ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে বলে আসার পর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়েছে সরকার।
Published : 10 May 2015, 08:24 PM
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ কমিয়ে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
এতদিন এ সঞ্চয়পত্র কিনলে ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে সুদ দিত সরকার। এ কারণে অনেকেই সঞ্চয়পত্রে আগ্রহী ছিল।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল বলছেন, উচ্চ সুদের হার দেখে এই সুযোগ ধনীরাই নিয়ে আসছিলেন।
রোববার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো হয়েছে বলে জানান।
তিনি বলেন, “সুদের হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে।
“সে কারণেই আমরা এটাকে কমানোর (রিভিউ) সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে আমরা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়িয়েছিলাম। সেটা আর রাখা সম্ভব হল না।”
সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান অর্থমন্ত্রী। গড়ে দেড় থেকে দুই শতাংশ করে কমেছে প্রতিটি সঞ্চয়পত্রে সুদের হার।
পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদ বা মুনাফা ছিল ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ সুদ দেওয়া হত। আর তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় ও ব্যাংক মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সুদহার ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। আট মাসে এর নিট বিক্রি দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে বিক্রির শীর্ষে থাকা তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের বিক্রি দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ১ হাজার ৯৭০ কোটি, পোস্ট অফিসের মেয়াদি সঞ্চয়পত্র ১ হাজার ৪০৪ কোটি এবং ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড ২৫৯ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ২৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের আসল-সুদ বাবদ ৮ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার।
ফলে সঞ্চয়কারীদের নিট বিনিয়োগ অর্থ্যাৎ সরকারের এ খাতে ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ৯ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরে। তবে আট মাসেই তার দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে।
ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশি উৎসের পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকেও ঋণের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে এ ঋণ নেওয়া হয়। ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের বেশিরভাগ ঋণই সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হয়।