‘পরিণীতা’ সিনেমার জন্য ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
Published : 04 Jan 2025, 03:22 PM
‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে’, অথবা ‘আমি যেমন আছি তেমন রব, বউ হব না রে’ লিরিকের যে গানগুলো মানুষকে ফিরিয়ে নেয় ঢাকাই সিনেমার ‘সোনালী দিনে’, সেসব সিনেমার নায়িকা অঞ্জনা রহমান শুরুতে আলো জ্বালিয়েছিলেন নাচের মঞ্চে।
তাল-ছন্দ-ঘুঙুরের জীবন থেকে সত্তর মাঝামাঝিতে সিনেমার আসার পর, এর পরের প্রায় পাঁচ দশক ধরে ‘সেতু’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘অশিক্ষিত’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘আশার আলো’, ‘জিঞ্জির’, ‘আনারকলি’, ‘বিধাতা’, ‘বৌরানী’, ‘সোনার হরিণ’, ‘মানা’, ‘রামরহিমজন’, ‘সানাই’, ‘সোহাগ’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ও ‘অভিযান’এর মত দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্রে পাওয়া গেছে অঞ্জনাকে।।
অভিনেত্রীর প্রয়াণের পর তার অভিনীত সিনেমাগুলো মধ্য থেকে জনপ্রিয় কিছু চলচ্চিত্র ও সিনেমার গানের সুলুকসন্ধান করেছে গ্লিটজ।
অভিনেতা সোহেল রানা প্রযোজনায় এবং শামসুদ্দিন টগরের পরিচালনায় অঞ্জনার মুক্তি পাওয়া প্রথম সিনেমা ‘দস্যু বনহুর’। ১৯৭৬ সালে রোজার ঈদের মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা অঞ্জনার নায়কও ছিলেন সোহেল রানা।
‘দস্যু বনহুর’ সিনেমার আরেকটি গান ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’। রহস্য-অ্যাডভেঞ্চারে গল্পের এই সিনেমা নিয়ে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে অঞ্জনা বলেছিলেন, ‘দস্যু বনহুর’ সিনেমায় তিনি সম্মানী পেয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা। বলা হয়, এই সিনেমার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী অঞ্জনাকে।
নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গেই অঞ্জনার সিনেমা করেছেন সবচেয়ে বেশি। এই জুটির ৩০টি সিনেমার মধ্যে অন্যতম ‘অশিক্ষিত’।১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ পরিচালনা করেছেন আজিজুর রহমান। এই সিনেমার ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে’ গানটি তার ক্যারিয়ারে অবদান রেখেছিল বলে জানিয়েছিলেন অঞ্জনা।
অঞ্জনার ‘আমি যেমন আছি তেমন রব, বউ হব না রে’ ঢাকাই সিনেমার দর্শকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় একটি গান। এটি‘অশিক্ষিত’ সিনেমার গান। অঞ্জনা অভিনীত এই গানটি গেয়েছেন শাম্মী আখতার; গানের গীতিকার গাজী মাজগারুল আনোয়ার। ‘দস্যু বনহুর’ দিয়ে শুরু হলেও অঞ্জনার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় 'অশিক্ষিত'।
‘লালু সর্দার’ সিনেমায় অঞ্জনার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এই সিনেমার গানগুলোয় অভিনেত্রীকে পাওয়া গেছে নাচের ছন্দে।
‘হিরো’ সিনেমা অঞ্জনাকে পাওয়া যায় ভিন্ন এক লুকে। এই সিনেমার পরিচালক রায়হান মুজিব।
অঞ্জনার ‘অভিযান’ সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। এই সিনেমায় অঞ্জনার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক, সিনেমাও পরিচালনাও করেছেন এই অভিনেতা।
‘রাজবাড়ি’ সিনেমায় অঞ্জনার সঙ্গে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা। কাজী হায়াতের পরিচালনায় ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় এই সিনেমাটি।
আলমগীর কবিরের পরিচালনায় ‘পরিণীতা’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন অঞ্জনা। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাতেও অঞ্জনার নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
১৯৮২ সালে নির্মাতা কামাল আহমেদ তার ‘রজনীগন্ধা’ সিনেমার জন্য বেছে নেন অঞ্জনাকে। তবে এই সিনেমা ছিলেন শাবানাও। নায়ক ছিলেন আলমগীর।
নিজের সেরা সময়ে ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির প্রায় সব নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। এছাড়া ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী; পাকিস্তানের অভিনেতা ফয়সাল, নাদীম, জাভেদ শেখ, ইসমাইল শাহ; নেপালের শীবশ্রেষ্ঠ ও ভুবন কেসির সঙ্গেও অভিনয় করেছেন এই নায়িকা।
১৯৯২ সালের পর থেকে সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে যান অঞ্জনা। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় তার সর্বশেষ সিনেমা ‘ভুল’।