তিনি বলছেন, বাজেটে নির্বাচনি ইশতেহারের অগ্রাধিকারগুলো বাস্তবায়নে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেওয়া হবে।
Published : 01 Jun 2024, 02:02 PM
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় খুব বেশি না বলে দাবি করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ঋণ নেওয়া হলেও ‘ঋণনির্ভর উন্নয়ন’ শব্দটিতেও তার আপত্তি আছে।
গত ১ মার্চ মন্ত্রিসভায় নতুন করে যে ৭ জন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের একজন ওয়াসিকা। গত তিন মেয়াদে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম নারী অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
আগামী ৬ জুন আগামী অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেটি প্রণয়নে যুক্ত ওয়াসিকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থনীতির নানা দিক নিয়েই। তবে প্রধান্য পেয়েছে বাজেট।
তিনি বলেছেন, বাজেটে নির্বাচনি ইশতেহারের অগ্রাধিকারগুলো বাস্তবায়নে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেওয়া হবে। বাজেট ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিকল্পনাই তারা নিয়েছেন।
মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় রাখতে সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। আবার প্রবৃদ্ধিও সাড়ে ৬ শতাংশ ধরা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিপরীতুমখী অবস্থা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে বাজেটে?
উত্তর: উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণত দুই উপায়ে রোধ করা হয়, একটি ভোক্তার চাহিদা কমিয়ে এবং অন্যটি বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে।
মুদ্রানীতির প্রচলিত পদ্ধতি মূলত ভোক্তার চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করে। প্রণোদনা ও ভর্তুকির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে উৎসাহ দেয় রাজস্ব নীতি। এর আওতায় কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে চাহিদা কমিয়েও মূল্যস্ফীতি কমানো প্রচেষ্টা জোরদার করা যায়।
মুদ্রানীতির আওতায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন শিথিল করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি রেট বৃদ্ধির মাধ্যমে সংকোচনশীল মুদ্রা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মে ২০২৪ নাগাদ বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদ হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের ৮ মে থেকে বাজারভিত্তিক সুদ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতি সুদ হার বাড়ানো হয়েছে।
রাজস্বনীতির আওতায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধন, বাজার মনিটরিং, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জরুরি আমদানি।
সরকার ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সংযমের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জমি অধিগ্রহণ, গাড়ি ক্রয়, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সার্বিক বাজেট ঘাটতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রকৃত ঘাটতির পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কৃষি উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারে নিয়মিত ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে দাম বাড়তি থাকায় গত এক বছরে এই খাতে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
অতি মুনাফার লোভ বন্ধ করতে সরকার বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তদারকিতে বিশেষ দল কাজ করছে। পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিলে আমদানির মাধ্যমে তা উত্তরণের প্রচেষ্টা একটি প্রচলিত পদ্ধতি। সরকার এ পদ্ধতি অবলম্বন করছে।
অন্য যে সব বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের মূল্যের তুলনা করে সরবরাহ চেইনের ত্রুটি নির্ণয় করা।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং এবং স্টোরেজ বাড়ানোর জন্য সরকারি এবং বেসরকারি খাতে উদ্যোগ গ্রহণ করা, খুচরা এবং পাইকারি বাজার মনিটরিং জোরদার করা, আমদানি ব্যয়ের সঙ্গে বাজার মূল্যের সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টাও চলছে। স্বল্প আয়ের জনগণের জন্য সুরক্ষার পরিসর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিনা বা স্বল্প মূল্যে খাদ্য বিতরণ,ফ্যামিলি কার্ডের মত কার্যক্রমসমূহ চলমান রয়েছে।
সরকারে নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেটে জোর কোথায়? কোন দর্শনকে সামনে রেখে আগাচ্ছে সরকার?
নির্বাচনি ইশতেহারের অগ্রাধিকারগুলো বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাজেট ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী রাখা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাশ্রয়ী, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে।
‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করার রূপরেখা থাকবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চালন করা হবে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষি পুনর্বাসনে সহায়তা প্রদান এবং সার, সেচ ও বীজে প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত থাকবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম সুসংহতকরণ এবং নিম্ন-আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা হবে প্রস্তাবিত বাজেটে।
বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখা এবং বৈদেশিক রিজার্ড পুনর্গঠনও আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা, কৃষি, শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এগুলো বরাবরের মত আমাদের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে থাকবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভ নিয়ে তো মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা আছে।
আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। সরকার অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই ঋণের পরিমাণ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে আইএমএফ কর্তৃক যে থ্রেশল্ড লিমিট দেওয়া আছে, অর্থাৎ বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ৪০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না, আমাদের ঋণ জিডিপির অনুপাত তার চেয়ে অনেক কম (১৫.৭ শতাংশ)। তাই এই বিষয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।
আমরা ঋণনির্ভর উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি কিনা?
না, আমরা ঋণনির্ভর উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি না। আমাদের ‘ডেবট-জিডিপি রেশিও’ বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেক কম। আমাদের ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা অনেক আছে। আমাদের পেমেন্ট রেকর্ডও ভালো। বাংলাদেশ কখনো কোনো পেমেন্টে ডিফল্ট করেনি। ‘ঋণনির্ভর উন্নয়ন’ কথাটি বলা ঠিক না।
জ্বালানিতে ভর্তুকি থেকে বের হয়ে সরকারের লক্ষ্যটা কী?
জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয়ের যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে তার ফলে জ্বালানি তেলের উপর ভর্তুকি কমে আসবে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে যে চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবিলায় শিল্প ও রপ্তানি খাতকে প্রস্তুত করতে ভর্তুকি যৌক্তিকভাবে সমন্বয় করা হতে পারে।
সরকার প্রত্যেক বছর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেট বরাদ্দ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা এবং মৈলিক চাহিদা পূরণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল খাদ্যশস্য সংগ্রহ, বিতরণ, মজুদ, প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ, খাদ্য ভর্তুকি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৬ হাজার ৯১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। আগের বছর খাদ্য ভর্তুকির প্রকৃত পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ২১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বর্তমানে রাজস্ব আহরণের যে ধারা তার চেয়ে অনেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে নতুন অর্থবছরে। লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু অর্জন সরা সম্ভবও হচ্ছে না। এ অবস্থায় আয়-ব্যয়ের বিশাল ব্যবধান পূরণ হবে কীভাবে?
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তিন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে; কর ব্যবস্থার ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, কর-জাল সম্প্রসারণ এবং রাজস্ব প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি।
আদায় বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান কর ব্যবস্থার আধুনিকায়নে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল এমএলটিআরএস প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আয়কর আইন, ২০২৩ সংসদে অনুমোদন হওয়ার পর তা কার্যকর করা হয়েছে।
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং যথাযথ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর আইন ও তদাধীন প্রণীত বিধি-বিধান সহজীকরণ করা হয়েছে।
কর প্রদান সহজ করতে এনবিআর ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম (ই-পেমেন্ট) পদ্ধতি চালু করেছে। সামগ্রিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি রাজস্ব/ফি ইত্যাদি সরাসরি কোষাগারে জমাকরণের মাধ্যম হিসেবে অটোমেটেড চালান (এ-চালান) পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে এ-চালান পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব শাখায় এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে যে কোনো স্থান থেকে অনলাইনে রাজস্ব/ফি জমা করা যাচ্ছে।
উৎসে কর কাটা সহজ করার পাশাপাশি কর ব্যবস্থাপনায় আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদার করতে ই-টিডিএস (ইলেক্ট্রনিক ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স) চালু হয়েছে।
খুচরা পর্যায়ের ভ্যাট আদায় এবং ফাঁকি রোধে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (এফইডি) ও সেলস ডেটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) উন্নয়নের কাযর্ক্রম গ্রহণ করেছে এনবিআর। ক্রমান্বয়ে তিন লাখ এফইডি/এসডিসি মেশিন স্থাপনের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কর সুবিধা দেওয়া হবে? এবার করের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে…
এটা তো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছ থেকে জানতে হবে। রাজস্ব আহরণের বিষয়টি তাদের এখতিয়ার। আমিও শুনেছি, এটিতে গতবারের মতই এবারও কিছুটা ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। তবে রেটটা আমি এখন বলতে পারছি না।
আইএমএফের ছায়া কতটুকু থাকছে বাজেটে?
আইএমএফ কিন্তু আমাদের বাজেট কী হবে তা বলে দেয় না। তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপের মূল বিষয়বস্তু থাকে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, তা নিয়ে। যেমন, আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত অনেক দেশের তুলনায় কম। সেটা বাড়াতে হলে কী করা যেতে পারে সেটা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এই আলাপের ভিত্তিতে এবং যৌথ সম্মতির প্রেক্ষিতে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, আর্থিক খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ মকাবিলায় আরও কার্যকর প্রস্তুতি নিয়েও তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধির ধীর গতি, ভতুর্কি কমানোর চাপ, বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ- এসব বিবেচনায় আমরা কোন পথে রয়েছি?
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তার ফলে ভোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদির উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এবং এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে।
তবে যেহেতু মূল্যস্ফীতিই এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং সাধারণ মানুষকে এর চাপ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দেয়া প্রয়োজন, সেহেতু আমরা এই মুহূর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি হলো কি না তা নিয়ে খুব একটা ভাবছি না।
তবে আমাদের সংকোচনমূলক পদক্ষেপ সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশ হবে বলে পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে। বৈশ্বিক মানদণ্ডে কিন্তু এ হারকে বেশ উচ্চ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আমাদের কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কিন্তু হচ্ছে, সরকারি বিনিয়োগও বাড়ছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত নীতিকৌশল জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন ও মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল দ্রব্যের আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ, আমদানি পণ্যের প্রকৃতিভেদে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে মার্জিন নির্ধারণসহ বিভিন্নরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে তা কোনোরূপ বাধা তৈরি করছে না।
তবে টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পরিবর্তন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ বাবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান- পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে আসলে এবং বৈদেশিক উৎসে ঋণের সুদহার কমে আসলে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এর ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্টের ঘাটতিও কেটে যাবে বলে আশা করা যায়। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরায় শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে আসবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কেটে যাবে।