নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সবসময় জনগণের চাওয়া পূরণ করা যায় না মন্তব্য করে তিনি।
Published : 09 Feb 2025, 07:59 PM
অন্তর্বর্তী সরকারের এ সময়ের মধ্যে আর্থিক খাত ও ব্যাংকগুলো ঠিক করায় নজর দেবেন বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার রাজনৈতিক দল এসে করবে, এমন অভিমতও দিয়েছেন তিনি।
রোববার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স (বিএসআরএফ) কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের চিত্রও তুলে ধরেন।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “শর্টে আমার ফোকাস হল ফ্যাইন্যান্সিয়াল সেক্টর, ব্যাংকগুলো ঠিক করা। বাজে ব্যাংক আছে, বোর্ডের ঝামেলা আছে, ওগুলো ঠিক করা।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, একদিকে খেলাপি ঋণ ১৬ শতাংশ। কোন ব্যাংকে যেন ৮০ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়েছে।
তার সময়ে ব্যাংক খাতের খেলাপী ঋণের পরিমাণ তুলে ধরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমার সময় কত টাকা ছিল ডিফল্ট? ২৮ হাজার না ২৯ হাজার কোটি টাকা। আজকে ওরা বলে আড়াই লাখ কোটি টাকা। তো এখন আপনার ডিপোজিটের টাকা ফেরত দিতে হবে না?।”
গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অস্থির অর্থনীতিকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে এখনও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ধীর গতি রয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতিতে টালমাটাল ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ রদবদলসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে অস্থিতিশীলতার প্রভাব রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা।
৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে বলেছে।
সেটা করতে গিয়ে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে শতাধিক পণ্যে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, শুল্ক বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে এনবিআর।
ভ্যাট বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভ্যাট না বাড়িয়ে বিকল্প ছিল না। তাৎক্ষণিক কর বাড়ানোর সুযোগ ছিল না।
“১২ হাজার কোটি টাকা খুব বেশি নয়। পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়ে গেছে, সেই টাকা কোথায় পাব, কোথা থেকে আসবে?”
নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সবসময় জনগণের চাওয়া পূরণ করা যায় না মন্তব্য করে তিনি।
“আমাকে এখন বলা হয়েছে- অনেক অর্থনীতিবিদ, অনেকেই, বেশিরভাগই আমার ছাত্র, সব ট্যাক্স কমিয়ে দেন। সব ভ্যাট কমিয়ে দেন। ইনকাম ট্যাক্স বাড়ান। রাজস্ব বাড়ান। সামনে সামনে হলে বলতাম, রাজস্ব বাড়াব কীভাবে, বলো তো?”
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভ্যাট কমিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ঠিক আছে, ভ্যাটের চাপটা একটু কমানো দরকার। আয়কর হয়ত একটু বাড়বে। শুল্ক কমানো হবে। আবার এদিকে বলা হচ্ছে, আপনারা রাজস্ব বাড়ান। যখন বলা হয় যে বাংলাদেশে রাজস্ব খাতে কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। তখন বলে যে হ্যাঁ এটা বাড়ানো উচিৎ।
তিনি বলেন, “অর্থনীতি এখন মোটামুটি ব্যালান্সে চলে এসেছে, পুরোপুরি এসেছে এটা দাবি করব না।”