'আলী যাকের নতুনের উৎসব' শুরু, সম্মাননা পেলেন ৪ গুণী

মামুনুর রশীদ, সৈয়দ জামিল আহমেদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও মাসুদ আলী খান সম্মাননা পেয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2023, 07:00 PM
Updated : 21 Jan 2023, 07:00 PM

নতুন পাঁচটি নাটক নিয়ে আবার শুরু হল ‘আলী যাকের নতুনের উৎসব ২০২৩’।

শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ আয়োজন উদ্বোধন করেন অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার।

নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় ও মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ উৎসব আয়োজন করেছে। সাতটি নতুন নাটক নিয়ে ২০১৯ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় প্রথমবার আয়োজন করেছিল ‘নতুনের উৎসব’।

কোভিড মহামারীর কারণে পরে আর এ উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

২০২০ সালের নভেম্বরে নাগরিকের সভাপতি আলী যাকের মারা যাওয়ার পর আয়োজনটি নাম পায় ‘আলী যাকের নতুনের উৎসব’।

দ্বিতীয়বারের মত শুরু হওয়া উৎসবে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, "আমার অভিনয় জীবনে সব সময় উৎসাহ দিতেন আলী যাকের। তাকে নিয়ে নাগরিকের এই আয়োজনের প্রশংসা করছি। আলী যাকেরকে নিয়ে বলব- রয়েছ অন্তরে অন্তরে।

"ম্যাকবেথ ও টেম্পেস্ট নাটক যাকেরের সাথে আমি অভিনয় করেছি। অভিনয় করার সময় মহড়ায় যাকের খুব ভয় পেত, বলত 'ভুলে যাব না তো'। কিন্তু যাকের শো করতে গিয়ে ভুলে যায়নি।"

উৎসবের আহ্বায়ক সারা যাকের বলেন, “প্রতি দুই বছর অন্তর নভেম্বরে 'আলী যাকের নতুনের উৎসব' আয়োজন করা হবে। উৎসবটি সকল নাট্যকর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে।

"…আলী যাকের অসুস্থ থাকার সময় 'গ্যালিলিও' নাটকে আবার অভিনয় করার ইচ্ছার কথা বলত। মৃত্যুর আগে সেই নাটকে অভিনয়ও করেছিল। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্যদের সবার সহযোগিতায় সেটি করা সম্ভব হয়েছিল।"

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, "আলী যাকেরের অভিনয় দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তার মত একজন গুণী মানুষকে স্মরণ করে এই আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাই এই উৎসবের জন্য।"

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, "১৯৭৩ সালে দর্শনীর বিনিময়ে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় প্রথম নাটকের মঞ্চায়ন শুরু করলেও আমাদের যাত্রাটা নিঃসঙ্গ ছিল না। একই সময়ে বা আগে পরে আরও কিছু নাট্যদল পাশাপাশি পথ হেঁটেছি। সবাই মিলে একটা ভিত গড়তে পেরেছি নাটকের।"

উৎসবে প্রথমবারের মত দেওয়া হয় চার গুণীর নামাঙ্কিত সম্মাননা।

এ বছর সৈয়দ শামসুল হক নামাঙ্কিত সম্মাননা পেয়েছেন নাট্যকার ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ; জিয়া হায়দার নামাঙ্কিত সম্মাননা পেয়েছেন নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদ; আলী যাকের নামাঙ্কিত সম্মাননা পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং খালেদ খান নামাঙ্কিত সম্মাননা পেয়েছেন অভিনয় শিল্পী মাসুদ আলী খান।

সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা যখন নব উদ্যমে নাট্যচর্চা শুরু করি। তখন আলী যাকের আমাদের সাথে যুক্ত হন। আরণ্যকের কবর নাটকে অভিনয় করেছিলেন। সেটা ভীষণ আনন্দের স্মৃতি।"

স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় কখনও কাজ করেননি জানিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, " এই স্বীকৃতি বা পুরস্কারের আত্মতৃপ্তিতে যেন আটকে না যাই। কাজের মধ্যেই থাকতে চাই। আমি খুব করে চাই, মঞ্চ বা মঞ্চের আশেপাশেই যেন মরতে পারি। হাসপাতালে যেন না যাওয়া লাগে। হাসপাতাল ব্যাপারটাই খুব ভয় লাগে।"

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, "আমাকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করার খবরটি যখন সারা যাকের ফোন করে জানায়, আমি বলেছিলাম স্বজনপ্রীতি হচ্ছে। পরে আসাদুজ্জামান নূর ভাই ফোন করলেও একই কথা বলি। তখন নূর ভাই বলেন, সবার সিদ্ধান্তেই তোকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আলী যাকের নামাঙ্কিত এই পুরস্কার আমার জন্য গৌরবের।"

মাসুদ আলী খান বলেন, "এখন শরীর ভালো নেই। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করি। অভিনয় করতে পারি না। কিন্তু মন থেকে এটাই চাই, যতদিন বাঁচি যেন নাটক দেখতে পারি।"

আগামী ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলা এ উৎসবের জন্য নির্বাচিত পাঁচটি নাটকের প্রতিটিকে  প্রণোদনা হিসেবে ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হয় মাস ছয়েক আগে।

নাটক নির্বাচনে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের পাশাপাশি জুরিবোর্ডে ছিলেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম, মাসুম রেজা ও সুদীপ চক্রবর্তী। 

উৎসবে রোববার সন্ধ্যায় হৃৎমঞ্চ মঞ্চস্থ করবে শুভাশিস সিনহা নির্দেশিত নাটক ‘রিমান্ড’।

এছাড়া বাকি চার দিন মঞ্চস্থ হবে অলোক বসু নির্দেশিত ‘দ্য রেসপেক্টফুল প্রস্টিটিউট’, মোহাম্মদ আলী হায়দার নির্দেশিত ‘সখী রঙ্গমালা’, বাকার বকুল নির্দেশিত ‘আদম সুরত’ এবং আজাদ আবুল কালাম নির্দেশিত ‘অচলায়তন’।