Published : 30 Apr 2025, 03:25 PM
ব্যক্তিগত জীবনের চেয়ে পেশাগত অর্জনেই আলোচনায় থাকতে চান গায়িকা মিলা ইসলাম। সেই ভাবনায়, দাম্পত্য জীবন বেছে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে তার নেই বলে জানিয়েছেন।
মিলার এ ধরনের কথার সুত্রপাত বেসরকারি একটি টেলিভশনে দেওয়া তার সাক্ষাৎকার ঘিরে। সেখানে মিলা বলেছিলেন, তিনি এমন একজন জীবনসঙ্গী খুঁজছেন, যিনি কেবল সঙ্গী নন, হবেন তার বন্ধু ও বোঝাপড়ার জায়গা।
তবে কাজের ব্যস্ততার কারণে প্রেম বা সম্পর্কে জড়ানোর সময় পাচ্ছেন না জানিয়ে মিলা নিজেই আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
মিলার এই কথায় অনেকে ভেবে নেন গায়িকা বুঝি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছে। তাই তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে আসতে শুরু করে একের পর এক জীবনবৃত্তান্ত।
বিষয়টি জানতে মিলার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গ্লিটজকে বলেছেন, নতুন গান, কনসার্ট ও আন্তজার্তিক শো নিয়ে তার ব্যস্ততা চলছে। তাই বিয়ে বা ব্যক্তিজীবন নিয়ে এই আলোচনা বিড়ম্বনা হয়েই ধরা দিয়েছে এই শিল্পীর কাছে।
মিলা বলেন, "আমি এখন কোনো বিয়েশাদী করছি না, এরকম কোনো ইচ্ছা এখন আর নেই।"
আগ্রহী পাত্রদের জীবনবৃত্তান্ত কয়টি পাওয়া গেল সে প্রসঙ্গে বলেন, “আমি মোবাইল খুলতে পারছি না, অনেক ফোন আসছে। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ২৮৮টা সিভি পেয়েছি। আমি চিন্তা করছি নিজেই 'ঘটক পাখি' হয়ে যাব। সোমবার রাতে দেখলাম হোয়াটসঅ্যাপ কোলাপস করে গেছে। শোয়ের প্রস্তাবগুলোও চেক করতে পারছি না।"
এসব বিষয় পাশে সরিয়ে রেখে মিলা এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন গানের ২০ বছরের পথচলাকে।
২০০৫ সালে ১৭ বছর বয়সে মিলার প্রথম অ্যালবাম বের হয়, তখন থেকেই গানের ভুবনে তার পদচারণা।
মিলা বলেন, "এইসব আলোচনার চেয়ে আমি আমার কাজ নিয়ে আলোচনাকে বেশি প্রাধান্য দিতে চাই। কারণ এই বছর কিন্তু আমার সংগীতজীবনে পা রাখার ২০ বছর হয়ে গেল। ২০০৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল দীর্ঘ সময়, আমি অনেক ছোট বেলায় গান শুরু করেছি। যখন প্রথম অ্যালবাম বের হয় তখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম। এতদিন কাজ করছি, গানের সঙ্গেই ছিলাম। এখনো আগের সেই গানগুলোতে দর্শক নস্টালজিক হচ্ছে। গানগুলো খুব উপভোগ করছেন।
"এই স্টেইজে এসে মনে হয় না আলোচনা সমালোচনায় থাকতে হবে। এখন আমার স্ট্যাটাস মেইনটেইন করে ভালো কাজ দিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।"
প্রথম অ্যালবাম ‘ফেলে আসা’ দিয়ে ২০০৬ সালে শুরু হয় মিলার পথচলা। এরপর ‘চ্যাপ্টার ২’, ‘রি-ডিফাইন্ড’ অ্যালবামের বেশ কয়েকটি গান দর্শকপ্রিয় হয়।
তবে মিলা সাড়া তোলেন তার ‘যাত্রাবালা’, ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ বা 'রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া' গানগুলো দিয়ে।
গান প্রকাশের আগে-পরে প্রচারকাজ থেকে শুরু করে যেসব পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো মিলা কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “খুব খারাপভাবে দেখছি। এখনকার সময়টা অন্যরকম। আমরা অনেক তৈরি হয়ে এই জায়গায় এসেছি। আর এখন কেউ ভাইরাল হয়ে গেলেই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গান করছে।
“তবে আমরা আগে খুব সুন্দর একটা সময় পার করেছি। সেসময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। আর সে কারণেই এতদিন যাবত টিকে থাকতে পেরেছি।"
বর্তমান সময়ের ভাইরাল সংস্কৃতি খুব একটা ভালোভাবে দেখেন না মিলা।
তিনি বলেন, "এখন ভাইরাল বা টিকটকে ভাইরাল হলেই হিট গান মনে করা হয়। আগে আমাদের গান জনপ্রিয় হওয়ার পর মানুষ সেই গানে নাচ করছে। আর এখন গান প্রকাশের পর আগে টিকটকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যেন গানটি হিট করে। যার জন্য আসলে লিজেন্ডারি কোনো কাজ আসছে না। কিছুদিন পর শুনব, এআই দিয়ে দিয়ে গান গাওয়ানো হচ্ছে।"
ফেইসবুকে প্রায়ই ভিডিওতে দেখা যায় মায়ের সঙ্গে সংগীতচর্চা করছেন মিলা।
সেই চর্চা নিয়ে মিলা বলেন, "আমার কিন্তু ক্ল্যাসিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল, আমি নজরুল গীতি শিখেছি, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছি। আমার মায়ের কাছ থেকেই এর হাতেখড়ি এবং আমি আমার মায়ের কাছে রেওয়াজ করি।"
মিলা মনে করেন সংস্কৃতিচর্চার শুরাটা হওয়া উচিত পরিবার থেকে।
তিনি বলেন, “ঈদের সময় বাসায় বসে পরিবারের সঙ্গে নজরুলগীতি করছি। সেসব মুহূর্তে ফেইসবুকে শেয়ার করি। স্বাভাবিক ভাবেই এই গানগুলো চর্চা করা হয় না কারণ প্রফেশনালি আমার গানের ধারা ভিন্ন । কিন্তু এই গানের চর্চাগুলো বা পরিবারের সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো ফেইসবুকে শেয়ার করার কারণ হল আমার ভক্তদের বোঝাতে চেয়েছি পরিবারের সাথে বসে সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব অনেক এবং বেশ উপকারিতা রয়েছে।"
অনেক সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন মিলা। সেগুলোর মধ্যে 'মাতৃ ঠিকানা' সিনেমার 'কালিয়ারে' গান, 'মোস্ট ওয়েল কাম' সিনেমায় 'প্রেম দেনা' ও টাইটেল সং 'ওয়েলকাম মোস্ট ওয়েলকাম’ গানের কথা এসেছে বারবার।
'মনে রেখো' সিনেমায় টাইটেল সং 'মনে রেখো', 'ভালোবাসার রঙ' সিনেমায় 'প্রেম রসিয়া', 'সত্তা' সিনেমার 'গুলিস্তানের মোড়', 'প্রেম কয়েদি' সিনেমায় 'আসি আসি প্রেম' আরও অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী।
ফের সিনেমার প্লেব্যাকেও সক্রিয় হয়েছেন এই শিল্পী। সম্প্রতি ‘ইনসাফ’ সিনেমার একটি গানে সাত বছর পর কণ্ঠ দিয়েছেন, যেটি কোরবানির ঈদে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর সংগীত আয়োজন করেছেন শওকত আলী ইমন।
এর আগে গেল বছরের কোরবানির ঈদে প্রকাশ পেয়েছিল মিলার 'টোনা টুনি' শিরোনামে গান।
মিলা বলেন,"‘ইনসাফ’ সিনেমার আইটেম গানে কণ্ঠ দিয়েছি। এটি কোরবানি ঈদে মুক্তি পেলে এই গানটিই হবে ঈদের গান। তাছাড়া নতুন একক কোনো গান আসছে না এর মধ্যে। অন্য গানের কাজ চলছে। তবে অনেক কনসার্ট করছি। সেগুলো নিয়ে বেশিই ব্যস্ত সময় কাটছে।"
কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ততার খবর দিয়ে মিলা বলেছেন, আগামী ৩ মে সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে ‘ইয়োর পাসপোর্ট টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন তিনি।
“বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের উদ্দেশে দেশ ছাড়ব। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন শিল্পীরা আসবেন, তাদের সংস্কৃতিকে রিপ্রেজেন্ট করতে। আমার গান দিয়ে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারব এটা নিয়ে আমি খুব এক্সসাইটেড।"
এরপর জুন ও জুলাই মাসে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে মিলার।
এসবের বাইরেও মিলা ‘দ্য কেইজ’ নামের একটি রিয়েলিটি শোতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই গায়িকা।
এছাড়াও এরমধ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক কর্মশালায় নবীন শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যান্ড সংগীত পরিবেশনের কৌশল শেখানো।
মিলা বলেন, " আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা। ব্যান্ড শিল্পীদের মঞ্চে গান গাওয়া, উপস্থাপন কৌশল ও দর্শকদের সঙ্গে কীভাবে সংযোগ তৈরি করতে হয় তা শেখানোর চেষ্টা করেছি।"