নিউ ইয়র্কে মিলার হাইওয়ে নির্মাণের মধ্য দিয়ে যে যাত্রার সূচনা হয়েছিল, প্রায় একশ বছর পর তেমন সড়ক দেখছে ঢাকা।
Published : 05 Oct 2023, 06:28 PM
শহুরে যানজট আর অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা কমিয়ে চলাচলে স্বস্তিকর যাত্রার অভিজ্ঞতা দিতে নির্মাণ করা হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে মিলার হাইওয়ে নির্মাণের মধ্য দিয়ে যে যাত্রার সূচনা হয়েছিল, প্রায় একশ বছর পর ২০২৩ সালে এসে তেমন সড়ক দেখছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
শনিবার দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে নতুন এক যাত্রার শুরুতে জেনে নেওয়া যাক দেশে দেশে নানা ধরনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রূপ আর নির্মাণযজ্ঞের পেছনের গল্প।
মিলার হাইওয়ে, বিশ্বের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
নিউ ইয়র্ক সিটির এলিভেটেড ওয়েস্ট সাইড হাইওয়ের নাম শুরুতে ছিল নিউ ইয়র্ক বারার তখনকার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মিলারের নামে।
নিউ ইয়র্ক সিটি জাদুঘরের তথ্য বলছে, বিশ্বের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯২৯ সালে, একটি একটি খুলে দেওয়া হয় ১৯৩০ সালে।
সেই সময়ের নির্মাণ কারুকাজের ছোঁয়া ছিল ওই এক্সপ্রেসওয়েতে। কিন্তু ট্রেইলরের মতো বড় যানবাহনের চলাচল অসুবিধা আর ভেঙে পড়ার ঝুঁকির কারণে এক পর্যায়ে এই এক্সপ্রেসওয়ের পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে একটি ভারী ট্রাকের চাপে এই হাইওয়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। সমালোচনার মুখে সেই সময়ের এই হাইওয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৭ সালে শুরু হওয়া এই ধ্বংসযজ্ঞ চলে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত।
গিনেস বুকে থাইল্যান্ডের বুরাফা উইথি এক্সপ্রেসওয়ে
বাং না এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত থাইল্যান্ডের বুরাফা উইথি এক্সপ্রেসওয়ে। ২০০০ সালে চালুর পর এটি বিশ্বের ‘সবচেয়ে লম্বা সড়ক সেতু’ হিসাবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বাং না থেকে বাং পেকং পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার বা সাড়ে ৩৩ মাইল এলাকা যুক্ত করেছে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি চালু হয়। ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ১৮ লাখ টন কনক্রিট।
বর্তমানে বুরাফা উইথি এক্সপ্রেসওয়ের সাড়ে চার কিলোমিটার বর্ধিতাংশের নির্মাণ কাজ চলছে; শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালে।
ভারতের জয়পুরে মেট্রোরেলের নিচে উড়ালসড়ক, বিশ্বে প্রথম
সবার উপরে চলছে দ্রুতগতির মেট্রোরেল, নিচের সড়কের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি উড়ালসড়ক; বিশ্বে প্রথম এমন সড়ক দেখেছে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুর শহর।
২০১৫ সালের মে মাসে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালসড়কের উদ্বোধন করা হয়। দুই লেইনের এই সড়ক গেছে জয়পুরে গোপালপুরা বাড়ি থেকে সুশীলপুরা পর্যন্ত।
২ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক নির্মাণ করেছে জয়পুর মেট্রোরেল করপোরেশন (জেএমআরসি)।
সুকা, মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের যানজটের দুর্ভোগ কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সুনগাই বেসি-উলু কেলাং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (সুকা)।
সাড়ে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিন লেইন এবং দুই ধাপে যান চলাচলের সুযোগ (ডুয়েল ক্যারিজওয়ে) থাকা এই সড়ক যুক্ত করেছে শ্রী পেতালিং ও উলু কেলাং এলাকাকে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপ এবং চলতি বছরের জুনে দ্বিতীয় ধাপ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
চলতি পথে ৬০টি আবাসিক এলাকার পাশাপাশি কুয়ালালামপুরের প্রধান প্রধান হাইওয়েগুলোকে সংযুক্ত করেছে সুকা। এর মাধ্যমে শহরের যানজট ৩০% কমানোর প্রত্যাশা করছে নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ।
মেট্রো ম্যানিলা স্কাইওয়ে, ফিলিপিন্স
ফিলিপিন্সের রাজধানীতে তিন ধাপে নির্মিত মেট্রো ম্যানিলা স্কাইওয়ে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
প্রায় ৪২ কিলোমিটারের বেশি এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯৯৯ সালে; সর্বশেষ ২০২০ সালে চালু হয়েছে তৃতীয় ধাপের সড়ক।
ম্যানিলা শহরের প্রায় পুরোটাকে ছুঁয়ে যাওয়া এই এক্সপ্রেসওয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে সংযুক্ত করার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেসওয়েকে সংযুক্ত করেছে।
শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ এলিভেটেড টোল রোড, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং প্রথম ডাবল ডেকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হয়েছে আবুধাবীর ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদের নামে।
প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই এলিভেটেড টোল সড়ক পূর্ব জাকার্তার সঙ্গে পশ্চিম জাভার কারাওয়াংকে যুক্ত করেছে।
২০১৭ থেকে ২০১৯ সালে নির্মাণের পর যান চলাচলের জন্য ওই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হয়। ‘জাকার্তা-চিকামপেক ২ এলিভেটেড টোল রোড’ থেকে ২০২১ সালে এর নাম পরিবর্তন করা হয়।
১১০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত হয় টোল সড়ক। সরকারি হিসাবে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ যানবাহন এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে থাকে।
সাংহাইয়ের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চোখ ধাঁধানো অট্টালিকার সাংহাই শহরে রয়েছে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
চীনের সবচেয়ে বড় ও বাণিজ্যিক এই শহরকে অন্য এক্সপ্রেসওয়ে ও সাধারণ সড়কের সঙ্গে যুক্ত করেছে এসব উড়াল সড়ক।
এর মধ্যে প্রধান সড়কগুলো হলো ইনার রিং এলিভেটেড রোড, মিডল রিং রোড, আউটার রিং রোড, নর্থ-সাউথ এলিভেটেড রোড, ইয়ান্যান এলিভেটেড রোড, হুমিন এলিভেটেড রোড এবং ইশিয়ান এলিভেটেড রোড রয়েছে।