সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়, খেলাপির হার ৯.৯৩%।
Published : 22 Nov 2023, 02:42 PM
সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়।
খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে শ্রেণিকৃত ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এই হার ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ ছিল। সে সময় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এ তথ্যর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং দেশের অর্থনীতিবিদরা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাব্কে উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেয়, বাস্তবে তা আরো বেশি। খেলাপি হওয়ার পরে পুনঃতফসিল করা ঋণও খেলাপি, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখায় না।”
খেলাপি হওয়ার পরে গ্রাহক উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থিতিবস্থার আদেশ নিয়ে আসে। ওই ঋণকেও খেলাপি দেখানো হয় না।
আবার কোনো ঋণ খেলাপি হলে অবলোপন করতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংক। অবলোপন বা রাইট অফ হচ্ছে মন্দ মানের ঋণকে ব্যাংকের স্থিতিপত্র থেকে (ব্যালেন্স শিট) বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখা। বর্তমানে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার মধ্যে নিস্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ৭২ হাজার ৭১২টি মামলা। এসব মামালায় আটকা আছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা।
এসব ঋণ খেলাপি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা হিসাবে দেখায় না। এই তথ্য যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে মির্জ্জা আজিজের ভাষ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। তাতে খেলাপির হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
গত জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, খেলাপির হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
তিন মাসের হিসাবে খেলাপির পরিমাণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার ও পরিমাণ না বেড়ে সামান্য কমে আসার পেছনে পুনঃতফসিল সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়াকে কারণ বলে মনে করছেন মির্জ্জা আজিজ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনেকেই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন। আবার কেউ কেউ টাকা পরিশোধ করে খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন নিজেকে, যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এ কারণে কিছুটা কম দেখানো গেছে খেলাপি, এছাড়া এই সময়ে অন্য কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না।’’
ব্যাংক ঋণের সুদ হারে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়ায় তা ১১ শতাংশে উঠেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ব্যাঘাত ঘটছে। মির্জ্জা আজিজের মতে, এ সময়ে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, কিন্তু তিন মাসে ঘটেছে উল্টোটা।
২০১৯ সালের মার্চে দেশে প্রথমবারের মত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছয় অঙ্কের ঘর পেরিয়ে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা হয়েছিল।