“যেসব লক্ষ্য বাধ্যতামূলক ছিল, তার সবই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্জন সম্ভব হয়েছে।”
Published : 04 Dec 2024, 01:45 AM
‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায়’ রেপো হিসেবে পরিচিত নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ পরামর্শ দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে ঢাকা সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধি দল।
সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বসে আইএমএফের প্রতনিধিদল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা শিখা বলেন, “বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের অর্থছাড়ের আগে প্রতি ত্রৈমাসিকে আইএমএফ থেকে বিভিন্ন শর্তের অগ্রগতি পর্যালোচনায় করা হয়। চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে তাদের একটি প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। প্রথম দিনে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে তারা কী করতে চায় সেসব বিষয় তুলে ধরেছে।”
বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে ঢাকা এসেছে আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। এর নেতৃত্বে আছেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
মুখপাত্র বলেন, “নিট রিজার্ভসহ আইএমএফের যেসব লক্ষ্য বাধ্যতামূলক ছিল, তার সবই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না হওয়ায় তারা নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।”
সকাল ১০টায় মুদ্রানীতি ও গবেষণা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। বৈঠকে তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানতে চান।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, সেটি জানতে চেয়েছে আইএমএফ। তাদেরকে কয়েক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়াতে করহ্রাস ও টিসিবির আওতায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করার কথা অবহিত করা হয়।
“তারপরও কেন মূল্যস্ফীতি কমছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে আমরা বলেছি, দেশে বড় আকারের বন্যা হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতাও পণ্যমূল্য বাড়াতে প্রভাব ফেলেছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতেও পণ্যমুল্যের দাম বেড়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সকাল সাড়ে ১১ টাকায় ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক করে আইএমএফের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান। বৈঠকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার দেওয়ার কারণ জানতে চায় প্রতিনিধি দল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আমরা যে টাকা দিলাম, বাজারে এটার প্রভাব কী, এ ধরনের ধার দেওয়ার বিষয়টি রেজুলেশনে আছে কিনা, এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত রাখা আছে কিনা, আদায়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আছে কিনা, টাকার সঠিক ব্যবহারে শর্তের ধরনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
“এর জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আন্তব্যাংক থেকে যে ধার দেওয়া হয়েছে, তার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে। এছাড়া টাকা ছাপিয়ে যে তহবিল দেওয়া হয়েছে, তার বিপরীতে প্রমিশনারি নোট এবং রফতানি বিল জামানত হিসেবে নেওয়া হয়েছে।”