'কিলার' সিনেমার গল্পটি অ্যাকশন, রিভেঞ্জ, ইমোশন ও থ্রিলারের মিশ্রণ।
Published : 18 Sep 2024, 10:08 PM
যে তরুণ নির্মাতা দেশের প্রযোজকদের কাছে ‘ভরসার পাত্র হয়ে উঠতে পারেননি’, সেই ছেলেটিই ইতালিতে গিয়ে জার্মান প্রযোজক জুটিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন ‘কিলার’ নামের একটি সিনেমা।
পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফাহিমের এই সিনেমাটি জার্মান ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও ভাষান্তর করা হয়েছে।
জার্মানির অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী নিয়ে নির্মিত ‘কিলার’ বিশ্বব্যাপী মুক্তির প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ফাহিম। এর মধ্যে সিনেমার পোস্টার, টিজার ফার্স্ট লুক এসেছে প্রকাশ্যে।
ফাহিম গ্লিটজকে বলেন, 'কিলার' সিনেমার গল্পে আছে প্রতিশোধ আর মারপিটের বহু ঘটনা।
চিত্রনাট্যে জার্মানির বার্লিন শহরের সাত বন্ধুর গল্প তুলে ধরা হয়েছে। যারা সামনাসামনি ভালো ব্যবহার করলেও একে অপরকে খুন করতে চায়। হঠাৎ তাদের একজনের মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যু রহস্যের কূলকিনারা করার চেষ্টায় এগিয়ে যাবে সিনেমার গল্প।
এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন জার্মান অভিনেতা ড্যানিয়েল মুলার, ডেভিড নুমান, ইতালিয়ান অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা লুইসসহ আরও অনেকে।
কুষ্টিয়ার ছেলে ফাহিমের ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও কিশোর বয়স পার করার পর সিনেমা বানানোর শখ মাথায় চাপে। ছেলেবেলা থেকেই সিনেমা দেখতে বসে বিভিন্ন দৃশ্য নিয়ে মনে মনে সমালোচনা করতেন।
ফাহিম বলেন, “আমি যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমার এলাকায় পথশিশুদের নিয়ে শখের বশে ৫-৭ মিনিটের শর্ট ফিল্ম তৈরি করেছি। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায়ও আমি স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাজ করেছি।“
কলকাতার গায়ক-নির্মাতা অঞ্জন দত্তই নির্মাণে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে বলে জানান ফাহিম।
কিন্তু পথটা সহজ ছিল না ফাহিমের জন্য। শুরুতে তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাজের পর আরো দুটি সিনেমা তৈরির মাঝপথে থামতে হয়েছিল তাকে। কারণ প্রযোজকরা আর ফাহিমের সিনেমায় টাকা ঢালতে চাননি।
এরপরও নতুন নতুন গল্প নিয়ে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পেছনে ঘুরেছেন, কিন্তু তাতে ফল মেলেনি।
ফাহিম গ্লিটজকে বলেন, “আমি সিনেমা নির্মাণের আগ্রহ নিয়ে যাদের কাছেই গেছি, সবাই আমাকে পরামর্শ দিয়েছে সহকারী পরিচালক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য। কিন্তু আমি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতে চাইনি।এরপর সরকার মিডিয়ার প্রযোজক সরকার সুমন আমাকে কাজের সুযোগ করে দেন।
“মুশফিক আর ফারহান ও পিয়া বিপাশাকে নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র 'টগর' দিয়ে আমি কাজ শুরু করি। তারপর সুস্মিতা সিনহা ও ফয়সাল দ্বীপকে নিয়ে 'দ্য লাভ' নামে একটা কাজ করি। নওরীন আফরোজাকে নিয়ে 'ময়নামতি' করি। কিন্তু এরপরই সমস্যা তৈরি হয়।”
কী সেই সমস্যা- উত্তরে ফাহিম বলেন, “'ফিল্মপাড়া' ও 'আর্টিস্ট' নামের দুটি সিনেমার কাজ আমি হাতে নিই। সিনেমাগুলো বাণিজ্যিক ঘরানার না, অনেকটা ফেস্টিভ্যাল ফিল্ম। চার থেকে পাঁচ দিনের শুটিং হওয়ার পর প্রযোজক আর খরচ বহন করতে পারেনি। সিনেমা আটকে যায়।
“তারপর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনের জন্য ‘হি’ নামের একটা সিনেমা করি। সেটি নির্মাণের পর মুক্তির সময় প্রযোজকের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়, ফলে ‘হি’ এখনো মুক্তি পায়নি৷ এভাবেই নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দেশ ছাড়ি।"
আক্ষেপ করে ফাহিম বলছিলেন, তিনি যে ধরনের গল্প বলতে চান, সেটা তৈরির সুযোগ দেশে তার মেলেনি।
“২০১৯ থেকে ২০২২ আমি তিন বছর বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার খুব চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। এরপর পড়াশোনার জন্য ইতালি যাই।”
ইতালির ইউনিভার্সিটি অব মিলানে ফিল্ম অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে পড়াশোনার পাশাপাশি ফাহিম ‘কিলার’ সিনেমা বানানোর প্রস্তুতি নেন।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, "২০২২ সালের জুনে আমি ইতালিতে আসার পর পড়াশোনার ফাঁকেই 'কিলার' সিনেমার গল্প লিখি। ফিল্ম নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পড়তে আসেন অনেকেই। দেখা গেছে আমাদের মধ্যেই কেউ ভালো গল্প লেখে, ভালো এডিট করে, কেউ ভালো ক্যামেরা চালায়, কেউ ভালো কালার ও মিউজিক করে।
এইরকম একটি টিমের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়। আন্ডারস্ট্যান্ডিংও ভালো হয়ে যায়। আমি তখন তাদের কাছে আমার সিনেমা বানানোর স্বপ্নের কথা জানালে তারা খুব সাপোর্ট করে, প্রশংসা করে।”
ফাহিম বলেন, ইতালিতেই দুই জার্মান প্রযোজকের সঙ্গে তার পরিচায় হয়।
“তাদের 'কিলার' সিনেমার গল্পটা ভালো লাগে। তারাই অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং শর্ত দেন, সিনেমাটি জার্মান ভাষার হতে হবে। এভাবেই দুই বছর আগে থেকে কিলার সিনেমার যাত্রাটা শুরু," বলছিলেন ফাহিম।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘কিলার’ দেখানোর জন্য জমা দিয়েছেন ফাহিম। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার চিন্তাও করছেন।
“আমরা মেক্সিকো, জার্মানি, ইতালি থেকে সেন্সর পেয়েছি। নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে মুক্তি পাবে এবং অন্য রাজ্যগুলোতে চেষ্টা চলছে।”