সেই সঙ্গে জায়েদ খানের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি করা না হয়, আদালত তা নিশ্চিত করতে বলেছে।
জায়েদ খানের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
আপিল বোর্ড, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জায়েদ খানের আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি সাংবাদিকদের বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান জয়ী হলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ আক্তারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের আপিল বোর্ডকে ২ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি দিয়েছিল সমাজসেবা অধিদপ্তর, তাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল।
“জায়েদ খান যে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচতি হল, সেখানে আপিল বোর্ড তার প্রার্থিতা বাতিল করে দিল। তা করে নিপুণ আক্তারকে হাত তুলে জয়ী করে দিল। সে কারণে আমরা আদালতে আসি।
“আদালত এ বিষয়ে রুল দিয়েছে এবং আপিল বোর্ডর সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত করেছে। এছাড়া জায়েদ খানকে যথারীতি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাধাহীনভাবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দিয়েছে আদালত।”
এই আদেশের মাধ্যমে ‘ন্যায়বিচার’ পেয়েছেন মন্তব্য করে জায়েদ খান সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত আমার ন্যায়সঙ্গত অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, এই জন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাই। আমি সুষ্ঠু সুন্দর একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করেছি। নিপুণ যত অভিযোগ করেছিলেন, সবগুলো তার মনগড়া।”
আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আহসানুল করিম, নাহিদ সুলতানা যুথি।
অন্যদিকে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
নিপুণের অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, হাই কোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে যাবেন।
গত ২৮ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের পরদিন ঘোষিত ফলে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চনকে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলে দেখা যায়, জায়েদ খান হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ১৩ ভোটে হারিয়েছেন নিপুণকে।
নির্বাচনের সময়ই টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেছিলেন নিপুণ। তাতে সাড়া না পেয়ে তিনি আপিল করেন।
তার আপিলে ভোট পুনর্গণনা হলেও তাতে ফল একই থাকলে নিপুণ সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনঃভোটের দাবি তোলেন।
সেখানে তিনি অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকিও দেন।
পরে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করেন তিনি।
তার আবেদনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে করণীয় জানতে আবেদন করেছিলেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান।
মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে আপিল বোর্ডকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলে শনিবার দুই পক্ষকে নিয়ে বসার উদ্যোগ নেন সোহান।
তবে বৈঠকে যাবেন না বলে আগেই জানিয়ে দেন গত দুই বারের সম্পাদক জায়েদ খান; তিনি বলেন, “২৯ জানুয়ারির পর থেকে আপিল বোর্ড বিলুপ্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।”
শেষ পর্যন্ত আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিজয়ী জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের পর নিপুণ আক্তারকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় শনিবার।
রোববার সন্ধ্যায় ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণসহ তাদের প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থীরা শপথ গ্রহণ করে দায়িত্বও বুঝে নেন। তবে মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেলের বিজয়ীরা শপথ নিতে যাননি।
পুরনো খবর