বাংলাদেশে ২০% অকাল মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ: বিশ্ব ব্যাংক

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকার বাতাসই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ২০ গুণ বেশি দূষিত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 12:14 PM
Updated : 28 March 2023, 12:14 PM

বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায়, তাদের ২০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ বলে ওঠে এসেছে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় ।

‘বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়ার চেষ্টা: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ ও জনস্বাস্থ্য' শীর্ষক ওই প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দশ শহরের নয়টিই দক্ষিণ এশিয়ায়, তার মধ্যে ঢাকা একটি।

বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক বলেন, বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় প্রভাব ফেলে।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করার ‘ব্যয়-সাশ্রয়ী’ সমাধানও রয়েছে, সেজন্য দেশগুলোকে নীতি ও বিনিয়োগের সমন্বয় করার তাগিদ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত দূষণকারী কণার উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অনেক ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র এলাকাতেই দূষণের মাত্রা থাকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি।

ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর অন্তত ২০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। একই কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

এই দূষণ শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শ্বাসনালীর বিভিন্ন রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ তৈরি হয় বলে গবেষণায় ওঠে এসেছে।

তাতে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য সেবার খরচ বেড়ে যায়; উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

সঠিক পদক্ষেপ ও নীতির মাধ্যমে বায়ু দূষণ রোধ সম্ভব জানিয়ে আবদুলায়ে সেক বলেন, “বাংলাদেশ এর মধ্যেই বায়ু দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে জাতীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি অঞ্চলিক (দক্ষিণ এশিয়া) পর্যায়েও সম্মিলিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ।

এসব ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে বলে জানান তিনি।

বিশ্ব ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, দূষিত বাতাস দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এবং 'এয়ারশেড'- এ আটকে যেতে পারে। একই এয়ারশেড পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। দেখা গেছে, কাঠমান্ডু, ঢাকা ও কলম্বোর মত শহরের দুই-তৃতীয়াংশ দূষিত বায়ু আসে বাইরে থেকে।

এই চারটি দেশে বায়ু মানের উন্নয়ন ঘটাতে ‘কাঠমান্ডু রোডম্যাপ’ তৈরি করা হয়েছে বলে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের রিজিওনাল ইন্টিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক সেসিল ফ্রুম্যান বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একই এয়ারশেডে অবস্থিত। এসব অঞ্চলের বায়ুর মানও একই। তাই দেশগুলো সমন্বিত ব্যবস্থা নিয়ে বায়ু দূষণের উদ্বেগজনক মাত্রা কমাতে পারে। এক সঙ্গে কাজ করলে দ্রুত ও কম খরচে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে।”

এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বৃহৎ কারখানা ও পরিবহন খাতের ওপর নজর দিয়ে নীতিগত ব্যবস্থা নিলে বাতাস থেকে ভারী বস্তুকণার ঘনত্ব কমাতে ‘আংশিক সাফল্য’ পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহত্তর অগ্রগতির জন্য কৃষি, আবাসিক রান্না ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে নীতিনির্ধারকদের।