ইরানি নির্মাতার অভিযোগের জবাব দিলেন অনন্ত জলিল

অভিযোগের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও সন্দেহ করছেন এই চিত্রনায়ক-প্রযোজক।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2022, 04:48 PM
Updated : 18 August 2022, 04:48 PM

‘দিন: দ্য ডে’ নির্মাণে ইরানির চলচ্চিত্রকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশের চিত্রনায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিল।

ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে যে মামলার হুমকি দিয়েছেন, তার জবাব দিতে ফেইসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন অনন্ত জলিল।

তিনি সন্দেহ করছেন, খরা কাটিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যখন উঠে দাঁড়াচ্ছে, তখন নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

গত কোরবানরি ঈদে বাংলাদেশে মুক্তি পায় ‘দিন: দ্য ডে’। ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক অনন্ত জলিল। সিনেমাটিতে নায়কও তিনি, নায়িকা তারই স্ত্রী বর্ষা।

‘দিন: দ্য ডে’র শুটিং শুরু হয় ২০১৯ সালে ইরান থেকে। শেষ হয় ২০২০ সালে। বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে সিনেমাটির শুটিং হয়।

মুক্তির এক মাস পর বৃহস্পতিবার অতাশ জমজম ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, সিনেমার চুক্তি ও শর্ত ভঙ্গ করে সিনেমার প্রধান প্রযোজক হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক নির্মিত সিনেমা তার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অনন্ত জলিল। সত্য উদঘাটনের জন্য আইনি প্রক্রিয়াই এখন একমাত্র উপায়।

Also Read: অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে মামলা করবেন ‘দিন: দ্য ডে’ পরিচালক

অনন্ত জলিল লিখেছেন, “আমি শুরুতেই বলে এসেছি, এ সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ইরান। আমার সঙ্গে চুক্তি আছে যে, সিনেমাটির বাংলাদেশে যেসব কাজ হবে (শুটিং, ডাবিং) সেটার ব্যয়ভার আমি বহন করব; এবং আমি সেটাই করেছি। চুক্তি অনুযায়ী, ইরানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে শুটিংয়ের খরচ বহন করবে ইরানী প্রযোজক। ইরান যে সিনেমাটির মূল প্রযোজক সেটা পরিচালকই তার স্ট্যাটাসে দেওয়া একটি বাক্যের (আমি ছিলাম সিনেমাটির মূল প্রযোজক) মাধ্যমে স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হয় যে, সিনেমাটিতে আমি শুধু বাংলাদেশের খরচ বহন করেছি এবং এটাই ছিল চুক্তি।”

সিনেমার নাম নিয়ে তিনি বলেন, “আমি বাংলায় একটি নাম ব্যবহার করেছি। তাও ‘ডে’-এর বাংলা, অর্থাৎ ‘দিন’। ইরানি প্রযোজকের দেওয়া নামও (ডে) কিন্তু সিনেমায় রয়ে গেছে। এটাও আমাদের মৌখিক আলোচনায় ছিল। যেহেতু সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হবে, তাই বাংলা নাম থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। আর আর্ন্তজাতিকভাবে মুক্তির জন্য সঙ্গে ইংরেজি নামও রয়েছে। সুতরাং নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর।”

গল্প নিয়ে বাংলাদেশি চিত্রনায়ক বলেন, “তিনি (ইরানি নির্মাতা) যে গল্পের কথা বলেছেন, সেটা আমরা দুজনেরই আইডিয়া। সিনেমার গল্প আমি এবং মুর্তজা সাহেব দুজনে আলোচনা করে ঠিক করেছি। ইরানের শুটিং শুরুর পর ইরানি প্রযোজক আমাদেরকে সম্মানের সঙ্গে পাঁচতারকা হোটেলে রেখেছেন। আমরাও বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময় ইরানি ইউনিটকে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রেখেছিলাম। সম্মান এবং আতিথেয়তায় কোনো ঘাটতি রাখিনি।”

চিত্র সম্পাদনা নিয়ে তিনি বলেন, “এ সিনেমার পরিচালক যেহেতু মুস্তফা অতাশ জমজম, তাই শুটিংয়ের যাবতীয় ইক্যুপমেন্ট, অর্থাৎ এইট-কে রেজুলেশনের ক্যামেরা তিনি ইরান থেকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। ইরানসহ অন্যান্য দেশের শুটিংয়ের ফুটেজ, এমন কি বাংলাদেশে শুটিংয়ের ফুটেজও তিনি ইরান নিয়ে গেছেন লাইনআপ করার জন্য। ২০২০ সালে শুটিং শেষে তিনি আমাকে এডিট করা একটা লাইনআপ পাঠালেন। আমি সেটা দেখে গল্পে বেশ কিছু জায়গায় অসামঞ্জস্যতা দেখে বলেছি, আমাকে একটা কপি দেন, আমি সেটা ঠিক করে দিচ্ছি।

“যেহেতু ইরান গিয়ে এডিটিং করা সম্ভব নয়, তাই আমি ঠিক করি ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে কাজটি করব। সেই ফুটেজের কপি তিনি নিজেই সঙ্গে করে অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে নিয়ে আসেন। আমাদের সঙ্গে ৪/৫ দিন হায়দ্রাবাদে অবস্থান করে তিনি নিজ দেশ ইরানে ফিরেও যান। আমরা সিনেমাটিতে ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করতে চাইলাম। যেহেতু ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করলে তাদের লাইসেন্স লাগে, আর ডলবি আমেরিকান কোম্পানি, ইরান সেটা ব্যবহার করতে পারবে না। তাই আমি বলেছি আমার দেশে (বাংলাদেশ) ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করব।

“বিষয়টিতে তিনি রাজি হয়েই স্বশরীরে ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে সিনেমাটির ফুটেজ নিয়ে আসেন। যদি কোনো অর্থ পাওনা থাকত তাহলে তিনি কি ফুটেজ নিয়ে আসতেন? এছাড়া সিনেমাটির সম্পূর্ণ ফুটেজ এখনও তার কাছেই রয়ে গেছে। যেহেতু তিনি সিনেমাটির মূল প্রযোজক এবং পরিচালক, তাই তার কাছে সেটা থাকাটাই স্বাভাবিক। চুক্তিতে যেভাবে যা কিছু উল্লেখ ছিল, সে অনুযায়ীই আমি কাজ করেছি। যদি আমার কাছে তিনি ১০০ টাকাও অর্থাৎ কোনো অর্থ পাওনা থাকতেন তাহলে তিনি কি আমাকে সিনেমার সম্পূর্ণ ফুটেজ দিতেন?”

সিনেমার মুক্তি নিয়ে পরিচালক কোনো আপত্তি জানাননি দাবি করে অনন্ত জলিল লেখেন, “২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা যখন বাংলাদেশে হোটেল লো মেরিডিয়ানে এ সিনেমার গান ও প্রাথমিক ট্রেইলর উদ্বোধন করি, তখনও তিনি উপস্থিত ছিলেন, এবং সিনেমাটি যে আমরা বাংলাদেশে মুক্তি দেব, সে ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানাননি। আমি এটাও বলেছি যে, ইরান যদি সময়মতো মুক্তি দিতে না পারে তাহলে আমি বাংলাদেশে মুক্তি দেব। এসব নিয়েও তখন কোনো আপত্তি করেননি তিনি। ইরান সময়মতো মুক্তি দিতে পারছে না বলে, তিনবার আমরা মুক্তির তারিখ ঘোষণা দিয়েও সেটা পরিবর্তন করি।”

“এখন তার অবান্তর অভিযোগ মূলত আমাকে ও আমার দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ছোট করার অপপ্রয়াস বলে আমি মনে করি,” লিখেছেন তিনি।

এর পেছনে ষড়যন্ত্রের সন্দেহ প্রকাশ করে অনন্ত জলিল লিখেছেন, “‘দিন: দ্য ডে’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা এবং সেটা দেশ থেকেই। আমি মনে করি, এটাও তেমনই একটি ষড়যন্ত্র। এরপরও মুর্তজা সাহেবের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা আমরা নিজেরাই বসে সমাধান করতে পারি।

“তিনি বাংলাদেশি কারও পরামর্শে কিংবা নিজের প্রচারের স্বার্থে যদি ভুল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা হবে খুবই দুঃখজনক। যদি এরকম কিছু ঘটে থাকে তাহলে আমিও দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি ব্যবস্থা নেব। কারণ, একই চুক্তিপত্র আমার কাছেও রয়েছে।”

সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে অনন্ত জলিল লিখেছেন, “সত্যটা জেনে আপনারা খবর প্রকাশ করবেন। আমি চেষ্টা করবো আমার পেইজ থেকে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানানোর জন্য।

“এমনিতেই আমাদের বাংলাদেশি সিনেমার দুর্দিন চলছে। এরমধ্যে গত ঈদে আমার ‘দিন: দ্য ডে’সহ আরও দুটি সিনেমা দেশের সিনেমা অঙ্গনে আশার আলো দেখিয়েছে। দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ফিরছেন। দেশি সিনেমা অঙ্গন চাঙা হয়ে উঠছে। তাই একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে কীভাবে বাংলাদেশের এই বাজারটি নষ্ট করা যায়। এবং তারা আমাদেরই সিনেমার লোক বলে আমি মনে করি।”