আরও দুটি প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্ত করে অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 07 Jan 2015, 05:37 PM
আগের ছয়টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হল মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াটের আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে ‘ফাস্ট ট্রাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি’র তৃতীয় সভায় অনুষ্ঠিত হয়।
সভাশেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
গত বছরের জানুয়ারিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ওই মাসেই ছয়টি প্রকল্পকে অগ্রাধিকারের তালিকায় এনে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
আগের ছয়টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপালে কয়লাভিক্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।
পদ্মা সেতু প্রকল্প
২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান প্রেসসচিব। এর আগে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে ৩০ শতাংশ ও ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। এতে ব্যয় হবে ২৫ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে।
সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ ৩০ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ ২২ শতাংশ, সার্ভিস এলাকা নির্মাণ কাজ ১৫ শতাংশ, মূল সেতু নির্মাণ কাজ এক দশমিক ৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।
এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ৯৯ শতাংশ, পুনর্বাসন কার্যক্রম ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের তদারকি চলছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
৫ হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের জুন পরর্যন্ত। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে এক হাজার ৮৭ কোটি নয় লাখ টাকা।
২০১১ সালের নভেম্বরে পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে একটি ‘সহযোগিতা চুক্তি’ সই করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, জনশক্তি উন্নয়ন ও আইনি কাঠামো তৈরিসহ বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা দেবে রুশ সরকার।
চুক্তির আওতায় রূপপুরে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থাকবে।
সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ান ফেডারেশনের এ পর্যন্ত তিনটি চুক্তির কাজ শুরু হয়েছে এবং চতুর্থ চুক্তির কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রথম চুক্তির আওতায় সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন, পরিবেশের প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা প্রতিবেশ বিশ্লেষণ (প্রোভাবিলিস্টিক সেফটি অ্যানালাইসিস রিপোর্ট)-এর কাজ এরই মধ্যে শতভাগ শেষ হয়েছে।
দ্বিতীয় চুক্তির আওতায় জরিপ/স্টাডি ও নকশার কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং তৃতীয় চুক্তির আওতায় প্রায়ারিটি কনস্ট্রাকশন পাইওনিয়ার বেস ও ইরেকশন বেজ-এর কাজ ১০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র
বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ মালিকানা ও উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র; যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা)।
৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্রের মধ্যে প্রথমটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি এর ছয়মাস পর চালু হবে বলে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য ৪৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। মাটি ভরাট কাজ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলমান রয়ছে। জিও টেকনিক্যাল জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। পশুর নদীতে ক্যাপটিাল ড্রেজিংয়ের ডিপিপি নৌ পরবিহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
মেটোরেল
২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেলের আংশিক অংশ ২০১৯ সালের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোকিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দ ও দখল পাওয়া গেছে বলে সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে।
প্রকল্পের জিও টেকনিক্যাল জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী জুলাইয়ে ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষ হবে।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে জুলাই ২০১২ থেকে ২০২৪। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদশে সরকার দেবে পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা; বাকি টাকা দেবে জাইকা।
এলএনজি টার্মিনাল
বহু প্রতীক্ষিত এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তিতে ‘অনুস্বাক্ষর’ করেছে পেট্রোবাংলা, যে টার্মিনাল থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে আমদানি করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টার্মিনাল নির্মাণে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাস্ট্রা অয়েল অ্যান্ড এক্সিলারেট কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে পেট্রোবাংলা। এলএনজি টার্মিনালটি অ্যাস্ট্রা অয়েল বিওওটি ভিত্তিতে নির্মাণ করবে।
সভার কার্যপত্র উল্লেখ করা হয়েছে, অনুস্বাক্ষরতি চুক্তিটি নীতিগত অনুমোদনরে জন্য পুনরায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হবে।
গভীর সমুন্দ্র বন্দর
কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে জাপানের প্যাসিফিক কনসালট্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক টেকনো ইকোনোমিক স্ট্যাডি করা হয়েছে।
সভার কার্যপত্র উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পটি প্রাথমকিভাবে পিপিপি ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত থাকলেও আগ্রহী বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় সরকার টু সরকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে আগ্রহী দেশ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ পরীক্ষা-নিরীত্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, গভীর সমুদ্র বন্দর করার আগ্রহ প্রকাশ করে জাপান ‘আন-অফিসিয়ালি’ প্রস্তাব দিয়েছে।
মাতারবাড়ি ৬০০x২ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প
এ প্রকল্পরে মাধ্যমে ৬০০ মেগাওয়াটের দুইটি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, চ্যানেল ও জেটি নির্মাণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন এবং শহর ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলা হবে।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য ১৫০০ একর জমি অধগ্রহণ করা হয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা (৪.৬ বলিয়িন ডলার)। এরমধ্যে সহায়তা ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা (৩.৭২ বলিয়িন ডলার)। স্থানীয়ভাবে আসবে ৭ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।
জেইকার সহায়তার এ প্রকেল্পের প্রথম ইউনিট ২০২২ সালের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রেস বলেন, “মাতারবাড়িতে ধাপে ধাপে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করা হবে।”
পায়রা বন্দর
২০১৩ সালের অক্টোবরে পটুয়ালিতে একটি সমুদ্র বন্দর হড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রীসভা।
সমুদ্রবন্দরটি রাবনাবাদ চ্যানেলে হলেও শান্তির প্রতীক পায়রার নামে এর রাখা হয়েছে। প্রকল্পের বিভিন্ন ধরনের কাজ এগিয়ে চলছে।