেখতে খুবই পছন্দ করেছে। এখন সুযোগ পেলেই সিনেমা দেখতে আসব।”
নিজ নগরীর সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পর সেখানেই সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার অনুভূতি জানাচ্ছিলেন রাজশাহীর উপকণ্ঠ কাটাখালী এলাকার কলেজ শিক্ষক সাইফুল ইসলাম।
দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি শুক্রবার রাজশাহীর বুলনপাড়া আইবাঁধ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে সিনেমা দেখতে এসেছিলেন। এ দিন সেখানে স্টার সিনেপ্লেক্সের ১৯তম স্ক্রিন উদ্বোধন শেষে 'অ্যাভাটার-২' সিনেমার থ্রিডি সংস্করণ এবং 'চিরঞ্জীব মুজিব' এর টুডি সংস্করণ দেখানো হয়।
এ প্রদর্শন কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা জানতে চাইতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানফিশা রহমান বললেন, "জেমস ক্যামেরন অ্যাভাটার ডুওলজি বানিয়েছেন থ্রিডি প্রযুক্তির কথা মাথায় রেখে। সিনেমার প্রথম পার্ট দেখেছিলাম ডিভিডিতে।
“দ্বিতীয় পার্ট যে থ্রিডিতে দেখতে পারব ভাবনায় ছিল না। এত্ত জীবন্ত লেগেছে, মনে হচ্ছে চোখে লেগে আছে! এ এক অন্য অভিজ্ঞতা।"
রাজশাহী নগর ও উপকণ্ঠে সাতটি সিনেমা হল ছিল। আশির দশক থেকে চলতি শতব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত ভালোই চলছিল এসব সিনেমা হল। তবে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০১০ সালের পর জেলায় একে একে বন্ধ হতে থাকে এসব সিনেমা হল।
সবশেষ ২০১৮ সালে বন্ধ হয় উপহার সিনেমা হলটি। একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হওয়ায় একেবারেই হলশূন্য হয়ে পড়ে শহরটি। সেই শূন্যতা কাটিয়ে আবারও হলমুখী হবেন রাজশাহী জেলার সিনেমাপ্রেমী মানুষেরা-এমনটাই আশা সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাদেশে ১০০টি সিনেপ্লেক্স (স্ক্রিন) নির্মাণের স্বপ্নের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল।
"বর্তমানে আমাদের ১৯টি সিনেপ্লেক্স আছে। এখন সিনেমা মুক্তির এক মাসের মধ্যে প্রযোজকের লগ্নিকৃত অর্থ ফিরে আসা সম্ভব। আমাদের স্বপ্ন- দেশে ১০০টি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা। তাহলে মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যে সিনেমার নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে। এভাবেই চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমার বিশ্বাস।“
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, "হাইটেক পার্কে স্বাভাবিকভাবেই প্রযুক্তি সংক্রান্ত কাজকর্ম চলবে। তবে তার ফাঁকে বিনোদনও প্রয়োজন। সেটার দ্বার খুলে দিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স।
"যখনই সিনেমা হল বাড়ে, আমার ভালো লাগে। তাই আমাকে পলক (আইসিটি প্রতিমন্ত্রী) এখানে আসার ব্যাপারে যখন বলেন, সঙ্গে সঙ্গে আমি রাজি হয়ে যাই। তবে পলকের কাছে আমার আরেকটি দাবি, এখানে যেন অন্তত আরও একটি হল করে দেওয়া হয়। তাহলে পূর্ণতা পাবে।"
সিনেমার গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, "সিনেমা শুধু বিনোদন দেয় না, এটি মানুষের তৃতীয় চোখ খুলে দেয়। সমাজের আড়ালে থাকা বিষয়গুলো উন্মোচন করে, দায়িত্বশীলদের আরও দায়িত্ববান করে তোলে। সিনেমা সমসাময়িক কালকে সংরক্ষণ করে।"
স্মার্ট, উদার ও প্রগতিশীল প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য সাংস্কৃতিক বিপ্লব প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মুক্তি এবং স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু, অর্থনীতির দিশা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; আর এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের।
"তার জন্য আমাদের প্রজন্মের কাছে সুস্থ বিনোদন পৌঁছে দিতে হবে। তাই রাজশাহীবাসী ও এখানকার তরুণদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই আধুনিক সিনেমা থিয়েটার।"
সিনেমায় এখন ‘সুবাতাস বইছে’ মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, "এর পেছনে স্টার সিনেপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তারা দেশের দর্শকদের বিশ্বমানের প্রযুক্তিতে সিনেমা দেখিয়ে আসছে। আশা করি, তাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।"
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেনসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’। বর্তমানে এর ঢাকায় ৫টি ও চট্টগ্রামে ১টি শাখা রয়েছে। এছাড়া ঢাকার উত্তরা এবং বগুড়ায় নতুন শাখার নির্মাণকাজ চলছে।