পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষের উপস্থিতিতে জাকির হোসনকে স্যান ফ্রান্সিসকোর ফার্নউড কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।
Published : 21 Dec 2024, 03:19 PM
প্রয়াত কিংবদন্তী তবলাবাদক জাকির হোসেনকে সমাহিত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে।
এনডিটিভি লিখেছে পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষের উপস্থিতিতে জাকির হোসনকে স্যান ফ্রান্সিসকোর ফার্নউড কবরস্থানে শায়িত করা করা হয় গত বৃহস্পতিবার।
শেষ যাত্রার সময়ে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড্রামার আনন্দন শিবমণি ড্রাম বাজিয়ে বিদায় জানিয়েছেন জাকির হোসেনকে।
পরে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন শিবমণি। সেখানে জাকির হোসেনকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে এই ড্রামার বলেন, “তিনি চলে গেলেও তার আর্শীবাদ’ পৃথিবীর সব বাদ্যকরের সঙ্গে রয়ে যাবে।“
জাকির হোসেনের উত্তরাধিকারদের তা ধরে রাখতে হবে বলে বলেছেন শিবমণি।
গত ১৬ ডিসেম্বর জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। তার বয়স হয়েছিলে ৭৩ বছর, বলা যায় জীবনের ৭০ বছরই তিনি কাটিয়েছেন তবলার তাল-লয়-ছন্দের সঙ্গে।
মৃত্যুর আগে দুই সপ্তাহ ধরে স্যান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন জাকির হোসেন। সেখান থেকে তিনি পৌঁছে যান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, যেখান থেকে আর তাকে ফেরানো যায়নি।
ওই সময় এক বিবৃতিতে এই কিংবদন্তির পরিবার জানিয়েছিল 'ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস' থেকে তৈরি হওয়া জটিলতায় মারা গেছেন জাকির হোসেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’র অন্যতম সদস্য কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লা রাখার জ্যেষ্ঠ সন্তান জাকির হোসেন।
১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে তার জন্ম; তবলায় হাতেখড়ি মাত্র তিন বছর বয়সে। ১২ বছর বয়সেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পেশাদার বাদক হিসেবে পরিচিত পেতে শুরু করেন তিনি। তখন মঞ্চে তিনি বাজাতেন বাবার সঙ্গে। জাকির হোসেন ভারতের পাশাপাশি বিশ্ব সংগীতেও ছিলেন সুপরিচিত।
তার আসল পদবি ছিল কুরেশি। ‘হোসেন’ তাকে উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
তার কাজের বেশিরভাগজুড়ে ছিল ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত; পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সংগীতেও দখল ছিল তার। ভারতসহ অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন।
জাকির হোসেন এক সময়ে তবলায় যাদের সংগত করেছেন তারাও একেকজন কিংবদন্তি শিল্পী। পণ্ডিত রবিশঙ্করকে, যাকে জীবদ্দশায় দীর্ঘকাল সংগত করেছেন তার বাবা আল্লা রাখা। এছাড়া ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, ওস্তাদ আলী আকবর খান, পণ্ডিত শাস্ত প্রসাদ, বিসমিল্লাহ খান, পণ্ডিত কিষাণ মহারাজ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকেও মঞ্চে সংগত করেছেন জাকির হোসেন।
তিনি পড়াশোনা করেছেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। অর্থনীতিতে এই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি।
প্রায় চার দশক আগে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে পাড়ি জমান জাকির হোসেন। সেখানেও তিনি সংগীত নিয়েই ছিলেন। আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে তার বিচরণ আরো বিস্তৃত হতে থাকে ওই সময় থেকে। যুগ যুগ ধরে তিনি বিভিন্ন দেশে অসংখ্য অনুষ্ঠান ও কনসার্টে শ্রোতাদের মাতিয়েছেন তবলার বোলে।
১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি।
তার পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা বাজিয়েছেন তিনি।
সংগীতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশ-বিদেশে বহু সম্মাননা পেয়েছেন জাকির হোসেন। ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত করে। ২০০২ সালে পান ‘পদ্ম ভূষণ’, ২০২৩ সালে ‘পদ্ম বিভূষণ’ সম্মাননা।
জাকির হোসেন ১৯৯০ সালে পান ‘সংগীত নাটক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’, যা সংগীত জগতে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা হিসেবে বিবেচিত হয়।
আর বিশ্ব সংগীতের সবচেয়ে মর্যাদাকর গ্রামি পুরস্কারও এই সংগীত মায়েস্ত্রো ঝুলিতে গেছে চারবার।
ওস্তাদ জাকির হোসেন ছিলেন চলচ্চিত্রেও
'নবজাতক' জাকিরকে তবলার বোলে স্বাগত জানিয়েছিলেন আল্লা রাখা