মন্ত্রীর মতে, দরিদ্রদের প্রতি ‘এক ধরনের অবহেলা এবং আইনি বৈষম্যের’ কারণে দেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়।
Published : 12 Oct 2023, 10:56 PM
ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন যুগের শাসকদের অবহেলার কারণেই বাংলাদেশে এখনও দারিদ্র্য টিকে আছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, দরিদ্রদের প্রতি ‘এক ধরনের অবহেলা এবং আইনি বৈষম্যের’ কারণে দেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়।
“কিছু কিছু বিধিবিধান আমাদের কিতাবে আছে যেগুলো দারিদ্র্য দূরীকরণে তো সহায়ক নয়ই, বরং তাদেরকে দাবিয়ে রাখার একটা… এর মধ্যে আছে, আমি নিজে দেখেছি।“
মন্ত্রী বলেন, “অতীতের কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকেও আমরা দারিদ্র্যবান্ধব একই ধরনের আচরণ পেয়েছি। মোগল, পাঠান, ব্রিটিশ, পাঞ্জাব, সেন, গুপ্ত- যাই হোক, সবাই একই কাজ করেছেন। এগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে আমাদের ওপর পড়েছে। এ জন্য আমাদের এত দারিদ্র্য।”
এদিন ‘ব্র্যাক এসডিজি কন্ট্রিবিউশন ভলান্টারি রিভিউ ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বিশেষ অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন হোসেন জিল্লুর রহমান।
এমএ মান্নান বলেন, “আমি খুব খুশি হয়েছি, উৎফুল্ল বোধ করেছি যে ব্র্যাক ২০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে উঠিয়ে আনতে পেরেছে। বিশাল একটা কাজ আপনারা করেছেন। ব্র্যাক এটা করতে পেরেছে এটা আমি বিশ্বাস করি। আমরাতো দারিদ্র্যের হারের মোট হিসাব করি। এটা সত্যি সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।
“এরপরও আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে সরাসরি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। উন্নয়ন কৌশলেও পরিবর্তন প্রয়োজন।
দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারে সাফল্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ এবং সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারাটা কৃতিত্বের।”
তবে চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে টিকে থাকা যে ‘কষ্টকর’, সে কথাও স্বীকার করেন মান্নান।
বাংলাদেশ সরকারের কৌশলগত লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ব্র্যাকের কর্মসূচি নিয়ে একটি প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এ অনুষ্ঠানে।
এই প্রকাশনায় এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে ব্র্যাকের মত বেরসকারি সংস্থা এবং সরকারের অগ্রযাত্রার সমন্বয়কে তুলে আনা হয়েছে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ব্র্যাক ১৫টিতে কাজ করছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
সরকারের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন বলেন, “অগ্রগতি বোঝার জন্য আমরা অনলাইনে একটি এসডিজি ট্র্যাকার স্থাপন করেছি। এসডিজিকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
“ব্র্যাক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি সংস্থাগুলোর একটি, যারা সরকারি কৌশলপত্রে উল্লেখিত জাতীয় অগ্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রার আলোকে দুর্গম অঞ্চলে স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে। আমরা সকল বেসরকারি সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এসডিজিতে তাদের অবদানের বিবরণ প্রকাশ করে।”
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এসডিজি-১৬-তে মূলত ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলা হয়েছে এবং এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হল, একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা।
“বাংলাদেশকে অনেকগুলো উদ্বেগ ও বাস্তবতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলো অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করতে পারে না। করোনাভাইরাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের সবার একই রকম অস্তিত্বের সংকট রয়েছে।
“তাই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসাবে আমাদের উচিত সরকার এবং অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে আরো বেশি অংশীদারত্ব গড়ে তোলা, যেখানে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য থাকবে সাধারণ মানুষের কল্যাণ।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯০টি পরিবারের ২০ লাখ ২০ হাজার মানুষকে ব্র্যাক তাদের ‘গ্রাজুয়েশন এপ্রোচ’ দিয়ে অতি-দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। এটা এই সময়ে অতি-দারিদ্র্য নিরসনে জাতীয় অর্জনের ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
এই প্রক্রিয়ায় সফলতার হার ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এর বাইরে একই সময়ে ৩৫ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ব্র্যাক তাদের এক বা একাধিক উদ্যোগের মাধ্যমে সেবা দিয়েছে। দুর্গম এলাকায় দুর্গত ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৯৬টি পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করেছে ব্র্যাক।
একইভাবে ব্র্যাক ১৬টি উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ৫টি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে দেশজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ, মানসম্পন্ন শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা এবং সমন্বিত অন্তর্ভুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করছে। যার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৫টিতে অবদান রেখে চলেছে ব্র্যাক।
উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা; ঋণ দাতা সংস্থা, বেসরকারি খাত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ, অ্যাকাডেমি, গবেষণা সংস্থা এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সেশনে সঞ্চালক হিসাবে ছিলেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোরশেদ, স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ প্রোগ্রামের হেড এস এম মনজুর রশীদ।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে ব্র্যাকের কাজ নিয়ে এটি দ্বিতীয় রিপোর্ট। প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালে।