ইউক্রেইন যুদ্ধ: বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমাল এডিবি

এডিবি বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়তে পারে, যা আগে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছিল ম্যানিলাভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2022, 07:56 AM
Updated : 21 Sept 2022, 07:56 AM

মহামারীর ধাক্কা সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় বাংলাদেশ গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি পেলেও ইউক্রেইন যুদ্ধের সঙ্কটে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে এনেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি।

বুধবার প্রকাশিত এডিবির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের সেপ্টেম্বর আপডেটে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়তে পারে, যা আগে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছিল ম্যানিলাভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থা।

এডিবি বলছে, যুদ্ধের জেরে রপ্তানিতে প্রভাব, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এ অর্থবছর  প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসবে।

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে গত এপ্রিলের প্রাক্কলনে ধারণা দিয়েছিল এডিবি। তবে শিল্প ও সেবা খাত প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারায় এবং ভালো রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।  

সরকারি হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে তাদের এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এ সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এবং জ্বালানি সংকটের কারণে এ বছর কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ হবে না। সরকারি বিনিয়োগেও ধীরগতি দেখা দেবে।

এ অবস্থায় সরকারকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিকে বলছে এডিবি।

এক প্রশ্নের উত্তরে এডিমন গিন্টিং বলেন, “চলমান মন্দায় পৃথিবীর অনেকে দেশের রপ্তানি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাংলাদেশের রপ্তানির তেমন একট ক্ষতি হবে না বলে আমাদের মনে হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পন্য হচ্ছে পোশাক।

“সংকটে পড়লে মানুষ বিলাসী পণ্য বর্জন করতে পারে, কিন্তু মৌলিক পোশাকের চাহিদা প্রায় ঠিক থাকবে। তাই বাংলাদেশের রপ্তানিতে খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব নাও পড়তে পারে।”

তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির বহুমুখীকরণ হচ্ছে, রেমিটেন্স বাড়ছে; বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ এবং দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অবদানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আগামী তিন বছর এডিবি বাংলাদেশকে প্রায় দুই থকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দেওয়ার রূপরেখা রয়েছে। এর মধ্যে প্রতি অর্থবছরে ২০ শতাংশ হারে বা প্রায় ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দেওয়া হবে।”

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সু চ্যান হং বলেন, ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির চাপে সব ধরনের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে।

এডিবি বলছে, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরকার এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিলেও বৈশ্বিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরে এই হার আরও কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। গত অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

সু চ্যান হং বলেন, বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি ‘ভালোই’ মোকাবিলা করেছে।

এসব সিদ্ধান্তের ফলে চলতি অর্থবছরে আমদানি কিছুটা কমবে এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি গত অর্থবছরের জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তাতে রিজার্ভ কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে বলে মনে করছেন এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট।

তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ হলে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিও দীর্ঘায়িত হবে। ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং প্রতিকূল আবহাওয়াকে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকির জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে।

সু চ্যান হং বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির অনিশ্চয়তার এই সময়ে বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে পারে বাংলাদেশ।”

আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ডিজিটাল উদ্যোক্তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এজন্য ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বমানের ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

সিঙ্গাপুর ডিজিটাল ব্যবসার উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বমানের ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিত করলেও ওই মানের পরিবেশ এশিয়ায় আর কেউ পারেনি বলে পর্যবেক্ষণ দেন এডিবির বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, “যে দেশ তথ্য প্রযুক্তির উদ্যোক্তাদের জন্য যত বেশি উন্নত পরিবেশি তৈরি করবে, সেই দেশ বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজারে তত বেশি এগিয়ে যাবে।”