ভোট নিয়ে এখন যে ভাবনায় ভোটাররা

ঢাকার  দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে দুই রাজনৈতিক শিবিরের প্রচারণায় মাঘের শীতে উত্তাপ ছড়ালেও ভোটারদের ভাবনার কেন্দ্রজুড়ে আছে ভোটের দিনের পরিবেশ আর ইভিএম।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 06:05 PM
Updated : 15 Jan 2020, 06:06 PM

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি অনেকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করলেও যন্ত্রে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে সন্দিহান অনেকে।

প্রার্থীদের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যাওয়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বুধবার ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে ভোট নিয়ে ভোটারদের ভাবনার কথা জানা যায়।

এদিকে নগরবাসীর কাছে ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতিকে পরিচিত করাতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। মক ভোটিং মহড়ার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও তা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে, যদিও সরস্বতী পূজা সেদিন বলে ভোট পেছানোর দাবি এখনও রয়েছে। দুই সিটিতে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মোট ৭৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দুই সপ্তাহ পরের ভোট ঘিরে আনুষ্ঠানিক প্রচারের মধ্যে ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানান দক্ষিণ সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আদিত্য রিমন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পোস্টারের বিষয় বিবেচনা করলে আওয়ামী লীগের দখলে আছে। বিএনপি পোস্টার লাগায়নি, নাকি লাগাতে পারেনি, সেটা স্পষ্ট না। তবে অনেক জায়গায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার কথা তো বিএনপি বলছে।

“আর ভোট দিতে যেতে পারব কি না, সেই শঙ্কা আমাদের মধ্যে রয়েছে।”

মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় সরব রাজধানীর সব অলিগলি। বিভিন্ন সড়কে টানানো পোস্টার-ব্যানারে আধিক্য দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের।

বিএনপি পোস্টার ছেড়া ও প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুললেও এখনও কোনো ধরনের সহিংসতা ঘটেনি।

ইভিএম নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে রিমন বলেন, “ইভিএমে ভোট ঠিক জায়গায় যাবে, নাকি নির্দিষ্ট প্রার্থীদের পকেটে যাবে, তা এখনও জানি না। আমরা তো চাই, নিজের ভোট যেন নিজের প্রার্থীকে দিই। সেটা মেয়র পদে হোক কিংবা কাউন্সিলর।”

একই ধরনের শঙ্কার কথা ফুটে উঠে ২০ ওয়ার্ডের দোকানি আবু তাহেরের কথায়। ইভিএমে ভোট কীভাবে দেবেন, সেটি এখনও জানেনই না এই ভোটার।

আবু তাহের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারব কি-না, ইভিএমে কী হবে- সেটা এখনও জানি না। প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছে, দেখতেছি। সুযোগ পেলে ভোটের দিন ভোট দিয়ে আসব। আর ইভিএমের প্র্যাকটিক্যাল হলে দেখে আসব গিয়ে।”

তিনি বলেন, ”আমরা ছোট দোকান চালাই, কোনো পার্টি করি না। আমরা চাই, ভোটটা যেন দিতে পারি।”

ইভিএম কারচুপির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হবে বলে বিএনপি শুরু থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। তবে ইসি তা নাকচ করে বলছে, এতে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।

নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ না দেখালেও ভোটের পরিবেশ কেমন থাকবে, সেটা নিয়ে সন্দিহান পশ্চিম রাজাবাজারের ভোটার নুরু মিয়া।

উত্তর সিটির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই ভোটার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৭-২৮ তারিখ আসুক না। ওরা ওদের মতো নির্বাচন করতেছে। আগে তো দেখছি, ভোটের দিন পরিবেশ ঠিক থাকে না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক দেখি, তাহলে ভোটের দিন ভোট দিতে যামু।”

ইভিএম নিয়ে এক প্রশ্নে নুরু মিয়া বলেন, “ইভিএম আর কী … মেশিনে ভোট নিবে নাকি … দেখা যাক কী হয়।”

ইভিএম নিয়ে ধারণা না থাকলেও ভোটের দিন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ভোটের পদ্ধতি শেখার অপেক্ষায় আছেন দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আবদুল আউয়াল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের পরিবেশ নিয়ে আমরা কী জানব? যারা রাজনীতি করে হেরা জানব।

”ইভিএম নিয়ে কিছু জানি না। তয় সেন্টারে যায়া দেখব। হেরা ( প্রিজাইডিং অফিসার) দেখায় দিব।”

ঢাকার অলিগলিও এখন ছেয়ে আছে পোস্টারে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

একই ওয়ার্ডের ভোটার হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইভিএম সম্পর্কে আমরা জানিও নাই, শিখিও নাই। ভোটকেন্দ্রে যায়া বুঝতে পারমু, কেমনে দেয়। হয়ত দেখায় দিব। যেভাবে দেখায় দিব, সেইভাবে ভোট দিব আর কি।”

উত্তর সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ভোটার রোমানা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইভিএম নিয়ে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। প্রার্থীরা বাসায় এসে ইভিএম নিয়ে বলে গেছেন। সেভাবেই আসলে ইভিএম নিয়ে জানি।

“যেভাবে ভোট হোক, আমার ভোট ঠিক জায়গায় যেন পড়ে-সেটাই চাই।”

চ্যালেঞ্জের মুখে ইসি

ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়টি নগরবাসীর কাছে পরিচিত করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশনও।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মোট তিনজনকে বাছাই করতে হবে ভোটারদের।

ইসি বলছে, ইভিএমে পছন্দের প্রতীকের পাশে সাদা বোতাম চেপে প্রার্থী বাছাই করতে হয়। এরপর সবুজ বোতামে চাপ দিলেই ভোট নিশ্চিত হয়ে যায়।

ভোটের কাজে সম্পৃক্ত সব প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কেন্দ্র, এর মধ্যে ১৪ হাজার ৬০০ বা তার বেশি ভোটকক্ষ থাকবে। দুই সিটির নির্বাচনে প্রায় ৩৫ হাজারের মতো ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ভোটারদের কাছে ইভিএম পদ্ধতি পরিচিত করানোও ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছি, লিফলেট, বুকলেট ও টিভি বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতেও দেখা গেছে তাদের।

নির্বাচনের আগে সব কেন্দ্রে মক ভোটিংয়ের আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন ইভিএম দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

তিনি জানান, ভোটের আগে ২৫ এবং ২৬ জানুয়ারি প্রত্যেক কেন্দ্র ও পাশের এলাকায় কীভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয় সে বিষয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। ২৮ জানুয়ারি ফাইনাল ‘মক ভোটিং’ হবে।

প্রার্থী ও ভোটারদের অভিযোগ আর শঙ্কা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ”কেউ যদি রিচেক করতে চায়, তাদের আমরা স্বাগত জানাই। আমরা ইভিএম প্রদর্শনীর আয়োজন করব। কারও সন্দেহ থাকলে, তারা এসে দেখতে পারেন।

“আমরা যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি, তাতে আমরা কনফিডেন্ট, কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড কার পক্ষে করা সম্ভব হবে না।”

ইভিএমে ভোট যেভাবে

এ যন্ত্রে আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়। নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন পোলিং অফিসার ভোটার ভেরিফিকেশনের কাজটি করেন।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ডেটাবেইজে ভোটার বৈধ বা অবৈধ হিসেবে শনাক্ত হলে মনিটরের মাধ্যমে তা দেখতে পান পোলিং এজেন্টরা।

ভোটার বৈধ হলে মেশিনে ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।  এ জন্য গোপন কক্ষে থাকা ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হয়।

ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক বেছে নিয়ে ব্যালট ইউনিটের সাদা বোতামে চাপ দিলে ভোট সম্পন্ন হবে।