আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বলেও আশ্বস্ত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
Published : 12 Mar 2024, 08:59 PM
স্বেচ্ছায় একীভূতকরণের পদক্ষেপ নিতে ব্যাংকগুলো আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
এ সময়ের মধ্যে কে কোনটির সঙ্গে একীভূত হবে তা ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঠিক করতে পারবে। তা না হলে মার্চে এ প্রক্রিয়া শুরু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বলেও আশ্বস্ত করেন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
‘দুর্বল’ ব্যাংকের তালিকা নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘স্বতন্ত্র নীরিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া মূল্যায়ন প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মার্চ মাসে মার্জার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম মূল্যায়ন করা হবে। তখন আমরা ঠিক করে দেব কে কার সঙ্গে একীভূত হবে।’’
ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক মানের ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পিসিএ’ ও ‘রোডম্যাপ’ ব্যাংক একীভূতকরণের ভিত্তি হবে। এটির ভিত্তিতে দেখা হবে কোন ব্যাংকের ‘আর্থিক স্বাস্থ্য’ কেমন। পিসিএ ও রোডম্যাপ বলে দেবে কে কার সঙ্গে মার্জার হতে পারে।
মুখপাত্র বলেন, ‘‘ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে নানা ধরনের স্পেকুলেশন হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংক একীভূত হোক না কেন, এতে আমানতকারীদের স্বার্থের কোনো হানি হবে না, সেখানে আমানতকারীদের স্বার্থ শতভাগ রক্ষা করা হবে।’’
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র কোন কোন ব্যাংক দুর্বল সেটির একটি ধারণাও দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের বরাতে ব্যাংকগুলোর লাল, হলুদ ও সবুজ তালিকা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়েও কথা বলেন তিনি।
দুর্বল ব্যাংকের বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকগুলোর শেয়ার দর দেখলেই বোঝা যায় কারা খারাপ।
“খারাপ ব্যাংক কারা, তা তাদের ব্যালেন্সশিটে তো ইতোমধ্যে হিট করেছে। শেয়ারবাজারে তা মূল্যায়ন করে রেখেছে। শেয়ারের দাম যা, সেখানে কিন্তু আর্থিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটে গেছে। মার্কেট অলরেডি ডিটারমাইন্ড করে ফেলেছে আপনার ভ্যালু কত। তারপরও আমরা নতুন করে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে মূল্যায়ন করব।’’
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ১৮টির শেয়ার দর ১২ টাকার নিচে। ১০টির দর অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে। সেই তালিকায় প্রথম প্রজন্ম থেকে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকও রয়েছে।
তবে শেয়ারদর কত হলে ব্যাংকটি খারাপ হিসেবে ধরা হবে তা সুস্পষ্ট করেননি মুখপাত্র।
কয়েক বছর ধরে ডজন খানেকের বেশি ব্যাংক মূলধন ঘাটতি ও তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সমস্যাগ্রস্ত এসব ব্যাংককে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জার) করতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেন।
খারাপ ব্যাংকের জন্য দায়ী কে?
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও নানা কারণেই ব্যাংক খারাপ হতে পারে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল বলেন, ‘‘যাদের কারণে ব্যাংক খারাপ হয়েছে, তাদের দায়ও দেখা হবে। পরিচালকদের শাস্তির বিষয়েও সময়ে সময়ে বিস্তারিত গাইডলাইন দেওয়া হবে।’’
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। সেই তালিকায় কোন ব্যাংক কোন শ্রেণিতে পড়েছে তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় সম্প্রতি।
মোট ৫৪টি ব্যাংকের গত চার বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে ৯টি লাল, ২৯টি সবুজ ও ১৬টি সবুজ শ্রেণিতে জায়গা পায়।
ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদ মান, ব্যবস্থাপনা, আয়, তারল্য ও বাজার ঝুঁকির মতো ছয়টি আর্থিক সূচকের ভর করে ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এসব সূচক ব্যাংকের সার্বিক মান র্নিধারণী অবস্থান ক্যামেলস রেটিং তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষায় লাল তালিকাকে খুবই খারাপ, হলুদ তালিকায় থাকলে মধ্যম মানের ও সবুজ তালিকায় থাকলে নিরাপদ বা সবল ব্যাংক হিসেবে ধরা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মেজবাউল হক বলেন, ‘‘প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য করা হয়। এটি ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থান ও মান প্রকাশ করে না। একটি বিভাগের তৈরি এ প্রতিবেদন কোনো ব্যাংকের পুরো অবস্থান বলে দেয় না।’’
ব্যাংকের মান যাচাইয়ের একটি মাত্র ঘোষিত মানদণ্ড হচ্ছে সেটির নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘ব্যালেন্সশিট বলে দিবে ব্যাংকের মান কেমন। ক্যামেলস রেটিংই বলে দেয় কোন ব্যাংক কেমন।’’
প্রতিবেদনটি প্রকাশযোগ্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ব্যাংকগুলোর নানা সূচক থাকে। দেশিয় ও আন্তর্জাতিক কোনো ইস্যু তৈরি হলে কোন ব্যাংকের উপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তার একটি আগাম ধারনা পেতে এটি করা হয়।’’
ব্যাংক খাতে সুদহারের পরিবর্তন হচ্ছে সময়ে সময়ে। এ জন্যও গবেষণা করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব কেমন ব্যাংকিং খাতে হতে পারে তাও আগাম ধারনা নেওয়া হয়। কিন্তু এটি চূড়ান্ত মানদণ্ড নয়।’’