টিআরপি নামে এই এজেন্টরা আয়কর বিবরণী তৈরিতে সহযোগিতা করবেন। এর জন্য তাদের কোনো টাকা দিতে হবে না করদাতাদের।
Published : 01 Jun 2023, 10:40 PM
আয়কর খাত থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নতুন অর্থবছরে ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপেয়ারার বা টিআরপি এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হবে।
রাজস্ব আদায়ে নিয়োগের মাধ্যমে বেসরকারি এই এজেন্টরা করদাতাদের রিটার্ন প্রস্তুত করে সেগুলো জমা দিতে সহযোগিতা করবেন।
এই সহযোগিতার জন্য এজেন্টদেরকে কোনো টাকা দিতে হবে না করদাতাদের। তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নির্ধারিত হারে কমিশন পাবেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেটে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মাঠ পর্যায়ে আয়কর দিতে সক্ষম ব্যক্তিদের থেকে রিটার্ন দাখিল ও আয়কর আহরণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগের জন্য টিআরপি বিধিমালাও করা হবে।
কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ করে আয়কর আদায় বাড়ানোর জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করার ক্ষমতা ওই ব্যক্তির থাকবে না।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের ন্যায় আশাব্যঞ্জক নয়। বর্তমানে বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত মাত্র ৮ শতাংশের মতো।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশকে উন্নত দেশের দিকে নিয়ে যাওয়ার নেয়ার জন্য কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করা দরকার।
“কর প্রদানে সক্ষম বিপুল জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনতে পারলে কর আহরণের সক্ষমতা ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতা ও কর- জিডিপি অনুপাত বাড়বে।”
বাংলাদেশে বর্তমানে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৮৮ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৩২ লাখ রিটার্ন জমা দিলেও করের পরিমাণ সরকারের আশানুরূপ নয়।
এমন পরিস্থিতিতে উন্নত বিশ্বের মতো প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে টিআরপি বিধিমালা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
কারা হবেন টিআরপি, কী যোগ্যতা প্রয়োজন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী বিধিমালা ২০২৩-এর খসড়া প্রস্তুত করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে এজেন্ট হিসেবে কারা নিয়োগ পেতে পারেন তা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কেউ সরকারি চাকরি করলে রিটার্ন প্রস্তুতকারক বা এজেন্ট হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তাকে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। তাকে টিআইএনধারী হতে হবে এবং রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
তার কম্পিউটার চালনা ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
আগ্রহী প্রার্থীদের এনবিআরে পরীক্ষা দিয়ে রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সনদ নিতে হবে। এনবিআর পরীক্ষা নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও প্রচার করবে।
বিশেষ কিছু পেশাজীবী পরীক্ষা ছাড়াই রিটার্ন প্রস্তুতকারী বা এজেন্ট হতে পারবেন। যেমন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, সাচিবিক বিদ্যায় দক্ষতা অর্জনকারী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী এবং কর আইনজীবী।
কী আর্থিক সুবিধা পাবেন টিআরপি
এনবিআরের খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম তিন বছর ন্যূনতম করের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ওপর ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার ১ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে টিআরপিকে।
চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য ন্যূনতম করের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ওপর ১ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার দশমিক ৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে।
কোনো করদাতাকে পাঁচ বছর এভাবে রিটার্ন জমায় সহায়তা করার পর ষষ্ঠ বছর থেকে আর প্রণোদনা পাবেন না ওই ব্যক্তি বা এজেন্ট। অন্যদিকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান রিটার্ন প্রস্তুতকারীর প্রাপ্য প্রণোদনার ১০ শতাংশ সেবা মাশুল হিসেবে নিতে পারবে।