এতে রিটার্ন জমা দিলেই যাদের আয়কর যোগ্য আয় থাকবে না তাদের আর কর দিতে হবে না; আগের প্রস্তাবের এমন সংশোধন এনে অর্থবিল পাস হয়েছে সংসদে।
Published : 25 Jun 2023, 10:46 PM
আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিলেই অন্তত ২০০০ টাকা কর দেওয়ার আলোচিত প্রস্তাব থেকে শেষ পর্যন্ত সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; এটি বাদ দিয়েই পাস করা হয়েছে অর্থবিল।
এতে করে রিটার্ন জমা দিলেই যাদের আয়কর যোগ্য আয় থাকবে না তাদের আর কর দিতে হবে না।
রোববার এই প্রস্তাব প্রত্যাহারসহ আরও কিছু সংশোধনীসহ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে অর্থবিল ২০২৩-২৪ পাস করা হয়।
এদিন রাতে অর্থমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে এ বিল পাস করা হয়। এর আগে বিলটির সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়।
এছাড়া শিক্ষার অন্যতম উপকরণ বলপয়েন্ট কলমের ওপর প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে বলপয়ন্টে ভ্যাট আগের মত ৫ শতাংশই থাকছে।
বাজেট প্রস্তাবে বলপয়েন্ট কলমে মোট ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
রোববার বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী কামালের সমাপনী বক্তব্যের পর অর্থবিল-২০২৩ সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করা হয়। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস করা হয়।
অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছিল। সোমবার বাজেট পাসের সূচি রয়েছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বর্তমানের থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না।
এ রেয়াতের পর কারও আয় করযোগ্য হলে তাকে নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম তিন হাজার টাকা আয়কর দিয়ে হয়। আয়কর দাতা ঢাকা ও সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হলে তাকে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা।
রিটার্ন দাখিলে দিতে হবে অন্তত ২০০০ টাকা, প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর
সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত, প্রস্তাব বাজেটে
আর নিয়ম অনুযায়ী কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলেই রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে রিটার্ন দিলেও আয়করযোগ্য আয় না থাকলে কর দিতে হয় না।
রাজস্ব বাড়াতে অর্থমন্ত্রীর অনন্ত ২০০০ টাকা কর প্রস্তাবের পর এ নিয়ে সাধারণের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে তেমনি অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশ্লেষকসহ ব্যবসায়ী নেতাসহ প্রায় সব পেশার মানুষ এমন কর বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদ করেন।
এমন কর আরোপের যুক্তি হিসেবে বাজেট বক্তৃতায় কামাল বলেন, “রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
“এ ধরনের অংশীদারিত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে-এমন সকল করদাতার ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।”
গত অর্থবছর থেকে সরকারি ৩ ডজনের বেশি সেবা গ্রহণে আয়কর বিবরণি বা রিটার্ন দাখিল সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আরও পাঁচ সেবায় তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
পরে বাজেটত্তোর সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি প্রস্তাবিত দুই হাজার টাকার প্রস্তাবিত ন্যূনতম করকে আইন বহির্ভূত, অযৌক্তিক এবং অন্যায্য দাবি করে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। অন্যান্যদের পক্ষ থেকেও এটি প্রত্যাহারের দাবি করা হয়। তবে বিভিন্ন আলোচনায় সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ কর বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে নানান সমালোচনার শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।
অর্থবিল পাসের সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, এবারের বাজেটে প্রতিটি খাতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের এবারের বাজেটের মূল দর্শন- ২০৪১ সালের মাঝে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রেইনচাইল্ড সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন অর্থনীতির কারিগর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি আমাদের বাংলাদেশকে মাত্র ১৪ বছরে ৬০তম অবস্থান থেকে ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
“এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও জ্ঞান-ভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করা।”
আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের অর্থনীতি ভালো আছে। আপনারা আমাদের বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের জন্য বলি- আমাদের বর্তমান বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৪ শতাংশ। এটা অন্য দেশের ২৬১ শতাংশং পর্যন্ত রয়েছে। ফলে বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ঝুঁকি নেই।”
বিলটির ওপর বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, রুস্তম আলী ফরাজী, রওশন আরা মান্নান, কাজী ফিরোজ রশীদ, রেজাউল করিম, শহীদুজ্জামান সরকার।
তাদের অনেকে ব্যাংক খাতের অরাজকতা, কালো টাকা সাদা করা, অর্থপাচার, আর্থিক খাতের নৈরাজ্য নিয়ে বক্তব্য দেন। অর্থবিল ২০২৩ এর ওপর এই সংসদ সদস্যদের আনা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।