এশিয়ায় সেরা হয়েছে চীনের সিনেমা ‘দ্য কর্ড অব লাইফ’। আর বাংলাদেশের সেরা পার্থ প্রসাদের ‘সাবিত্রী’।
Published : 28 Jan 2024, 08:49 PM
ছয় ডজন দেশের আড়াইশ সিনেমা দেখিয়ে পর্দা নামল ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২২তম আসরের; সমাপনী দিনে ঘোষণা করা হল পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র, পরিচালক ও শিল্পীদের নাম।
রোববার সন্ধ্যায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি, জুরি, নির্মাতা ও প্রযোজকদের উপস্থিতিতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
এবার উৎসবে এশিয়ান ফিল্ম কমপিটিশন বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে চীনের নির্মাতা কুইয়াও সিক্সুইর ‘দ্য কর্ড অব লাইফ’।
শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্র ‘হুইসপেরিং মাউন্টেইনস’র জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন জগথ মনুয়ারা।
মৃণাল সেনকে নিয়ে সিনেমা ‘চালচিত্র এখন’ এ অনবদ্য অভিনয় করার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন অঞ্জন দত্ত। চীনের চলচ্চিত্র ‘দ্য কর্ড অব লাইফ’ এ অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন বাদেমা।
‘অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত শ্যাম বেনেগালের চলচ্চিত্র ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। স্পেশাল অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে অভিজিৎ শ্রীদাসের ‘বিজয়ের পরে’।
এশিয়ান কমপিটিশন বিভাগে স্পেশাল জুরি মেনশন সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে কাজাখস্তানের ‘হ্যাপিনেস’। পরিচালনা করেছেন আসকর ইউবেবায়েব।
স্পেশাল জুরি মেনশন অভিনেত্রী হয়েছেন আফরিন খানম। অ্যাঞ্জেলস রেলিস পরিচালিত ‘মাইটি আফরিন-ইন দ্য টাইম অব ফ্লাডস’চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ, ফ্রান্স ও গ্রিসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
বাংলাদেশ প্যানারোমায় পূর্ণদৈর্ঘ্য বিভাগে পুরস্কার জিতেছে পার্থ প্রসাদের ‘সাবিত্রী’। বাংলাদেশ প্যানারোমায় ট্যালেন্ট বিভাগে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা হিসেবে ফিফরোস্কি পুরস্কার জিতেছে বৈশাখী সমাদ্দারের ‘দ্য উইনিং’। এ বিভাগে প্রথম রানারআপ হয়েছে শুভাশীষ সিনহার ‘ইনাফি’, দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে জিয়াউল হক রাজুর ‘অন্তহীন পথে’।
অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে শিশুতোষ চলচ্চিত্র বিভাগে বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে ভারতীয় নির্মাতা বিপুল শর্মার সিনেমা ‘প্রভাস’।
স্পিরিচুয়াল বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্ম হয়েছে রুশ নির্মাতা ওলেগ আসাদুলিনের ‘দেয়ার অ্যান্ড ব্যাক’। সেরা তথ্যচিত্র হয়েছে কিউবার ‘কুনানফিনদা: দ্য ল্যান্ড অব ডেথ’। তথ্যচিত্রটির নির্মাতা হ্যানসেল লেবা ফানেগো। স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে গোলাম রাব্বানীর ‘সুরত’।
উইমেন ফিল্ম মেকার্স বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্ম হয়েছে ইরানের সিনেমা ‘জাঙ্কস অ্যান্ড ডলস’। এর নির্মাতা মানিজেহ হেকমাত। একই বিভাগে সেরা তথ্যচিত্র হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যান্সি সেভেনডসেনের ‘পাসাং: ইন দ্য শ্যাডো অব এভারেস্ট’।
সেরা নির্মাতা হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েনং মু-নো। ‘হাউ টু গেট ইওর ম্যান প্রেগন্যান্ট’ সিনেমার জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এ বিভাগে স্পেশাল মেনশন পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ‘মুক্তি’। এটির নির্মাতা চৈতালি সমাদ্দার।
বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশের ২৫২টি চলচ্চিত্র নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি দ্বাবিংশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়। এবার উৎসবে ১২৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ১২৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র রয়েছে ৭১টি।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবের স্লোগান ছিল ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ'।
‘মুক্তচিন্তা লালন করতে শেখায় এমন আয়োজন’
উৎসবের সমাপনী দিনে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, এই চলচ্চিত্র উৎসব বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির মধ্যে একটা মেলবন্ধন তৈরি করেছে। নবীন ও প্রবীণ চলচ্চিত্রকাররা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পেরেছে। বৈচিত্র্যময় বহুমুখী সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছে।
“এ উৎসব কূপমণ্ডকতা, কুসংস্কার ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ। এটা প্রগতিশীল মানসিকতা লালন, মুক্ত চিন্তা চেতনা লালন করতে শেখায়। এই ধরনের কালচারাল ইভেন্ট মৌলবাদ, গোঁড়ামি, সহিংস কর্মকাণ্ড ও সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করবে।”
এবার চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটিতে ছিলেন ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক মাজিদ মাজিদি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “চলচ্চিত্র সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সমাজের কথা বলে, বঞ্চিতদের কথা বলে, মানুষের হৃদয়ের কথা বলে, যাদের কথা কেউ শুনে না, তাদের কথা বলে।
“আমি খুবই আনন্দিত যে, এই উৎসবে অনেক তরুণ নির্মাতারা অংশগ্রহণ করেছে। তাদের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় আমি খুবই আনন্দিত। আমি আশা করছি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়াবে।”
উৎসবের পৃষ্ঠপোষক ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জুরি কমিটির সদস্য হিসেবে ভারতীয় অভিনয়শিল্পী শর্মিলা ঠাকুর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।