“আমরা যখন এই সাফল্য উদযাপন করছি, তখন বর্তমান ফেডারেল প্রশাসনের বেপরোয়া শুল্ক নীতির কারণে আমাদের অগ্রগতি হুমকির মুখে রয়েছে,” বলেন গভর্নর।
Published : 25 Apr 2025, 01:52 PM
ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি জাপানকে ছাড়িয়েছে; তাতে মার্কিন অঙ্গরাজ্যটি এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছে।
বিবিসি লিখেছে, গভর্নর গ্যাভিন নিউসম আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ইউএস ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিসের নতুন তথ্য তুলে ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪ দশমিক ১০ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যেখানে জাপানে এর পরিমাণ ৪ দশমিক ০১ ট্রিলিয়ন ডলার। মার্কিন অঙ্গরাজ্যটি এখন কেবল জার্মানি, চীন এবং সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে রয়েছে।
নিউসমের ভাষ্য, “ক্যালিফোর্নিয়া কেবল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না - আমরা গতিপথ ঠিক করছি।”
বিবিসি লিখেছে, নতুন ওই পরিসংখ্যান এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন গভর্নর নিউসম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প ও কৃষি উত্পাদনে ক্যালিফোর্নিয়ার বড় হিস্যা রয়েছে। তাছাড়া এটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও বিশ্বের বিনোদন শিল্পের কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম দুই সমুদ্র বন্দরেরও অবস্থান সেখানে।
ট্রাম্পের যে নীতির কারণে বৈশ্বিক বাজার ও বাণিজ্যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, সেই শুল্কনীতি আরোপের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা করেছেন বিশিষ্ট ডেমোক্রেটিক ও ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিউসম।
বিবিসি লিখেছে, উচ্চ শুল্কের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যে প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আর চীনের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির সঙ্গে ‘সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আসা চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন এবং তার পাল্টায় মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে চীন।
ট্রাম্প প্রশাসন গত সপ্তাহে বলেছিল, বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে নতুন শুল্ক যুক্ত হলে কিছু চীনা পণ্যের উপর শুল্ক ২৪৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
নিজের অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন নিউসম।
“আমরা যখন এই সাফল্য উদযাপন করছি, তখন বর্তমান ফেডারেল প্রশাসনের বেপরোয়া শুল্ক নীতির কারণে আমাদের অগ্রগতি হুমকির মুখে রয়েছে।
“ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি জাতিকে শক্তি যোগায় এবং এটিকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।”
ট্রাম্প যুক্তি দেখিয়েছেন, তার বাণিজ্য যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কর আরোপের পরে কেবল ‘খেলার মাঠকে সমান’ করছে।
ট্রাম্প তার বাণিজ্যযুদ্ধকে এমনভাবে তুলে ধরছেন যে- যুক্তরাষ্ট্রের উপর বছরের পর বছর ধরে যে শুল্ক আরোপ হয়েছে, সেটিতে যৌক্তিক অবস্থায় নেওয়া।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উৎসাহিত করতেই এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটি তার অর্থনৈতিক কার্যপ্রণালীর একটি প্রধান খুঁটি, সেই সঙ্গে সুদের হার কমাতে চান তিনি, যাতে করে আমেরিকানদের ঋণের ব্যয় কমে।
নতুন তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ২৯ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার, চীনের ১৮ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার এবং জার্মানির ৪ দশমিক ৬৫ ট্রিলিয়ন ডলারের পেছনেই রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া। ওই দেশগুলোর তুলনায় ক্যালিফোর্নিয়ার প্রবৃদ্ধি যে বেশি তাও পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
জন্মহার হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জাপানের অর্থনীতি চাপে রয়েছে; তাতে শ্রমশক্তি সংকুচিত হচ্ছে এবং সামাজিক সেবার খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে আইএমএফের পূর্বাভাসে জাপানের প্রবৃদ্ধি আরও কমানো হয়েছে। সংস্থাটির ধারণা, শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারণার চাইতেও ধীরে সুদের হার বাড়াবে।