“এখানেতো আস্থা হারাবার কোনো বিষয় নাই। আমরা যদি এভাবে চাষ করতে পারি, আমাদের ফসল উৎপাদন দ্বিগুণ-তিনগুণ হবে।”
Published : 02 May 2024, 06:56 PM
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজের গ্রামে সমবায় পদ্ধতিতে যে চাষাবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করছেন, তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আগ্রহের কথা বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সমবায় পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে, কমবে খরচ। অনাবাদি জমির পরিমাণও কমে আসবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের আওতায় তিনি একটি সমিতি করেছেন। তিনি ওই সমিতির উপদেষ্টা। নিজেদের ৯ বিঘা জমিও দিয়েছেন সমবায়ের আওতায় চাষাবাদের জন্য। সমিতির আওতায় যুক্ত হয়েছে মাছ চাষ।
সরকারপ্রধান বলেন, “অনেক অনাবাদি যদি চাষাবাদের আওতায় চলে আসছে। আমি যখন করলাম, আশেপাশের কৃষকরাও উৎসাহিত হল। তারাও কিন্তু নিজেরা চাষ শুরু করে দিয়েছে। নিজেরাই আবার নিজেদের জমি পরিষ্কার করেছে।
“আমাদের ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দুটি মেশিন আমি কিনে দিয়েছি সেখানে। কার জমি কতটুকু, ফসল বিক্রি করে সে অনুযায়ী টাকাটা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।”
নিচু জমিতে চাষের মাছ বিক্রি করে পাওয়া আট লাখ মালিকদের মধ্যে বণ্টন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “মাছ বিক্রি করে ৮ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। কৃষাণ-কৃষাণি যারা শ্রম দিয়েছে, তা ভাগ পেয়েছে।
“আমি আমার ভাগে এক লাখ টাকা পেয়েছি। আমি নিজের এলাকায় করেছি। এটা করে আমি মডেল হিসাবে দাঁড় করাব।”
বঙ্গবন্ধুর সমবায় কৃষি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে করা এক প্রশ্নে তার বড় মেয়ে বলেন, “আমরা যদি যান্ত্রিকীকরণ করতে চাই, তাহলে একটানা বড় জমি লাগবে। ছোট খণ্ড খণ্ড জমিতে করতে পারব না।
“সে কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, আমাদের যে আইল আছে, সেই আইলগুলিকে যদি জোড়া দেওয়া হয়, তাহলে ফরিদপুরে জেলার সমান একটা চাষ উপযোগী জমি বের হয়ে আসবে। সেজন্য তিনি এই ব্যবস্থাটা নিয়েছিলেন। আপনারা যদি স্মরণ করতে পারেন, তিনি কিন্তু কৃষি যান্ত্রিকীকরণের কথা বলতেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি জমির মালিকানা যার তারই থাকবে। উৎপাদন হলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী ফসলের ভাগ পাবে। এখনতো হচ্ছে এভাবে চাষ।
“সমলয় চাষটা হচ্ছে, এটা সমবায়ের মতই। একইসাথে চাষ করে যার যার জমির অংশে সে ভাগটা নিয়ে নিচ্ছে। কাজেই এখানেতো আস্থা হারাবার কোনো বিষয় নাই। আমরা যদি এভাবে চাষ করতে পারি, আমাদের ফসল উৎপাদন দ্বিগুণ-তিনগুণ হবে।”
এমন চাষের মাধ্যমে লাভবান হলে মানুষ আস্থা হারাবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। জমির এলাকায় অনুপস্থিত মালিকও বাইরে থেকে ফসলের ভাগিদার হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে, সেকথাও বলেন।
কীভাবে উৎপাদন বাড়বে, সেই ধারণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে চাষ করতে পারলে ফসল উৎপাদনটাও বাড়বে। তাছাড়া সারের ব্যবস্থা, উন্নতমানের বীজের ব্যবস্থা, ফসল ফলানো ও ঘরে তোলা- সব কিছু সমবায়ের মাধ্যমে হবে।
“এটা হলে খরচ নিজেকে করতে হচ্ছে না। কারণ ওই ফসলের থেকে একটা অর্থ থাকবে, বা সরকারের কাছে থাকবে- সেটা পরবর্তী চাষের কাজে ব্যবহার করা হবে। খরচ লাগবে না, ফসলের ভাগটা পাবে। সেভাবেই আমরা কিন্তু এটা করতে চাচ্ছি। যেটা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু করতে দেওয়া হয়নি। যদি এটা হত, তাহলে আমাদের দেশে খাদ্য ঘাটতি আর থাকত না।”
‘কিছু লোক বাজারে কারসাজি করে’
‘অতি মুনাফার লোভে’ বাজারে ‘কৃত্রিমভাবে’ দাম বাড়ানোর চেষ্টা নজরে আসার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সাধারণত ধরা হয়, সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়ে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, সরবরাহ ঠিকই আছে কিন্তু দাম বাড়ছে।
“সেখানে কিছু কিছু লোক কারসাজি করে, এটা ঠিক। মজুত করে রাখে, নষ্ট হয়ে যায়, পচে যায়, তবুও দেখা যায় মজুত করে রেখে কৃত্রিমভাবে একটা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। এই বিষয়টা কিন্তু আমাদের নজরে এসেছে।”
দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধকে আরেকটি কারণ হিসাবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারপরও একটা জিনিস বলব, ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং কৃষ্ণ সাগর দিয়ে জাহাজ আসতে পারবে না- নানা কারণে যেসব জিনিস আমাদের আমদানি করতে হয়, সেগুলোর দাম বাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প পদক্ষেপও আমরা নিই।
কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর পেছনে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘ষড়যন্ত্র’ থাকার সন্দেহ নিয়ে ওই প্রশ্নে সরকারপ্রধান বলেন, “এখানেতো কিছুটা… আন্দোলনের নামে যখন আপনি মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেন না, তখনতো ষড়যন্ত্রটাই স্থান পায়। সেখানে কিছু কিছু চক্রান্তেরতো চেষ্টা করা হয়।”
তিনি বলেন, “কিছু আছে ব্যবসায়ী, অতি মুনাফার লোভে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, যেটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে আমি মনে করি। তবুও আমাদের নজরদারি আছে, নজরদারি থাকবে। আর সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই, আপনারাও নজরদারিতে রাখেন।
“সামান্য একটু বাড়লে সেটাকে খুব বড় করে দেখানো, এটা একটু বেশি বেশি মনে হয়। আজকে মূল্যস্ফীতি বিশ্বব্যাপী, কোথায় নাই? সে তুলনায় বাংলাদেশতো অনেক নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কারণ, পণ্য উৎপাদন করে সরবরাহের ধারাটা ঠিক রেখেছি।”
রোজার মাসে দরিদ্র পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল এবং পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে অল্প দামে ৫-৬টা পণ্য দেওয়ায় ‘হাহাকার’ ছিল না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বিশেষ করে, গ্রামেতো দ্রব্যমূল্য নিয়ে এত বেশি হাহাকার নাই। তবে হ্যাঁ, সুনির্দিষ্ট বেতনে যারা চলে তাদের জন্য একটু কষ্ট, এতে কোনো সন্দেহ নাই।
“তারপরও এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা… পারিবারিকভাবে যাতে অল্প দামে পণ্য কেনা যায়, সেই ব্যবস্থাটা করে দিচ্ছি। এতে মানুষ কিছুটা দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছে।”
এবার ভালো ফলনের মধ্যে কৃষকের সঠিক দাম পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ধানের দাম সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে আর সেটাই থাকবে। চালের ব্যাপারে… চালের দাম কখনো বাড়ে, কখনো কমে। আগে যারা একেবারে মোটা চাল খেত, তারা এখন মাঝারিটা খায়, তখন আবার ওটার দাম বাড়ে।
“এই জায়গাটা খুব সন্ধিক্ষণে থাকতে হয়, দাম যদি বেশি কমে কৃষক তার ফসল ফলানোটা আগ্রহ হারাবে আর যদি কৃষক ন্যায্য দামটা পায়, সে দ্বিগুণ ফসল ফলাবে। আবার দাম বাড়লে পরে, যারা সুনির্দিষ্ট পয়সায় চলে তাদের কিনে খেতে কষ্ট হবে।”