গানে ‘প্রলয় বাজানোর’ প্রত্যয়ে শুরু গণসংগীত উৎসব

ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2023, 01:23 PM
Updated : 10 March 2023, 01:23 PM

'প্রলয় বাজাও গানে, সাহস জাগাও প্রাণে'- স্লোগান নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত একাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতা।

শুক্রবার বিকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব, উদ্বোধন করেন উদীচীর উপদেষ্টা ও লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি। তিন দিনব্যাপী উৎসব শেষ হবে রোববার।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত এবং সংগঠন সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। উদ্বোধন ঘোষণার সাথেসাথে একাদশ উৎসবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একজন ঢাকি এবং ১০ জন ঢুলি মিলে ঢাক ও ঢোলের বাদ্যে চারপাশ মুখরিত করে তোলেন। এসময় নানা রঙের আবির ছড়িয়ে দিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দে মাতেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা।

এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল, উত্তরীয় এবং ক্রেস্ট দিয়ে স্বাগত জানান উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন নাট্যজন ম. হামিদ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণসংগীত শিল্পী কঙ্কন ভট্টাচার্য, গণসংগীত শিল্পী কফিল আহমেদ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, হাবিবুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

উৎসবের প্রথম দিন সন্ধ্যায় মঞ্চে একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী কঙ্কন ভট্টাচার্য, ফকির সিরাজ, কফিল আহমেদ, তানভীর আলম সজীব, সুরাইয়া পারভীন, আবিদা রহমান সেতু ও শিল্পী আকতার। সম্মিলিত কণ্ঠে গণসংগীত পরিবেশন করেছে ঋষিজ, বহ্নিশিখা, সহজিয়া, ভিন্নধারা ও উদীচীর শিল্পীরা।

জাতীয় পর্যায়ে গণসংগীত প্রতিযোগিতা

এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের গণসংগীত প্রতিযোগিতা।

জেলা পর্যায়ের পর যেসব প্রতিযোগী বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ী হয়েছেন তারা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’ (দলীয়)- এই চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা হয়। একক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অনুর্ধ্ব-১২ বছর বয়সীরা ‘ক’ বিভাগে, অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীরা ‘খ’ বিভাগে এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল প্রতিযোগী ‘গ’ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

দলীয় প্রতিযোগিতা (‘ঘ’ বিভাগ)-এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচজন শিল্পীর অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয় ছিল। তিনটি একক বিভাগে মোট ৪৮ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ‘ঘ’ বা দলীয় বিভাগে মোট ১০টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল ওয়াদুদ, মাহমুদ সেলিম, ড. বিশ্বজিৎ রায় এবং শাহীন সরদার।

উদীচীর একাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন নেত্রকোনার অপলা সাহা। দ্বিতীয় হয়েছেন বগুড়ার সৌমিকা লাহিড়ী। আর তৃতীয় স্থান পেয়েছেন নেত্রকোনার আইরিন জাহান পলি।

‘খ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন মৌলভীবাজারের তনুশ্রী পাল শ্রেয়া। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের আনন্দ কুমার দাস। তৃতীয় হয়েছেন দিনাজপুরের বর্ণমালা ইসলাম প্রজ্ঞা। ‘গ’ বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছেন রাজবাড়ীর মো. আওয়াল মোল্লা, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন যশোরের মুস্তাহীদ হাসান এবং তৃতীয় হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অরুণ চন্দ্র বর্মণ।

এছাড়া ‘ঘ’ অর্থাৎ দলীয় বিভাগে সেরা হয়েছে উদীচী নোয়াখালী জেলা সংসদ। দ্বিতীয় হয়েছে যুগ্মভাবে উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদ এবং মৌলভীবাজার জেলা সংসদ। আর তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে বরিশালের উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠন।

আরও যা যা উৎসবে

উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকাল ৪টা থেকে শুরু হবে আলোচনা পর্ব। এতে আলোচনা করবেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, উৎসবের আমন্ত্রিত অতিথি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণসংগীত শিল্পী মন্দিরা ভট্টাচার্য্য, গীতিকার ফেরদৌস হোসেন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার ও জামসেদ আনোয়ার তপন।

এছাড়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিল্পীদের গণসংগীতসহ দেশের স্বনামধন্য গণসঙ্গীতের সংগঠন ও শিল্পীদের সঙ্গীতে মুখর হবে।

উৎসবের তৃতীয় ও শেষ দিন ১২ মার্চ রোববার, ছায়ানট মিলনায়তনে ভারত থেকে আগত অতিথি শিল্পী কঙ্কন ভট্টাচার্য, মন্দিরা ভট্টাচার্য্য ও রঞ্জিনী ভট্টাচার্য্যর পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে।