“বাংলাদেশের অবস্থা এতটা বেগতিক নয় যে, সব শর্ত মেনে ঋণ নিতে হবে,” আইএমএফের ঋণ প্রসঙ্গে বলেন সংগঠনের সভাপতি।
Published : 05 Nov 2022, 09:40 PM
ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশের বেশি না বাড়ানোর আগের দাবি পুর্নব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, এ সীমা তুলে দিলে শিল্পে সক্ষমতা কমবে। দেশের শিল্পের কথা বিবেচনা করেই সুদহার না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করতে হবে।
শনিবার ঢাকার পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপে একথা বলেন তিনি।
দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও শিল্প সচল রাখতে সুদহার না বাড়ানোর যুক্তি দিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ডলার শক্তিশালী করতে সুদহার বাড়িয়েছে; আর সেই ফর্মুলা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করলে হবে না। এতে দেশি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে অর্থ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহারের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের কারণে দেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির এই বাড়তি চাপ সামাল দিতে অর্থনীতিবিদরা ঋণের ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দিয়ে আমানতের সুদহার বাড়াতে মতামত দিচ্ছেন।
আর ঋণ আলোচনা করতে আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সফররত প্রতিনিধি দলও পরামর্শ দিয়েছে বেঁধে দেওয়া সুদহারের সীমা তুলে দিতে।
এমন প্রেক্ষাপটে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম বলেন, “ঋণের সুদহার উঠিয়ে দেওয়ার কথা অনেকেই বলছে, তবে সবাই না। সুদহার বাড়ালেই অর্থনীতিতে চলমান মূল্যস্ফীতিসহ সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। বিকল্প হিসেবে সুদহার না বাড়িয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।”
সুদহার বাড়ানোর পক্ষে যারা বলছেন, তারা কোনো পক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে একেক ধরনের এজেন্ডা থাকে গবেষণা সংস্থাগুলোর। তারা একেকজনের প্রতিনিধিত্ব করে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।”
জ্বালানিতে দেশি কয়লা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করতে হবে। দেশের উন্নয়নে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সহযোগিতা লাগবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গ্যাস ও বিদ্যুৎ এখন বড় ইস্যু। কোভিড মহামারীর সময় সিদ্ধান্ত ছিল শিল্প বন্ধ করা যাবে না। এটা সাহসী সিদ্ধান্ত। চলমান সংকটেও তেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
“গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেলে বিদেশি ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী পণ্য দিতে ব্যর্থ হব আমরা। এর ফলে ক্রেতারা একবার ফিরে গেলে আর পাওয়া যাবে না।“
অর্থপাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু বলেছে, আমদানির আড়ালে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্য দেখানোর প্রমাণ পেয়েছে তারা। আন্ডার ইন ভয়েস ও ওভার ইন ভয়েসের মাধ্যমে অর্থপাচার হচ্ছে। তাদের উচিত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা। তা নাহলে শুধু বাহবা নেওয়ার জন্য মুখরোচক কথা বলা উচিত নয়।”
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি মেটাতে আইএমএফের কাছ থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মতামতও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির সঙ্গে শর্ত নিয়ে দর কষাকষি করতে বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটাতে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হবে। তার মানে এই নয় সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে। বাংলাদেশের অবস্থা এতটা বেগতিক নয় যে, সব শর্ত মেনে ঋণ নিতে হবে।”
সংলাপে ইআরএফ সহসভাপতি এম শফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামসহ উপস্থিত ছিলেন।