বায়ু দূষণ: পরিবেশ অধিদপ্তর কী করছে জানতে চায় আদালত

ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের গবেষণার ফলাফল নিয়ে সন্দেহপোষণকারী পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হককে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2019, 02:34 PM
Updated : 13 March 2019, 02:34 PM

গ্রিনপিস ও এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে বায়ু দূষণের দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়, যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন জিয়াউল হক। 

কেন তিনি ওই প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন, আগামী ১০ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে তার ব্যাখ্যা তাকে দিতে হবে। 

এছাড়া ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তার একটি প্রতিবেদন সেদিন আদালতে জমা দিতে হবে তাকে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান এবং বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

বিচারক শুনানিতে বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর তো কোনো কাজ করছে না। সে কারণেই মারাত্মক বায়ু দূষণ হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কাজ করত তাহলে তো মানুষের এই অবস্থা হত না। কাজ না করলে আমরা আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের রক্ষা করতে পারব না।”

 একটি রিট মামলার শুনানিতে গ্রিনপিস ও এয়ার ভিজ্যুয়ালের ওই প্রতিবেদনের তথ্য এবং জিয়াউল হকের বক্তব্য আদালতের নজরে আনা হলে হাই কোর্টের এই মন্তব্য আসে। 

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে প্রকাশিত খবর ও প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২৭ জানুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাই কোর্টে এই আবেদনটি করে। 

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি হাই কোর্ট ঢাকা শহরে বায়ুদূষণকারীদের বিরুদ্ধে সপ্তাহে দুই বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দেয়।

এছাড়া রাজধানীর যেসব জায়গায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে, সেসব জায়গা ১৫ দিনের মধ্যে এমনভাবে ঘিরে ফেলতে বলা হয়, যাতে শুকনো মৌসুমে ধুলো ছড়িয়ে বায়ু দূষণ বাড়তে না পারে।

পাশাপাশি ‘ধুলোবালি প্রবণ’ এলাকাগুলোতে দিনে দুই বার করে পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঘেরাওয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র ও নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল হাই কোর্ট। পানি ছিটানোর বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়েও প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ছিল।

এছাড়া ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ রোধে প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল করেছিল আদালত।

বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএমপি কমিশনার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -রাজউক’র চেয়ারম্যানসহ ১১ বিবাদিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয় ওই রুলে।

দেড়মাস আগের সেই আদেশ অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে দাখিল করা অগ্রগতি প্রতিবেদন বুধবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রতিবেদন দেন আইনজীবী নুরুন্নাহার আক্তার। 

আর রিটকারী হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোরসেদ।

পরিবেশ অধিপ্তর ও সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিচারক উষ্মা প্রকাশ করে বলে, বায়ু দূষণ রোধে নেওয়া পদক্ষেপ আদালতকে হতাশ করেছে। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ যেসব এলাকায় চলছে, সেসব এলাকায় মারাত্মক বায়ুদূষণের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ ঘটছে।

বিচারক বলেন, “আমাদের মেট্রোরেল প্রয়োজন। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধ করাও জরুরি। আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে হলে এসব (বায়ু দূষণ) বন্ধ করতেই হবে।”

মনজিল মোরসেদ এ সময় গ্রিনপিস ও এয়ার ভিজ্যুয়ালের গবেষণার তথ্য নিয়ে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতের সামনে তুলে ধরেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

ওই তথ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে ডেইলিস্টারে বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হক।

ওই বক্তব্য পড়ে শোনানো হলে বিচারক বলেন, “তিনি যে বললেন, এই রিপোর্ট সঠিক না, আমরা তো প্র্যাকটিক্যালি দেখতে পাচ্ছি ঢাকা শহরের কী অবস্থা। সেই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?”

বিচারক বলেন, “এদেশের অনেকেই তো বিদেশে সেকেন্ড হোম করছে, তারা চলে যাবে। আমরা যারা এদেশে থাকব তাদের জন্য একটি শুদ্ধ বায়ু সেবনের পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে আমাদের কারও জীবন নিরাপদ থাকবে না।”

এরপরই পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জিয়াউল হককে ১০ এপ্রিল হাজির হতে নির্দেশ দেয় আদালত।

মনজিল মোরসেদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে তারা কোথায় কোথায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। কতটি মামলা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা যেভাবে বাস্তবায়ন করার কথা, সিটি করপোরেশন সেভাবে করেনি। এমনকি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদনও দেয়নি। ফলে আদালত তাতে উষ্মা প্রকাশ করে সিটি করপোরেশনকে আবার প্রতিবেদন দিতে বলেছে।”

রাজধানীর ফার্মগেইটসহ রাজধানীর দুই জায়গায় বায়ু দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর যে ব্যবস্থা নিয়েছে সেটি আরও বিস্তৃত আকারে করতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।