চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংক এ পর্যন্ত মোট ৩৪১ কোটি ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইআরডি।
Published : 07 Jun 2023, 08:06 PM
জলবায়ু সহনশীল কৃষি উন্নয়ন, কৃষিপণ্যে বৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নের দুই প্রকল্পে বাংলাদেশকে প্রায় ৮৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।
বুধবার এ নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির সঙ্গে দুটি চুক্তি করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
ইআরডির সচিব শরিফা খান এবং বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল্লায়ে সেক চুক্তিতে সই করেন। উভয় প্রতিষ্ঠান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চুক্তি সইয়ের কথা জানিয়েছে।
দুই প্রকল্পের মধ্যে ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স (পার্টনার)’ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হবে ৫০ কোটি ডলার; যা বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্যপণ্যে বৈচিত্র্য, উদ্যোক্তা তৈরি, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাজার সম্প্রচারণ ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতায় সহায়তা করবে।
অপরদিকে সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৩৫ দশমিক ৮ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্ব ব্যাংক। এ প্রকল্পের আওতায় সড়কে সুরক্ষার উন্নয়ন ঘটানো এবং দেশের নির্বাচিত ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়ক ও জেলা সড়কগুলোতে দুর্ঘটনাজনিত হতাহতের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরে ৩০ বছর মেয়াদে এ দুই প্রকল্পে ঋণ দেবে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)। বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স (পার্টনার)’ প্রকল্পটি মানসম্মত কৃষি কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
একই সঙ্গে জলবায়ু সহনশীল জাতের ও বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন ও চাষাবাদের মাধ্যমে টেকসই ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদনেও ভূমিকা রাখবে।
এটি ডিজিটাল কৃষি সরঞ্জাম, খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা বাড়ানোর মাধ্যমে উদ্যোক্তা ও পরিষেবাগুলোতে প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে।
পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাড়ানো এবং বৈশ্বিক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশের কৃষি প্রতিষ্ঠান ও নীতি আধুনিকায়নে সহায়তা করবে।
অপর প্রকল্পের আওতায় সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, যেটিকে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রথম ‘ডেডিকেটেড রোড সেফটি প্রজেক্ট’ বলা হচ্ছে।
এটির আওতায় দেশের বাছাই করা ঝূকিপূর্ণ মহাসড়ক ও জেলা সড়কগুলোতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও আহতের পরিমাণ কমিয়ে আনতে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
প্রকল্পের আওতায় দুটি জাতীয় মহাসড়ক এন-৪ (গাজীপুর-এলেঙ্গা) এবং এন-৬ (পাবনা-রাজশাহী) এ পরীক্ষামূলক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, সড়কে বিভিন্ন চিহ্ন ও প্রতীক বসানো, পথচারীদের সুবিধা, গতি আইন মেনে চলাচল ও জরুরি সেবার উন্নয়ন ঘটানো হবে।
এছাড়া সড়কে যানবাহন চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে চলাচলের নিয়ম মানাতে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতার আধুনিকায়ন ঘটানো হবে।
অন্যদিকে দুর্ঘটনা পরবর্তী সেবার জন্য টোল ফ্রি নম্বরের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে। ওই দুটি জাতীয় মহাসড়ক সংলগ্ন নির্বাচিত জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন ঘটানো হবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের যে লক্ষ্য রয়েছে, সেটি পূরণে অবদান রাখবে এই দুই প্রকল্প।
ইআরডির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৪১ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে; যা কোনো এক বছরে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের সর্বোচ্চ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি।