ঢালিউডে তারকাসন্তানরা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মা-বাবার পেশামুখী হননি কেন? এই সংকট নিয়ে কথা বলেছেন অভিনেত্রী মৌসুমী।
Published : 05 Jul 2024, 11:32 AM
জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীদের সন্তানদের চলচ্চিত্রে নাম লেখানো নতুন কিছু নয়। হলিউড, বলিউড সব জায়গাতেই এই চর্চা রয়েছে। কিন্তু ঢাকাই সিনেমার চিত্র ভিন্ন। আলমগীর, ববিতা, কবরী, শাবানা, জসিম, ফারুকের মত অনেক সুপারস্টার আছেন, যারা নিজেদের সময়ে সিনেমায় দাপট দেখালেও তাদের সন্তানরা রয়েছেন রুপালী পর্দা থেকে দূরে। এই নিয়ে আক্ষেপ ঝরেছে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর কথায়। যার নিজের সন্তানরাও অভিনয়ে নেই।
তার ভাষ্য, ছেলে সন্তানদের এ নিয়ে বাঁধা না থাকলেও মেয়ে সন্তানকে নায়িকা হতে দিতে চান না অভিনয়শিল্পীরা।
সম্প্রতি মৌসুমীর দুই মিনিট ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আলোচনায় এসেছে, যেখানে তিনি বরেছেন, “ছেলে বাচ্চাদের অভিনয়ে আসার ব্যাপারে কারও তেমন কোনো সমস্যা নেই। সব নায়ক-নায়িকাদের দেখি তাদের ছেলেরা যদি সিনেমা করতে চায়, তাদেরকে না করে না। কিন্তু মেয়ে কখনো যদি নায়িকা হতে চায়, সেটা নিয়ে সবাই একটু অমত পোষণ করেন।”
ঢাকাই সিনেমার সোনালী সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন ববিতা, সুচরিতা, কবরী, রোজিনা, শাবানা, অঞ্জনা, নূতন, পারভীন সুলতানা দিতি, চম্পা। এই নায়িকাদের মধ্যে কেউ প্রয়াত হয়েছে বাকিরা প্রায় সবাই অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন। তবে তাদের কারো সন্তানদের অভিনয়ে দেখা যায়নি। অভিনয়ে দেখা না গেলেও চলতি বছরে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী।
অন্যদিকে মান্না, জসীম, ইলিয়াস কাঞ্চন, রাজ্জাক, আলমগীর, জাফর ইকবাল, বুলবুল আহমেদ, রিয়াজ আহমেদ, ফেরদৌস- জনপ্রিয় এই অভিনেতাদের সন্তানদেরও রুপালি জগতের এই পেশাকে বাছাই করতে দেখা যায়নি।
এই তারকাদের মধ্যে মান্নার ছেলে সিয়াম ইলতিমাসকে নির্মাণে দেখা যাবে এমন খবর পাওয়া গেছে। নায়করাজ রাজ্জাকের দুই সন্তান বাপ্পারাজ ও সম্রাট দুজনকেই অভিনয়ে পাওয়া গেছে।
বুলবুল আহমেদের মেয়ে ঐন্দ্রিলা আহমেদকে কয়েক বছর আগে বিনোদন অঙ্গনে দেখা গেলেও বর্তমানে তিনি অনিয়মিত।
আলমগীরের মেয়ে আঁখি আলমগীর ‘ভাত দে’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। এরপর আর অভিনেত্রী হিসেবে দেখা যায়নি। অভিনেতা জসীমের সন্তানদের অভিনয়ে পাওয়া যায়নি, তবে সংগীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন তারা।
আঁখি আলমগীরের প্রসঙ্গ টেনে এনে মৌসুমী বলেন, “আঁখি আলমগীর খুব সম্ভাবনাময় ছিল। তাকে কিন্তু ভাইয়া (আলমগীর) কাজ করতে দেননি। ও খুবই সুন্দর মিষ্টি দেখতে ছিল। সে সময় এক ঝাঁক নতুন মুখ আসছিল। কিন্তু আঁখিকে দেওয়া হয়নি। তাকে পেলে আমরা খুব ভালো একজন নায়িকা পেতাম।"
মৌসুমী আরও বলেন, “চম্পা আপার মেয়েও অনেক কিউট। চম্পা আপা তাকে কখনো নায়িকা হতে উৎসাহ দেয়নি। দেখা যায় যে, আমাদের অনেকেরই মেয়ে বাচ্চা আছে, যাদের আগ্রহ থাকার পরও সিনেমায় আসতে দেওয়া হয়নি। অন্যভাবে বড় করা হয়েছে, অন্যকাজে যেতে উৎসাহিত করেছে। কেন যেন আর্টিস্ট হওয়ার ব্যাপারে সবার বাঁধা।”
তবে এই দিক থেকে মৌসুমীর ব্যতিক্রম মনে হয়েছে অভিনেত্রী দোয়েলকে। দোয়েলের চেষ্টা ছিল তার মেয়ে প্রার্থনা ফারদিন দীঘিকে নায়িকা হিসেবে তৈরি করার। যা নিয়ে দোয়েলের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন মৌসুমী।
সেই স্মৃতি তুলে ধরে মৌসুমী বলেন, “ব্যতিক্রম ছিলেন দোয়েল আপা, তিনি অনেক সময় দিতেন দীঘিকে। আপা আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা দীঘিকে নায়িকা হিসেবে তৈরি করার। আমি নিজে যা মেইনটেইন করতে পারিনি। আমি বড় জায়গায় যেতে পারতাম। এত সাপোর্ট পেয়েও আমি আমার জায়গাটা ধরে রাখতে পারিনি। এটা আমি দীঘির মধ্যে দেখতে চাই’।
“সেসময় আপাকে আমি প্রশ্ন করলাম দীঘির পড়াশোনার ক্ষতি হবে না? তখন বলল, ‘উঠতি বয়সে তাকে একটা ব্রেক দিব, গ্যাপ দিব। তারপর আবার যখন ফিরবে তখন নায়িকা হয়ে ফিরবে। তাকে একদম তৈরি করে ফেরাব’। আমার খুব ভালো লেগেছিল এটা শুনে। একটা মেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে যখন এমন প্ল্যান করা হয়, তাকে একদম ছেড়ে না দিয়ে, তার সঙ্গে সাপোর্টিভ হয়ে যদি একটা কিছু করা যায়, অবশ্যই একটা ভালো রেজাল্ট আসে।”
নিজের ছেলে ফারদিন এহসান স্বাধীনকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে উৎসাহিত করেছিলেন বলে জানান মৌসুমী।
তবে অভিনয়ের চেয়ে নির্মাণের দিকে বেশি আগ্রহী ফারদিন কয়েকটি টেলিফিল্মও বানিয়েছেন। অন্যদিকে মেয়ে ফাইজার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল না বলে জানান মৌসুমী।