প্রাক্তন স্বামী ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ তারকা জনি ডেপের সঙ্গে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে হারের ছয় মাস পর অবশেষে আপস রফার হাঁটছেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড।
রয়টার্স জানিয়েছে, ‘অ্যাকুয়াম্যান’ খ্যাত এই অভিনেত্রী ইনস্টগ্রামে এক পোস্টে তার বিরুদ্ধে জনি ডেপের করা মানহানির মামলায় আপস নিষ্পত্তির কথা বলেছেন। ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও’ অনেক চিন্তা-ভাবনার পর এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হার্ড।
ভক্তদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে ২০১৫ সালে ঘর বেঁধেছিলেন জনি ডেপ ও অ্যাম্বার হার্ড, কিন্তু দুই বছরের মধ্যে ঘটে তাদের বিচ্ছেদ।
এরপর ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবিন্ধে নিজেকে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হিসেবে তুলে ধরেন হার্ড। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির মামলা করেন ডেপ। তার পাল্টায় ১০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাল্টা মামলা করেন হার্ড।
গত ২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, পরস্পরের মানহানি করেছেন দুই অভিনেতাই। সেজন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ডেপকে এক কোটি তিন লাখ ডলার দেবেন হার্ড। আর ক্ষতিপূরণ হিসেবে হার্ড পাবেন ২০ লাখ ডলার।
ওই রায়ের ছয় মাস পর ইনস্টাগ্রামে হার্ড লিখেছেন, অনেক চিন্তা-ভাবনার পর তিনি আপস নিষ্পত্তির এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“বলা দরকার, এই পথে আমি আসতে চাইনি। আমি আমার সত্য রক্ষা করেছি, আর এটা করতে গিয়েই আমার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। “
মামলায় হারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “অবশেষে নিজেকে কোনোকিছু থেকে দূরে থাকার একটি সুযোগ এসেছে, ছয় বছর আগে যে চেষ্টা করেছিলাম।”
ডেপের মামলা পরিচালনাকারী সহ-প্রধান আইনজীবী বেন চিউ এবং ক্যামিল ভাসকুয়েজ জানান, আপস রফা অনুযায়ী, হার্ড ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ ডলার ডেপকে দেবেন। এর মধ্য দিয়ে মামলাটির অবসান ঘটবে। ডেপ ওই অর্থ দান করে দেবেন।
“ডেপের পীড়াদায়ক এই অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটাতে পেরে আমরা খুশি। ডেপ যে ‘সত্যকে’ তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সেটি তার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন।”
হার্ড ইনস্টাগ্রামে আপসের যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, সে ব্যাপারে হার্ড বা তার কোনো প্রতিনিধির মন্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স।
জনি ডেপের মানহানির ওই মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি আদালতে বিচার শুরু হলে দুজনের দাম্পত্যের এমন অনেক বিষয় প্রকাশ্যে আসে, যা বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মধ্যে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়।
লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে এ মামলার বিচার কাজ সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছে কোটি কোটি মানুষ। শেষ পর্যন্ত জুরিরা সিদ্ধান্ত দেন, ডেপের সঙ্গে দাম্পত্যের দিনগুলো নিয়ে হার্ড এমন কিছু অভিযোগ এনেছেন যা ‘মিথ্যা’ এবং সাবেক স্বামীর ‘সম্মানহানি’ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।
পাশাপাশি জুরিরা এও বলেন, ডেপের আইনজীবী ২০২০ সালে যখন ডেইলি মেইলকে বলেছিলেন, হার্ডের আনা অভিযোগগুলো ‘ভুয়া’, তাতে এই অভিনেত্রীরও মানহানি করা হয়েছে।
রায়ের পর এক বিবৃতিতে ডেপ বলেন, “জুরিরা আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি সত্যিই আপ্লুত।”সেই সঙ্গে লাতিন ভাষায় তিনি যোগ করেন, “সত্য কখনও ধ্বংস হয় না।”
বিবৃতিতে এ তারকা বলেছিলেন, “আশা করি, অন্য নারী-পুরুষ বা আমার পরিস্থিতিতে যারা পড়েছেন, এই নজির তাদের সাহায্য করবে।”
ডেপের সাবেক স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ড রায়ের পর বলেছিলেন, নির্যাতনের পক্ষে তার তুলে ধরা প্রমাণ জুরিদের কাছে ‘উপেক্ষিত থেকেছে’।
এক বিবৃতিতে হার্ড সে সময় বলেন, “এই মামলা হেরে আমি দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু তারচেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছি অধিকার হারিয়েছি বলে। ভেবেছিলাম, একজন আমেরিকান হিসাবে আমার স্বাধীন এবং খোলামেলাভাবে কথা বলার অধিকার রয়েছে।”
পুরনো খবর: