২০১৮ সালের ২ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এফডিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্থের এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পের আওতায় এফডিসিতে সিনেমা হল, শুটিং ফ্লোর, সুইমিংপুল, আবাসিক হোটেল, স্টুডিওসহ বিভিন্ন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১৫তলা ভবন নির্মাণকাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দুই বছরে নকশায় আটকে আছে প্রকল্পের কাজ।
তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের দুইটি নকশার মধ্যে একটির চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় এখনও দরপত্রও আহ্বান করতে পারেননি প্রকল্প পরিচালক।
২০২০ সালের অগাস্ট পর্যন্ত দুই বছরে ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা; যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ০.৪৭% বলে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা আইএমইডির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
২১ সেপ্টেম্বর এফডিসির প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আইএমইডির পরিচালক মুহাম্মদ কামাল হোসেন তালুকদার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আড়াই বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি খুবই স্লো। এতো কোটি টাকার সরকারি একটি প্রকল্পের অগ্রগতি কেন এতো কম, সে হিসেবে আমরা ভিজিট করে যে রিপোর্ট পেয়েছি সেটাই পাঠিয়েছি।
“প্রকল্পের অবস্থা ভালো হলে তো আমাদের খারাপ বলার কোনও ইনটেনশন নাই, আবার সেটা বলাও যাবে না।”
যোগ্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রকল্পটি পিছিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে একজন যোগ্য প্রকল্প পরিচালককে পূর্ণকালীন নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গত দুই বছরে মধ্যে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে তিনজন এসেছেন, তাদের মধ্যে দুইজন তিন থেকে চার মাসের ব্যবধানে দায়িত্ব ছেড়েছেন।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ প্রকল্পের প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব নেন আবদুল মতিন; তিন মাসের ব্যবধানে তিনি দায়িত্ব ছাড়লে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) কে. এম আইয়ুব আলীকে ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে বসানো হয়।
চার মাসের ব্যবধানে আইয়ুব আলীকে সরিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরীকে প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার সঙ্গে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন কে.এম আইয়ুব আলী।
প্রকল্পের ধীর গতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি দায়িত্বে আসার আগে এক বছর প্রকল্পের কোনও কাজ হয়নি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। কাজ গুছিয়ে আনার চেষ্টার মধ্যে করোনাভাইরাসের বাগড়ায় কাজের গতি খানিকটা কমেছে।”
তবে নির্ধারিত সময়সীমা ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করা সম্ভবপর নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রকল্প শেষ করতে আরও তিন বছরের মতো লাগতে পারে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করব।”
ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় এফডিসির ৩ ও ৪ নম্বর শুটিং ফ্লোর, এডিটিং ভবন ১ ও ২, টিনশেড নিলামে বিক্রি করে স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হয়েছে। দরপত্রের পর কাজ শুরু করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এ প্রকল্প এলাকা ঢাকায় হলেও এতে গাড়ি ব্যবহারের যৌক্তিকতা নির্ধারণ আবশ্যক মত এসেছে আইএমইডির প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় আইয়ুব আলী বলেন, “যে দুইটি জিপ আমরা ব্যবহার করছি সেগুলোর জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আছে। অনুমতি না পেলে তো আমরা ব্যবহার করতাম না।”
চলচ্চিত্র শিল্পের মন্দার মধ্যে লোকসান ও দেনার দায়ে ধুঁকতে থাকা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনকে ‘স্বাবলম্বী’ করতে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ভবনের শুটিং ফ্লোর, আবাসিক হোটেল, স্টুডিও থেকে আয়কৃত অর্থ এফডিসির কর্মীদের বেতনাদিসহ অন্যান্য খাতের ব্যয় মেটানো হবে; ভবনটি নির্মিত হলে এফডিসির আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে পুরোনো জৌলুশ ফিরবে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাফর আহমেদ)