প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের মাঠে ভোটযুদ্ধ

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামছেন প্রার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2020, 07:46 AM
Updated : 10 Jan 2020, 08:26 AM

১৮ দিনের প্রচার শেষে ৩০ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ। দুই সিটিতে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ মিলিয়ে মোট ৭৫৮ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন এবার।

প্রতীক পাওয়ার আগে ভোটের প্রচারের নিয়ম না থাকলেও বিধি লঙ্ঘন করে আগে থেকেই বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে দেখা গেছে। এ নিয়ে ইসিতে অভিযোগও হয়েছে।

শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রার্থীদের আচরণ বিধি মেনে চলার বিষয়টি ‘কঠোরভাবে’ তদারকি করবেন তারা।

সকালে আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে (এনআইএলজি) উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এবং গোপীবাগের সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে দক্ষিণের রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক বুঝে নেন মেয়র পদের প্রার্থীরা।

মেয়র পদে দুই সিটির ১৩ প্রার্থীর সবাই ইসিতে নিবন্ধিত দলের মনোনীত হওয়ায় যার যার দলীয় প্রতীক নিয়েই তারা লড়বেন। আর কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের মধ্যে ইসিতে নির্ধারিত প্রতীকের তালিকা থেকে বরাদ্দ করছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

মেয়র পদে কার কী প্রতীক

ঢাকা উত্তর সিটি

 

 

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি

 

 

প্রার্থী

দল

প্রতীক

 

প্রার্থী

দল

প্রতীক

আতিকুল ইসলাম

আওয়ামী লীগ

নৌকা

 

শেখ ফজলে নূর তাপস

আওয়ামী লীগ

নৌকা

তাবিথ আউয়াল

বিএনপি

ধানের শীষ

 

ইশরাক হোসেন

বিএনপি

ধানের শীষ

আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল

সিপিবি

কাস্তে

 

সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন

জাতীয় পার্টি

লাঙ্গল

শেখ ফজলে বারী মাসউদ

ইসলামী আন্দোলন

হাতপাখা

 

আব্দুর রহমান

ইসলামী আন্দোলন

হাতপাখা

আনিসুর রহমান দেওয়ান

এনপিপি

আম

 

বাহারানে সুলতান বাহার

এনপিপি

আম

শাহীন খান

পিডিপি

বাঘ

 

আব্দুস সামাদ সুজন

গণফ্রন্ট

মাছ

 

 

 

 

আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ

বাংলাদেশ কংগ্রেস

ডাব

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, “আজ থেকে ভোটের যুদ্ধ চলে যাচ্ছে মাঠে। এই মাঠকে কোনো ক্রমেই আমরা ঘোলাটে করতে দেব না। আমার জীবনে সবসময় অনুরোধ করে আসছি, কখনো ‘নির্দেশ’ কথাটা বলি না। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে বলতেই হচ্ছে।”

নির্বাচন যেন ‘উৎসব’ হতে পারে, সেই চেষ্টা থাকবে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “এটাকে কোনো ক্রমেই সংঘর্ষের রূপ নিতে দেব না। মলিন হতে দেব না।”

আর দক্ষিণের রির্টানিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, “প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে প্রার্থীরা এখন আইন মেনে প্রচার চালাতে পারবেন। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করা যাবে। প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন। সেখানে শুধু নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন।

“কোন ধরনের মিছিল, শো-ডাউন, বড় ধরনের জনসভা ও তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। তবে ঘরোয়া বৈঠকে প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন।"
বাতেন বলেন, অনেক প্রার্থীর পক্ষে আগেই পোস্টার লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদারকি করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের প্রতীক দেওয়া শুরু হয়।এই কার্যক্রম বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

ঢাকা উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৫৪টি পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১৮টি পদে ৭৭ জন ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন।

আর দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৭৫টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৩৫ জন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ২৫টি পদে মোট ৮২ জন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

যা করবেন, যা করতে মানা

>>প্রার্থী বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করতে পারবে, ঘরোয়া বৈঠক করতে পারবে। পথসভা করতে পারবে।

>>কিন্তু বড় শোডাউন করতে পারবে না। রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সভা করা, ব্যানার দিয়ে গেইট করা ব্যত্যয় বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটরা যারা থাকবেন তারা ব্যবস্থা নেবেন।”

>>নির্বাচনী ক্যাম্পে গান বাজানো কিংবা রাস্তা দখল করে সভা সমাবেশ করারও সুযোগ নেই আচরণ বিধিতে।

>>ক্যাম্প থেকে হাই ভলিউম সাউন্ড দিয়ে কোনো নির্বাচনী গান, কিংবা নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। কোনো খাবার বিতরণ করা যাবেনা। সেখান থেকে কেবল ভোটার স্লিপ প্রস্তুত করা, বা পোস্টার বিতরণ করা যাবে না। ভোটার তলিকা যাচাই করা বা এধরনের কাজ করা যাবে।

>>মাইকিং করতে হবে কেবল দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে। এর থেকে এক মিনিটও বেশি করা যাবে না।

>>পোস্টারটা অবশ্যই সাদা কালো করবেন। এর ব্যত্যয় করা যাবে না। নির্ধারিত মাপে করতে হবে। ২২ বাই ১৮ ইঞ্চি। পোস্টার দেওয়ালে সাটানো যাবে না। ঝিুলিয়ে দিতে হবে। ব্যানারও রঙিন করা যাবে না।

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের পক্ষে প্রতীক বুঝে নেন তার প্রতিনিধি তৌফিক জাহিদুর রহমান।

তিনি বলেন, “আজকে থেকে আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হতে চলেছে। যেহেতু তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, তাই আমাদেরকে নির্বাচনী আচরণবিধি খুব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।” 

আর বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রতীক বুঝে নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমরা আজকে প্রতীক বরাদ্দ পেলাম। আজকে উত্তরা থেকে আমাদের নির্বাচনী প্রচার কাজ শুরু হবে। আশা করি উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট হবে।”

উত্তর সিটিতে পিডিপির মেয়রপ্রার্থী শাহীন খান বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা করছি। তবে নির্বাচন উৎসবমুখর হোক এটাই চাই।” 

আর এ সিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ বলেন, “নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবু আমরা শেষ পর্যন্ত থাকব। নির্বাচন যদি আমরা ছেড়ে দিই, তাহলে নির্বাচন উন্মুক্ত হয়ে যাবে। উন্মুক্ত হয়ে গেলে জঞ্জাল বৃদ্ধি পাবে। আমরা তা করতে দেব না।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটার আছেন ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন; আর দক্ষিণে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ৩০ ডিসেম্বর ইভিএমে ভোট দেবেন তারা।