কৃষির ছাত্ররা সাধারণ জ্ঞান পড়ায় ব্যস্ত: কৃষিমন্ত্রী

“ইন্টারভিউতে আমি দেখেছি কৃষি বিষয়ক ২০টা প্রশ্ন করলে পাঁচটার উত্তর দিতে পারে না,” বলেন আব্দুর রাজ্জাক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2022, 01:09 PM
Updated : 5 Dec 2022, 01:09 PM

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায়োগিক জ্ঞান চর্চার স্বল্পতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সিলেবাস ও কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তার ভাষায়, “কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা হচ্ছে এখানে পড়াশোনার সঙ্গে মাটি ও মাঠের কোনো সম্পর্ক নেই। ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা পড়াশোনা করে না। তারা শুধু শিট পড়ে, সাধারণ জ্ঞান পড়ে, বিসিএসের প্রস্তুতি নেয়- এটা খুবই হতাশার ব্যাপার।

“আমার পরামর্শ হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তর ও ভিসিদের নিয়ে বসে আপনারা সিলেবাস পরিবর্তনে হাত দিন। মাঠের সঙ্গে সম্পর্কিত পড়াশোনা চালু করুন।”

বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কেআইবি মিলনায়তনে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী রাজ্জাক বলেন, “ইন্টারভিউতে আমি দেখেছি কৃষি বিষয়ক ২০টা প্রশ্ন করলে পাঁচটার উত্তর দিতে পারে না। তাহলে কী পড়াশোনা করে?“

বিভিন্ন কারণে দেশে কৃষি জমি কমে যাওয়ায় এখন অর্গানিক ফসলের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল খাদ্য উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন এই কৃষিবিদ।

“জমি কমে যাচ্ছে। নানাভাবে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। খাবার কোথা থেকে আসবে- এই উদ্বেগ এখন সবার। মানুষের যেমন স্বাস্থ্য আছে, মাটিরও স্বাস্থ্য আছে। ভালো ফলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাটিতে সঠিক মাত্রার সার প্রয়োগ। আমাদের বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে অনেক দুর্বল। কোন সারে কতটা নাইট্রোজেন ও অন্যান্য উপাদন আছে, এটা অনেকেই জানেন না।”

মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে কৃষকদের মধ্যে সার নিয়ে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না বলেও মনে করেন কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ভার্মি কম্পোজ সারে কোন উপাদান কতটা, সেটা আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞই জানেন না। এসআরডিআইকে (মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট) এগুলো নিয়ে গবেষণা করে জনগণকে জানাতে হবে। মাঠে যারা কাজ করে তাদেরকে এসআরডিআই যেন প্রশিক্ষণ দেয়। কীভাবে জমির অর্গানিক ম্যাটার কমে যাচ্ছে, কীভাবে বাড়ানো যায়- এগুলো গবেষণা করতে হবে এসআরডিআইকে। জমির মান অনুযায়ী শ্রেণি বিন্যাস করতে হবে।“

সারের ব্যবহার নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির তাগিদ দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম ডিএপি সারের দাম কমালে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমে যাবে। ডিএপির বার্ষিক ব্যবহার ৭ লাখ টন থেকে বেড়ে ১৫ লাখ টন হয়েছে। ডিএপি সারে ১৮ শতাংশ নাইট্রোজেন আছে। তাহলে ইউরিয়ার ব্যবহার অন্তত ১৮ শতাংশ কমার প্রয়োজন ছিল।

“চাষিকে এটা বোঝাতে হবে যে, যখন ডিএপি সার প্রয়োগ করা হয়, তখন ১৮ ভাগ ইউরিয়া সার কম দিতে হবে। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। এখন ২৫ লাখ টন ইউরিয়া ব্যবহার হচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম বলেন, “আমরা যা খাই, তার ৭০ ভাগ খাবার আসে মাটি থেকে। এতেই মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রাখার গুরুত্ব বোঝা যায়।”

সেমিনার পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার।

দেশের শতকরা ৩৩ শতাংশ জমি অবক্ষয়িত বলে প্রবন্ধে তুলে ধরেন তিনি। তার মতে, টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৫৮ শতাংশ বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। ২০৫০ সালের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হলে বর্তমানের চেয়ে শতকরা ৬০ শতাংশ বেশি ফসল উৎপাদন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এম এ সাত্তার ও কৃষক গোলাম রব্বানীর হাতে 'সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড' তুলে দেওয়া হয়।

বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার পান মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ছাব্বির হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার আদনান বাবু ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করুণা মণ্ডল।

অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ছাড়াও ৪০তম বিসিএস থেকে কৃষি সার্ভিসে নিয়োগ পাওয়া নবীন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. কামারুজ্জামান, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন।