১ জানুয়ারি থেকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে জানিয়ে গ্রাহকদের এসএমএস দিয়ে জানিয়েছে ব্যাংকটি।
Published : 31 Dec 2023, 07:41 PM
বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ নিয়ে ‘চাপে থাকার’ কথা জানিয়ে এবার ডেবিট কার্ডে বিদেশে নগদ অর্থ উত্তোলন বন্ধ করেছে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল)। তবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নগদ উত্তোলনের বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আনেনি তারা।
২০১৪ সালের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে জানিয়ে গ্রাহকদের এসএমএস দিয়ে জানিয়েছে ব্যাংকটি।
“প্রিয় গ্রাহক, ০১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ইবিএল এর ডেবিট কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে সকল প্রকার ক্যাশ উত্তোলন স্থগিত করা হয়েছে। আপনার ভ্রমণ কোটার মধ্যে পিওএস(পস) এবং ই-কমার্স এর মাধ্যমে যেকোনো বৈধ কেনাকাটা করতে পারবেন,” বলা হয়েছে বার্তায়।
এর ফলে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন ছাড়া কেনাকাটাসহ সব ধরনের পরিষেবা বিল পরিশোধ করতে পারবেন ইবিএল গ্রাহকরা।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে কোনো ধরনের ক্যাশ উত্তোলন করা যাবে না বিদেশের কোনো ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে। এ সিদ্ধান্ত ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।”
গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাবে অর্থ থাকার বিপরীতে দেওয়া হয় ডেবিট কার্ড। হিসাবে থাকা সমপরিমাণ অর্থের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে গিয়ে ডেবিট কার্ডেও ব্যবহার করতে পারেন গ্রাহকরা। বিপরীত দিকে ক্রেডিট কার্ডের হিসাবে টাকা না থাকলেও গ্রাহক একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করার পর থেকেই ব্যয়কৃত অর্থের উপর সুদ যোগ হতে শুরু করে।
অন্যদিকে দেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয়কৃত অর্থ ৪০-৪৫ দিন পরে পরিশোধের সুবিধা থাকে। এই সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করা হলে গ্রাহকের উপর কোনো বাড়তি সুদ বা চার্জ যোগ করে না ব্যাংক।
সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইবিএলের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জিয়াউল করিম বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে চাপ থাকায় খরচ কমানোর সম্ভাব্য সকল দিক খুঁজছে ইবিএল। তারই অংশ হিসেবে বিদেশে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ক্যাশ উত্তোলন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মার্চেন্ট পেমেন্ট বন্ধ থাকবে না।”
এর আগে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সব ধরনের কার্ডে বিদেশের এটিএম বুথ থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকাররা বলছেন, কার্ডে অর্থ তোলার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছেই। কিছু কিছু দেশে তা ‘অস্বাভাবিক’ মনে হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্যাংক।
বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা অনুযায়ী, ভ্রমণ কোটায় একজন বছরে ১২ হাজার ডলার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করতে পারেন। নগদ বা কার্ডে এই অর্থ খরচ করা যায়। তবে ভ্রমণ কোটায় পাওয়ায় বিদেশি মুদ্রার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কার্ড থেকে তোলার সুযোগ রয়েছে।
কাগুজে ডলারের সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্ডে ডলার ব্যবহার করতে উৎসাহ দিয়ে আসছে। স্থানীয় মুদ্রার পাশাপাশি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করারও সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এই পদ্ধতিতে অনুমোদিত কার্ড ‘ডুয়েল কারেন্সি কার্ড’ নামে পরিচিত ব্যাংকিং খাতে।
বর্তমানে দেশে ৪৩টি ব্যাংক এবং একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড পরিষেবা দিচ্ছে। গত অক্টোবর শেষে তাদের ইস্যু করা বিভিন্ন ধরনের কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১২ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। কার্ডে বিদেশি মুদ্রা খরচের পরিমাণও বাড়ছে দিন দিন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে শুধু ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশের বাইরে ৩৭৫ কোটি টাকার সম পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। এটি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে হওয়া মোট খরচের ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ।