পাঁচ বছর প্রস্তুতিকালীন সময় শেষে ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে।
Published : 09 Jun 2024, 10:28 PM
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে গিয়ে বাংলাদেশ যেন নতুন কোনো ফাঁদে পড়ে না যায়, সেজন্য কাঠামোগত পরিবর্তনে পরিকল্পনা সাজানোর পরামর্শ এসেছে একটি কর্মশালা থেকে।
এক্ষেত্রে আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস) বা ‘মসৃণ উত্তরণ কৌশল’ সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডি ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ, ইউএনডেসা এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে নতুন করে তৈরি হতে চলা ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন এসটিএস সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক এম এ রাজ্জাক।
বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-এর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের অধিকাংশ মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়। ফলে পাঁচ বছর প্রস্তুতিকালীন সময় শেষে ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে।
জাতিসংঘের নিয়মানুসারে উত্তরণের প্রস্তুতকালীন সময়ে বাংলাদেশকে একটি (স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি) মসৃণ উত্তরণ কৌশল (এসটিএস) প্রণয়ন করতে হবে।
ইআরডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউএন ডেসার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির খসড়া প্রস্তুতকরণের কাজ শুরু করেছে। ওই খসড়া প্রস্তুতকরণের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মত বিনিময়ের লক্ষ্যে কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, “সঠিক নীতি, পদ্ধতি ও কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারবে।”
‘কর্মঠ জনগণ’কে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গতিশীল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী, তার সঙ্গে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জনবান্ধব সরকার।”
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, “মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর লক্ষ্যে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটিতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের উপর জোর দেওয়া উচিত। কৌশলপত্রটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।”
ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, “স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটি দেশের নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে হবে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, “স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস বলেন, “জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত রূপান্তর ও পরিবেশগত মান সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
অনুষ্ঠানে এসটিএস বা মসৃণ উত্তরণ কৌশলের সংশ্লিষ্ট কর্মপরিকল্পনার উপর আলোকপাত করেন এসটিএস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পরামর্শক কুয়োং মিন গুয়েন।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করতে গিয়েও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এলডিজি গ্রাজুয়েশন বা উত্তরণ পরবর্তী পরিস্থিতির প্রসঙ্গটি বার বার এসেছে। বক্তব্যে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের কর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার আভাস দেন তিনি।