২০২২ সালে দেশে স্থুল জন্মহার বেড়ে ১৯ দশমিক ৩ জন হয়েছে। এই অঙ্ক আগের বছরের তুলনায় বেশি।
Published : 13 Jun 2023, 05:48 PM
দেশে জন্মহার আবারও বাড়ছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যেও এই হার বেড়ে যাওয়ার জন্য কোভিড মহামারীকালে সবার ঘরবন্দি থাকাকে কারণ মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশে স্থুল জন্মহার বেড়ে ১৯ দশমিক ৩ জন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩টি শিশু জন্ম নিয়েছে।
এই স্থুল জন্মহার ২০২১ সালের তুলনায় কিছুটা বেশি। ওই বছর দেশে স্থুল জন্মহার ছিল ১৮ দশমিক ৮ জন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে টানা চার বছর দেশে স্থুল জন্মহার বৃদ্ধি ঘটেছে।
গত বছরের জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে ১৮ দশমিক ৮ জন। ২০২০ ও ২০১৯ সালে জন্মহার ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ১ জন এবং ২০১৮ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৩ জন।
ঢাকার শেরে বাংলা নগরের পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেল্থ উইংয়ের উপপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে শামসুল আলম বলেন, “গত বছর কেন জন্মহার বেড়েছে, এই বিষয়ে আর হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। কোনো গবেষণাও নেই।
“তবে আমার অনুমান, কোভিড মহামারীর সময় দেশের সাধারণ মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরে কাটিয়েছে। একই সময়ে বিদেশ থেকে বেশিহারে প্রবাসীরা দেশে এসেছে। এই দুই কারণে জন্মহার বাড়তে পারে। এই দুটি জন্মহার বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে।”
তবে এটা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।
কোভিড রোগের বিস্তার ঠেকাতে ২০২০ সালের মার্চে লকডাউনে গিয়েছিল গোটা দেশ। তখন ঘর থেকে বের হতেও ছিল মানা। কয়েক মাস ধরে টানা সেই অবস্থা চলে। পরে লকাডাউন শিথিল হলেও ২০২১ সাল জুড়েও মানুষকে ঘর থেকে বের না হতে উৎসাহিত করা হয়েছিল।
বিবিএসের উপপরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, গতবছর সারা দেশে ২ হাজার ১২টি ইউনিট, ৩ লাখ ৬ হাজার ৯৫৪টি খানা এবং ১৩ লাখ ২ হাজার ৭৮৮ জনের উপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালে পরিচালিত জনশুমারি ও গৃহগণনার ভিত্তিতে দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৮ লাখ। এরমধ্যে নারী ৮ কোটি ৬১ লাখ এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪৫ লাখ।
‘বাংলাদেশ স্যাম্পল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ জরিপে বলা হয়, ২০২২ সালে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার (যত জন জন্মেছে তা থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বাদ দিয়ে) প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৩৫ জন। তার আগের বছর ২০২১ সালে এই হার ছিল ১ দশমিক ৩০ জন।
গত বছর প্রতি হাজার প্রজননক্ষম নারীর বিপরীতে প্রজনন হার ছিল ৬৮ জন। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৬৬ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারও কিছুটা কমে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে। আগের বছর এ হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
এরমধ্যে আধুনিক পদ্ধতির জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সনাতন পদ্ধতির ব্যবহার হয়েছে ১ শতাংশ।
আলমগীর হোসেন জানান, ২০২২ সালে স্থুল মৃত্যুহার ছিল (প্রতি হাজারে) ৫ দশমিক ৮ জন।
এরমধ্যে প্রতি হাজার জীবিত শিশু জন্মের বিপরীতে শিশু মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। এই হার ২০২১ সালে ছিল ২২ জন এবং ২০২০ ও ১৯ সালে ছিল ২১ জন।
এর মধ্যে এক মাসের কম বয়সী শিশু মারা গেছে প্রতি হাজারে ১৭ জন। আবার ১ মাস থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে ৮ জন। ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে প্রতি হাজার ১ দশমিক ৮ জনের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী অর্থবছর থেকে আর প্রকল্প নেওয়া হবে না বলে জানান।
তিনি বলেন, এটা সরকারের বাৎসরিক স্বাভাবিক কাজ হিসেবে রাজস্ব বাজেটের আওতায় বরাদ্দ দিয়ে এই জরিপের কাজ পরিচালনা করা হবে।