দেশ-বিদেশের প্রায় ১২২টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে অনলাইন সভার পর এই তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Published : 17 Sep 2024, 09:50 PM
সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণপত্র খোলার পরেও সেসব পেমেন্ট বকেয়া (ওভারডিউ) রয়েছে, সেগুলোর বিল আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক; এমনই সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেছেন এর মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
মঙ্গলবার দেশ-বিদেশের প্রায় ১২২টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে অনলাইন সভা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সভার পর মুখপাত্র শিখা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বিদেশি ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করতেই এই সভার আয়োজন করা হয় বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
মুখপাত্র শিখা বলেন, “সভায় ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু ওভারডিউ পেমেন্ট রয়েছে এবং সরকারের কাছেও তাদের কিছু পাওনা রয়েছে। তারা জানতে চেয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার কীভাবে এগুলো ক্লিয়ার করবে।”
“গভর্নর ব্যাংকগুলোকে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৮০০ মিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ইন্টারব্যাংক মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এনার্জি, সার পেট্রোলিয়ামের মত অগ্রাধিকার খাতগুলোর ইমপোর্ট পেমেন্ট ক্লিয়ার করছে।”
চলতি মাসে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার বিক্রি করা হয়নি। সরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি এলসি খোলার জন্য যে ডলারের চাহিদা রয়েছে, তা আন্তঃব্যাংক থেকে সরবরাহ করা হবে।
শিখা বলেন, “গভর্নর আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ ওভারডিউ পরিশোধ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ব্যাংকের সঙ্গে ক্লায়েন্টের যে সম্পর্ক, সেটি অত্যন্ত নিবিড়। এটা এক বা দুই মাসের জন্য হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় পড়েছে, এটা সত্য।
“কিন্তু অতীতেও আমাদের খেলাপি হওয়ার কোনো রেকর্ড নাই, বর্তমানেও আমরা মনে করছি; আমাদের যে ওভারডিউ রয়েছে, সেগুলোও আমরা পরিশোধ করতে পারব যদি তারা (বিদেশি ব্যাংকগুলো) আমাদের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবসা অব্যাহত রাখে।”
সভায় উপস্থিত একজন বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রায় প্রতিদিনই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এখানে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশি অনেক ব্যাংক অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করায় আমাদের ট্রেড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তাই গভর্নর বিদেশি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের ফরেক্স সিচুয়েশনও অবহিত করা হয়েছে তাদের।”
বিদেশি এতগুলো ব্যাংকের সঙ্গে এবারই প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো গভর্নর সভা করেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন এই এমডি।
তিনি আরও বলেন, “এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে গভর্নর বলেছেন, ক্রলিং পেগের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ রেটকে বাজারভিত্তিক রেটের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ক্রলিং পেগও থাকবে না। বাজারের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে যে এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারিত হবে, সেভাবেই লেনদেন হবে।”