‘উন্নয়নের দূষণ’ রুখতে ২৫ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা

আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজুয়ালের পর্যবেক্ষণে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আসায় আগামী ২৫ নভেম্বর ‘জরুরি’ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 04:01 PM
Updated : 20 Nov 2019, 05:21 PM

বুধবার গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এয়ারভিজুয়াল ডটকমে ২০১৮ সালের বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় ৭৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম রয়েছে শীর্ষে। তাদের হিসাবে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের ভাসমান বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাণ গড়ে ৯৭ দশমিক এক শূন্য মাইক্রো গ্রাম, যাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলছে সংস্থাটি।  

তালিকায় বাংলাদেশের নাম আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শাহাব উদ্দিন বলেন, এ নিয়ে ২৫ নভেম্বর বিকাল ৩টায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়েছে।

“সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রীদের বলা হয়েছে। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রকে থাকতে বলা হয়েছে, তারা উপস্থিত থাকবেন। আসতে বলা হয়েছে বিএসএমএমইউর ইএনটি বিভাগের প্রধানকে।”

ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং অন্যান্য ইউলিটি খাতে যে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে, তাতেই পরিবেশ ‘দূষিত হচ্ছে’ বলে স্বীকার করে নেন পরিবেশ মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বিস্তারিত আলোচনা করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা আমরা আলাপ করব। ঢাকাকে বায়ু দূষণমুক্ত করতে কার্যক্রম হাতে নেব।… ২৫ তারিখে আমরা এ বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেব। প্রয়োজনে যেখানে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা তা নেব।”

‘সুন্দরবনকে ধরে রাখতে যা কিছু দরকার করব’

আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ইউনেস্কোর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আসছে সুন্দরবনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। বিশ্ব ঐতিহ্যের পূর্বশর্তগুলো কতটুকু মেনে চলা হচ্ছে তা দেখবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও তারা আলোচনা করবে।

শাহাব উদ্দিন বলেন, “উনারা আসবেন, আমাদের মন্ত্রণালয় তাদের সাথে থাকবেন। আশা করি, বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। আমরা ক্ষতিকারক কিছু করি নাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। সুন্দরবনকে ধরে রাখার জন্য আরও যা কিছু প্রয়োজন আমরা করব।”

২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে।

এর আগে ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’হিসেবে বর্ণনা করে প্রকল্পটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়। তা না হলে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা বাতিল করে একে ‘বিপন্ন’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির অধিবেশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।

এরপর মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি প্যারিসে ইউনেসকো সদর দপ্তরে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যুক্তিগুলো তুলে ধরেন এবং প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে ইউনেসকোর সমর্থন প্রত্যাশা করেন।

শেষ পর্যন্ত এ বছর জুলাই মাসে আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভায়  ‘বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের’তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের অন্তর্ভুক্তি আপাতত এড়াতে পারে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্বের বর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের’ তালিকাভুক্ত করে।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো দায়ী নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় দায়ী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি ব্যতীত এ বিষয়ে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।”

আগামী ২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিতব্য পরিবেশ বিষয়ক কপ-২৫ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ দিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে জোর দাবি জানানো হবে বলে জানান তিনি।

শাহাব উদ্দিন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ, কনসার্ন ওয়ার্ডওয়াইডসহ কয়েকটি সংস্থা বঙ্গোপসাগর উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু অভিযোজন সম্পর্কিত এই পঞ্চম উপ-আঞ্চলিক কর্মশালার আয়োজন করে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী পরিচালক নিলুফার বানু, প্রিজম ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক অনিরুদ্ধ দে, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কে এম মুসা, সংস্থাটির হেড অভ প্রোগ্রাম সাঈদ মাহমুদ রিয়াদ বক্তব্য দেন।