১১ মাসের যে প্রবণতা, সে হিসাবে জুনে আদায় বাড়াতে হবে তার তিন গুণ। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ মনে করেন, এটা সম্ভব।
Published : 30 Jun 2024, 06:44 PM
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরকে সংশোধিত যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেটি পূরণ করতে হলে জুনে তাদের আদায় করতে হবে ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকার।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী এনবিআরকে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলেন। পরে তা সংশোধন করে ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস (জুলাই-মে) শেষে এনবিআরের রাজস্ব আহরণ হয়েছে তিন লাখ ২৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আদায় হয়েছে সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকার মত। অর্থাৎ শেষ মাসে এই ১১ মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ টাকা আদায় করতে হবে।
অবশ্য এই ১১ মাসে এনবিআর তার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে, এমনও না।
প্রথম ১১ মাসে এই আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস খাত থেকে খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এনবিআর পিছিয়ে কেবল ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।
এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে ৯৯.৫৮ শতাংশ।
শেষ মাসে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্য আগেই ঠিক করে রাখা আছে ৮৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। সেখান থেকে তাদের আদায় বাড়াতে হবে দেড় শতাংশের মতো।
শেষের মাসে ৮৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করে লক্ষ্যামাত্রা পূরণ সম্ভব কি না, এই প্রশ্নে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষের মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত আহরণ অস্বাভাবিক না।
“এনবিআরের চিরন্তন অভ্যাস, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোম্পানিদের থেকে অনেকসময় আগেই আহরণ করে নেয়। সেটি জুলাই-অগাস্টে সমন্বয় করে।“
১১ মাসের তুলনায় শেষ মাসে এত বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিসয়ে তিনি বলেন, “এটি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা। এনবিআর এভাবেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যেটি তারা অর্জন করতে পারবে। আমাদের দেখতে হবে, পূর্বের লক্ষ্যমাত্রার (বাজেটে ঘোষিত) কতটুকু অর্জন হয়েছে। সে হিসেবে দেখা যাবে, অর্থবছর শেষে ঘাটতির পরিমাণ অনেক।”
আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি
অর্থমন্ত্রী ২০২৩ সালের জুনে সংসদে দেওয়া বাজেট প্রস্তাবে শুরুতে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছিলেন। পরে তা ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর চাপে কর ছাড় কমানোসহ নানা কারণে এই অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণ আগের তুলনায় বাড়লেও ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত আয় করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।
এই ১১ মাসে রাজস্ব আদায়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আয়কর খাত। এই খাতে আদায় বেড়েছে ১৮.০৯ শতাংশ, মূল্য সংযোজন করে বেড়েছে ১৬.৩৫ শতাংশ এবং কাস্টমসে বেড়েছে ৯.৪৬ শতাংশ।
এনবিআরের পূর্বের রাজস্ব আহরণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কর প্রশাসন সাধারণত লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশের মত আহরণ করতে পারে। সে হিসেবে, এবার রাজস্ব আহরণ অনেক বেড়েছে এবং কর্মকর্তারা মনে করেন, এই অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছে পৌঁছবে এনবিআর।
এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মইনুল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বছর আমরা আহরণের তুলনায় আদায় করেছি বেশি বলতে হবে। আমরা আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে ফাঁকি কমিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে যেসব বকেয়া ছিল, সেসব বারবার আন্তঃবিভাগীয় যোগাযোগ বাড়িয়ে আমরাই আদায় করেছি।
“আমরা মনে করি এ বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও খুব কাছাকাছি চলে যাবে। আশা করি, অন্য শাখা না পারলেও ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আর যেহেতু, আইএমএফের বেঁধে শর্ত আরও কম, সেটি আশা করছি পূরণ হবে।“
সরকার সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হলেও আইএমএফ এর শর্ত অনুযায়ী এই অর্থবছরে আহরণ করতে হবে ৪ লাখ ৫০০ কোটি টাকা।
আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর শর্তে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ।
পরের দুই অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট এবং ০.৭ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সেখানে।
কোন খাতে কত আহরণ
এনবিআরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা বেশি আহরণ হয়েছে।
এ সময়ে এ খাতের জন্য লক্ষ্য ছিল ৯২ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। বিপরীতে আহরণ হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৫৪ কোটি টাকা।
এই সময়ে ভ্যাটে লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। আহরণ হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়েছে এখনও চার হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।
তবে, জুন মাসে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) পূর্বের মূসক বকেয়ার ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করায় এ খাতে আহরণ বাড়বে।
এ ছাড়া আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে ঘাটতির পরিমাণ আট হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। এ খাতে আহরণ হয়েছে ৯১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৫৫ কোটি টাকা।