অস্কারের মনোনয়ন ঘোষিত হয়েছে, এবার প্রতীক্ষার পালা। ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ পর্যন্ত চলবে জল্পনা-কল্পনা।
Published : 17 Jan 2015, 02:23 PM
তবে সেরা সিনেমা হিসেবে স্বীকৃত হবে কোনটি? সে বিষয়ে সবারই আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। দশটি সিনেমা মনোনীত করার সুযোগ থাকলেও এ বছর সেরা সিনেমা বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে আটটি সিনেমা। জেনে নেওয়া যাক এই সিনেমাগুলোর বিষয়ে খুঁটিনাটি নানা তথ্য।
পরিচালক: ক্লিন্ট ইস্টউড
অভিনয়: ব্র্যাডলি কুপার, সিয়েনা মিলার
সারসংক্ষেপঃ মার্কিন নেভি সিল ক্রিস কাইলকে (কুপার)ইরাকে অভিযানে পাঠানো হয়। তার নিখুঁত নিশানা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে ওঠে ভয়াবহ এক মারণাস্ত্র। সহযোদ্ধা অনেকেরই প্রাণ বাঁচে শুধুমাত্র কাইলের দক্ষ হাতের নিশানার জন্য। তবে, সেই সঙ্গে অনেক শত্রুও তৈরি হতে থাকে কাইলের।
তথ্য: ইরাকের দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয়েছে মূলত মরক্কোর রাবাতে। সেই সঙ্গে মরক্কান সেনা সদস্যরাও বিভিন্ন দৃশ্যে অতিরিক্ত কলাকুশলী হিসেবে অংশ নেয়।
সমালোচক মন্তব্য: “অনেকটা ওয়েস্টার্ন ধাঁচে নির্মিত দারুণ এক যুদ্ধের সিনেমা এটি। মরুময় অঞ্চলে নিঃসঙ্গ এক বন্দুকধারী লড়ে যাচ্ছে তার শত্রুদের সঙ্গে- ব্যাপারটা অনেক স্পষ্ট এবং দর্শকদের ওপর দারুণ এক প্রভাব ফেলে। সেই সঙ্গে কাইলের দুর্দশাময় অবস্থাটাও আমরা ধরতে পারি”- এও স্কট (দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস)
পরিচালক: আলেহান্দ্রো গনজালেজ ইনারিতু
অভিনয়: মাইকেল কিটন, এমা স্টোন, এডওয়ার্ড নর্টন, নাওমি ওয়াটস, লিন্ডসে ডানকান, আন্দ্রে রিজবরো
সারসংক্ষেপ: প্রাক্তন সুপারহিরো সিনেমার অভিনেতা রিগান থমসন (কিটন) তার থেমে যাওয়া ক্যারিয়ারটা আবার জাগিয়ে তুলতে চায় মঞ্চে এক অভিনব নাটক প্রদর্শন করে।
তথ্য: কুশলী দৃশ্যায়নের কারণে সিনেমাটি দেখলে মনে হবে পুরো চলচ্চিত্রটি একটি শটেই নেওয়া হয়েছে।
সমালোচক মন্তব্য: “ আধুনিক সময়ের এক পরাবাস্তব প্রতিচ্ছবি এবং বিস্মৃত এক তারকার অহং পরিচালক এত ভালোভাবে তুলে ধরেছেন যে, সিনেমার ধারাবাহিকতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হলেও এটি তাৎপর্য হারায়নি”।– বেটসি শারকি (এলএ টাইমস)
পরিচালক: রিচার্ড লিঙ্কলেটার
অভিনয়: ইথান হক, প্যাট্রিশিয়া আরকেট, ইলার কলট্র্যান, লরলেই লিঙ্কলেটার
সারসংক্ষেপ: ২০০২ থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল - ১২ বছর ধরে বানানো এই সিনেমায় উঠে আসে এক যুগে একটি পরিবারের বিবর্তন। কৈশোর থেকে সাবালকত্বের দিকে ধাবিত হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র মেইসন (কলট্র্যান) এবং তার বোন সামান্থা (লরলেই)।
তথ্য: মেইসনের বড় বোন সামান্থার চরিত্রের জন্য লিঙ্কলেটার বেছে নেন তারই সে সময় নয় বছরের মেয়ে লরলেইকে। তিনি বলেন, “সে সময় সে ছিল খুব প্রাণবন্ত এবং সবার সঙ্গে খোলামেলা। নাচতে আর গাইতে খুব ভালোবাসতো। খুব চাইছিলো এই চরিত্রটি করার জন্য। আমিও মেনে নিয়েছি, কেননা ওর দায়িত্বটাতো আমার উপরেই ছিল।”
সমালোচক মন্তব্য: “বয়হুড শুধু মৌলিক এক সিনেমা নয়, অসাধারণ এবং হৃদয়স্পর্শীতো বটেই, ক্লাসিক এক সিনেমার মর্যাদাও এখনই এটি অর্জন করে নিয়েছে”।– ডেভিড সেক্সটন (লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড)
পরিচালক: ওয়েস অ্যান্ডারসন
অভিনয়: র্যালফ ফিনিয়েস, টনি রেভলরি, বিল মারে, টিলডা সুইনটন, এডওয়ার্ড নর্টন, জুড ল, ওয়েন উইলসন, উইলিয়াম ড্যাফো, অ্যাড্রিয়ান ব্রডি, জেফ গোল্ডবাম, হারভি কিটল, জেইসন শোয়ার্টজম্যান
সারসংক্ষেপ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইউরোপের এক স্বনামধন্য হোটেলের তত্ত্বাবধায়ক গুস্তাভ এইচ (ফিনিয়েস) এবং লবি বয় জিরো মুস্তাফা (রিভলরি) রেঁনেসা যুগের এক তৈলচিত্রকে ঘিরে জড়িয়ে পড়ে এক দারুণ অভিযানে।
তথ্য: বিভিন্ন পর্যায়ের কাহিনীকল্প তুলে ধরার জন্য সিনেমাটি বিভিন্ন অনুপাতে ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে।
সমালোচক মন্তব্য: “এই বুদাপেস্ট হোটেলের জন্য ‘গ্র্যান্ড’ শব্দটাও কম হয়ে যায়। এটা ‘গ্রেট’ বা তার চেয়েও অনেক বড় কিছু”।– রিচার্ড করলিস (টাইম)
পরিচালক: মরটেন টিল্ডাম
অভিনয়: বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, ম্যাথিউ গুড, কিরা নাইটলি, চার্লস ড্যান্স, ররি কিনিয়ার, মার্ক স্ট্রং।
সারসংক্ষেপ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন গণিতবিদ অ্যালান টিউরিং (কাম্বারব্যাচ) এবং তার দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চলে এনিগমা কোডের রহস্যভেদের প্রয়াস, যার ফলে বন্ধ হবে পুরো যুদ্ধ।
তথ্য: সিনেমার শুটিং করা হয়েছে বাকিংহামশায়ারের ব্লেচলি পার্ক এবং টিউরিং এর স্কুল ডোরসেট শারবোনে।
সমালোচক মন্তব্য: “সিনেমাটিই বিভিন্ন কোডে মোড়ানো- মানবিক, সামাজিক, যৌন, জাতিভেদ - সব কিছু মিলিয়ে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে অনবদ্য। এর বড় একটি অবদান অবশ্যই বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ এবং তার অনবদ্য অভিনয়”।– ডেভিড ক্যালহাউন (টাইম আউট)
পরিচালক: এভা দ্যুভারনে
অভিনয়: ডেভিড ওয়েলো, টম উইলকিনসন, কারমেন এজোগো, টিম রথ, অপরাহ উইনফ্রে
সারসংক্ষেপ: ১৯৬৫ সালে মার্টিন লুথার কিং তিন মাস ধরে চলা এক আন্দোলনে রাষ্ট্রপতি লিন্ডব বি জনসন (উইলকিনসন) এর বিপক্ষে অবস্থান নেন, এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকারের জন্য সেলমা থেকে মন্টেগোমারি, অ্যালাবামার জন্য যাত্রা করেন।
ফ্যাক্ট: অ্যালাবামাতে ১৯৬৫ সালে যেখানে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, ঠিক সেভাবেই সে জায়গাগুলোতে সিনেমার দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয়।
সমালোচক মন্তব্য: “১৯৬০ এর সময়ের মার্কিন সম-অধিকার আন্দোলন নিয়ে হলিউডের সিনেমা, এ বছরের একমাত্র সময়োপযোগী সিনেমাও বটে”।– লু লুমেনিক (নিউ ইয়র্ক পোস্ট)
পরিচালক: জেইমস মার্শ
অভিনয়: এডি রেডমেইন, ফেলিসিটি জোন্স, চার্লি কক্স, এমিলি ওয়াটসন, ডেভিড থেউলিস
সারসংক্ষেপ: ১৯৬৯ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমলজির ছাত্র স্টিফেন হকিং প্রেমে পড়েন কলা বিভাগে পড়ুয়া জেইন ওয়াইল্ডের। কিন্তু হঠাৎই সব ওলটপালট হয়ে যায়। দুরারোগ্য মোটর নিউরন ডিসিজে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ফ্যাক্ট: স্টিফেন হকিং এর অনুমতি নিয়ে বিকল্প কণ্ঠ বাদ দিয়ে কম্পিউটারে তার নিজের কণ্ঠস্বরই ব্যবহার করা হয়েছে এই সিনেমায়।
সমালোচক মন্তব্য: “সিনেমার নাম যাই হোক না কেন, সিনেমার গল্প অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জট ছাড়ানোর চাইতে সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে মানব কাঠামোর কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়েই আলোচনা করে”।– কেট মুইর (দ্য টাইমস)
পরিচালক: ডেমিয়েন ক্যাজেল
অভিনয়: মাইলস টেলার, জে.কে সিমন্স, মেলিসা বেনইস্ট
সারসংক্ষেপ: তরুণ জ্যাজ ড্রামার অ্যান্ড্রু নিমানের স্বপ্ন কিংবদন্তী জ্যাজ ড্রামার বাডি রিচ এর মত হবার। নিউ ইয়র্ক মিউজিক কনসার্ভেটরির ব্যান্ডে সে যোগদান করে, যেখানে তাদের মূল প্রশিক্ষক হলেন টেরেন্স ফ্লেচার, যিনি ছাত্রদের মধ্য থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য ব্যবহার করেন ভয়াবহ কিছু পদ্ধতির।
ফ্যাক্ট: সিনেমার চরিত্রের মত, মাইলস টেলার ততক্ষনই ড্রামস বাজিয়েছেন যতক্ষণ না তার হাত রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।
সমালোচক মন্তব্য: “উইপল্যাশ সিনেমাটি পছন্দ করার জন্য আপনাকে জ্যাজ ভক্ত হতে হবে না। পর্দায় ছাত্র-শিক্ষকের দ্বন্দ্ব আপনাকে ধরে রাখবে পুরোটা সময়জুড়েই। সেই সঙ্গে অসাধারণ কিছু সংগীত তো আছেই”।– ক্রিস ন্যাশওয়াটি (এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি)