নাটকটিতে অংশ নেয় বান্দরবান শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুমি শিক্ষার্থীরা।
Published : 11 Nov 2022, 10:06 PM
বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে মঞ্চস্থ হলো খুমি ভাষার নাটক ‘মোমাহ্ তা-কোছি’, যার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত এই নৃগোষ্ঠীর নাটক মঞ্চে উঠল।
শুক্রবার সকালে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের লংথাং খুমি পাড়ায় নাটকটি দেখানো হয়।
বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের (কেএসআই) আয়োজনে নাটকটিতে জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুমি শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। তারাই এ নাটকের সংলাপ লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন।
দুর্গম পাহাড়ে বৈরী পরিবেশে খুমিরা কিভাবে বসবাস করে তা যেমন উঠে এসেছে নাটকটিতে, সেই সঙ্গে চর্চার অভাবে যে নিজেদের বিভিন্ন প্রথা ও ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে তাও তুলে ধরা হয়।
বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক শিশু এখনও বিদ্যালয়ের আওতার বাইরে। জুমচাষ নির্ভর পরিবারের শিশুদের এখন থেকে বিদ্যালয়মুখী করা এবং পাড়ার যুব সমাজকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার বিষয়ে সচেতনতার প্রচেষ্টা ছিল নাটকে।
বান্দরবানে ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে খুমিদের সংখ্যা সবচেয়ে কম। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় তাদের মোট জনসংখ্যা ৩ হাজার ৩৬৯ জন। তবে তাদের সামাজিক সংগঠন খুমি সোস্যাল কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, দেশে খুমিদের সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের কাছকাছি।
নাটক শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিটের পরিচালক মংনুচি মারমা বলেন, “পাহাড়ে কয়েকটি জনগোষ্ঠীর ভাষায় নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু খুমি ভাষায় এটাই প্রথম নাটক।
“তার আগে খুমি ভাষায় কোথাও নাটক মঞ্চায়ন করা হয়নি। তাদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরতে দুর্গম এলাকায় এসে মঞ্চায়ন করানো হচ্ছে।”
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে খুমি ও ম্রোদের অনেক মিল রয়েছে উল্লেখ করে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য সিং ইয়ং ম্রো বলেন, “খুমিদের অনেক লোককাহিনি বেশ সমৃদ্ধ। সেগুলো সংরক্ষণ করে বই আকারে প্রকাশ করা প্রয়োজন রয়েছে। এসব ব্যাপার জেলা পরিষদের সাবির্ক সহযোগিতা দেওয়া হবে।”
জেলা পরিষদের সদস্য ও খুমি সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সিঅং খুমি বলেন, “শিক্ষায় অনগ্ররসতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে খুমিরা। তবে আগের তুলনা খুমি ছেলেমেয়েরা এখন বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে।”
লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্ব দিতে এ ধরনের উদ্যোগ জারি রাখার আহ্বান জানান তিনি।