চলচ্চিত্র-সংগীত কিংবা ছোটপর্দায় যে হতাশার হাওয়া বইছে মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি এখনও। বরং ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’নাট্যকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বাঁচিয়ে রেখেছে সারাদেশের মঞ্চনাটক। চলতিবছর শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়, ঢাকার বাইরেও সরব ছিলো মঞ্চ। বেশকিছু আন্তর্জাতিক উৎসব ও মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বাইরেও মঞ্চায়িত হয়েছে নাটক।
Published : 30 Dec 2017, 07:33 PM
মঞ্চেও যে উপচে পড়া দর্শক হতে পারে, টিকেটের জন্য হাহাকার দেখা যেতে পারে তা দেখিয়েছে সৈয়দ জামিল আহমেদ নির্দেশিত নাটক ‘রিজওয়ান’।
বছরজুড়ে নতুন নাটক
এ বছরে নাগরিক নাট্যাঙ্গন মঞ্চে আনে ‘ক্রীতদাসের হাসি’। এথিক নাট্যদল মঞ্চ আনে ‘চণ্ডীদাস’। দেশ নাটক মঞ্চে আনে ‘সুরগাঁও’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগ ‘বহ্নি বিসর্জন ব-দ্বীপ’। প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল ‘দাঁড়াও পথিকবর জন্ম যদি তব বঙ্গে’। স্বপ্নদল মঞ্চে আনে ‘হেলেন কেলার’, থিয়েটার তোপখানা ‘তৃতীয় পুরুষ’, বুনন থিয়েটার ‘সিক্রেট অব হিস্ট্রি’, থিয়েটারওয়ালা রেপার্টরি ‘জবর আজব ভালবাসা’, মেঠোপথ থিয়েটার ‘অতঃপর মাধো’। এছাড়া নবরূপে দেশ নাটক মঞ্চে আনে ‘নিত্যপুরাণ’, মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় ‘শিবানী সুন্দরী’।
বেঙ্গল থিয়েটার ‘জলপুত্র’। ঢাকা থিয়েটার মঞ্চে আনে ‘আওয়ার কান্ট্রি ইজ গুড’। কাদামাটি ‘প্রেমলীলা’। নাট্যচক্র ‘মৃত্যুক্ষুধা’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ‘হ্যামলেট’। শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র মঞ্চে আনে ‘চম্পাবতী’। বাংলাদেশ থিয়েটার ‘আমি’। সময় নাট্যদল মঞ্চে আনে ‘যযাতি’। নাটবাঙলা মঞ্চে আনে ‘রিজওয়ান’। যশোরের বিবর্তন নাট্যদল মঞ্চে আনে ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’। মৌলিক নাট্যদল ‘সুবচন নির্বাসনে’। পদাতিক নাট্য সংসদ ‘গুনজান বিবির পালা’। বটতলা মঞ্চে আনে ‘বন্যথেরিয়াম’।
মহিলা সমিতি মঞ্চের জেগে ওঠা
মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনের মঞ্চটিতেই স্বাধীনতার পর প্রথম টিকেটের বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু হয়। শিল্পকলা একাডেমিতে অত্যাধুনিক জাতীয় নাট্যশালা ভবন হওয়ার পর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিলো মহিলা সমিতির মঞ্চটি। চলতিবছর মহিলা সমিতির নতুন ভবনে ফের জমে ওঠে নবনির্মিত মঞ্চটি। বেশ কিছু নাট্যদল সেখানে নিয়মিত নাটকের প্রদর্শনী করেছে। দর্শকেরও ভালো সাড়া মিলছে।
জেলা শহরে বেড়েছে নাট্যচর্চা
রাজধানী কেন্দ্রিক নাট্যচর্চার বাইরেও সক্রিয় ছিলো জেলা শহরের নাট্যাঙ্গন। চলতি বছর ঢাকার বাইরে মৌলভীবাজারের মণিপুরি থিয়েটার, বরিশালের শব্দাবলি, চট্টগ্রামের তির্যক, নান্দীমুখ, ফেইম, যশোরের বিবর্তন, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, বুনন থিয়েটার, ময়মনসিংহের অন্বেষা নাট্যদলসহ সারা দেশের শতাধিক নাট্যদল বেশ সক্রিয় ছিল নিয়মিত নাট্যচর্চায়।
‘কঞ্জুস’-এর ৭০০তম প্রদর্শনী
বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মঞ্চায়িত নাটক ‘কঞ্জুস’। এর আগে বাংলাদেশের কোনো মঞ্চনাটক ৭০০তম প্রদর্শনীর মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেনি। ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের দ্য মাইজার অবলম্বনে নাটকটি অনুবাদ করেছেন তারিক আনাম খান। নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। এ বছরের ১৫ ডিসেম্বর লোক নাট্যদলের ‘কঞ্জুস’ নাটকটির ৭০০তম প্রদর্শনী হয়।
আলোচিত নাটক ‘রিজওয়ান’
বছরের সবচেয়ে আলোচিত নাটক ছিলো রিজওয়ান। ‘নাটবাঙলা’ প্রযোজিত ‘রিজওয়ান’নাটকটির মাধ্যমে প্রায় দুই যুগ পর মূলধারার থিয়েটারে নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এর আগে ‘বিষাদ সিন্ধু’, ‘সঙ ভঙ চঙ’, ‘বেহুলার ভাসান’ নাটক নির্দেশনায় জামিল আহমেদ ঢাকার নাট্যমঞ্চে নিজের স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
আগা শহীদ আলীর কাব্যগ্রন্থ ‘আ কান্ট্রি উইদাউট আ পোস্ট অফিস’ অবলম্বনে ভারতের অভিষেক মজুমদার রচিত নাটক ‘রিজওয়ান’।
নাটকটি মঞ্চে আসার পর থেকেই দর্শকের মধ্যে আলোচনার জন্ম দেয় নাটকটি। এবারই প্রথম ঈদের দিনেও ছিল মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী। ‘রিজওয়ান’ নাটকটি গত ১ সেপ্টেম্বর ঈদের আগের দিন থেকে টানা দশদিন প্রদর্শনী হয়। প্রতিদিন দুটো করে টানা ১০ দিনে ১৯টি প্রদর্শনী করে নাট্যাঙ্গনে নতুন রেকর্ড গড়ে এ নাটক।
উৎসবে-দেশে-বিদেশে
‘রিজওয়ান’-এর রেশ না কাটতেই শুরু হয় ‘গঙ্গা যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের নাটক। পাশাপাশি ছিল প্রাঙ্গণে মোর নাট্যদলের নিজেদের সাতটি নাটক নিয়ে নাট্যসপ্তাহ।
এরই মাঝে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের থিয়েটার ক্যাম্প, আরণ্যকের ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘পুষ্প ও মঙ্গল আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব’, ঢাকা বিশ্বলবিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের উৎসবসহ বেশকিছু উৎসবে নিয়মিত সরব ছিলো নাট্যপাড়ায়।
বিদেশে গিয়েও প্রশংসিত হয়েছে দেশের কিছু প্রযোজনা। স্পেনে অনুষ্ঠিত আইটিআই কংগ্রেসে নাট্যপালা রূপচান সুন্দরী প্রদর্শিত করে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন তরুণ নাট্যকর্মী সাইক সিদ্দিকী।
দেশের বাইরে বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়েছে বেশ কটি নাটক। এ ছাড়া ভারতে অনুষ্ঠিতব্য থিয়েটার অলিম্পিকেও এই প্রথম আমন্ত্রিত হয়েছে বাংলাদেশ।
এ বছর নাসিরুদ্দিন শাহ অভিনীত ‘ইসমাত আপাকে নাম’ প্রদর্শিত হয় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে। ভারতীয় কবি কাইফি আজমির জীবনী নিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসেন তাঁর কন্যা অভিনেত্রী শাবানা আজমি ও জামাতা গীতিকবি জাভেদ আখতার।