আন্দোলনরত রাজনীতিকদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে একদল ব্যবসায়ী।
Published : 01 Jan 2015, 08:32 PM
বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে তার কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসে এ অনুরোধ জানান।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ও যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচার বন্ধ করতে সাবেক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন করছে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে দলটির হরতালের দ্বিতীয় দিনে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যায় প্রতিনিধি দলটি।
এমসিসিআই সভাপতি নাসিম মঞ্জুরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন নয়জন।
বৈঠকে নাসিম মঞ্জুর বলেন, “আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নির্ভর করে। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই সহিংসতা হবে না, অবরোধ হরতাল হবে না।
“ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন করব অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাজনীতি করুন। আমরা ২০১৩ সালের মতো কিছু চাই না। অর্থমন্ত্রীকে বলব, আপনারা আন্দোলনরতদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসুন।”
এমসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, “স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের যে কোনো উদ্যোগকে আমরা সমর্থন করি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ভূমিকা আশা করি।”
অর্থমন্ত্রীর কাছে দেওয়া লিখিত সুপারিশেও এ বিষয়ে মতামত দিয়েছে তারা।
সেখানে তারা বলেছে, “ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার কোনো নীতি নিলেও ব্যবসায়ীরা সেই আইন এবং আইন বাস্তবায়নে সরকারকে সমর্থন করবে।”
অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেন, তিনি মনে করেন না আগামীতে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে।
“আমি মনে করি, কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা হবে না। এছাড়া বাংলাদেশের ইকোনোমি ভেরি ডায়নামিক। আশা করি ভালো চলবে।”
দেশি-বিদেশি কোনো ধরনের বিনিয়োগই কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যাচ্ছে না মন্তব্য করে ঋণের সুদ হার কমানোর পরামর্শ দেন নাসিম মঞ্জুর।
তিনি সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত বা বয়সী নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা করেই সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমিয়ে আনা দরকার।”
তিনি জ্বালানি তেলের দাম কমাতেও বলেন মন্ত্রীকে।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরান টি রহমান বলেন, “জমি পাওয়া উদ্যোক্তাদের এখন একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সরকার যেসব মিল-কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে সেখানে এখনও অনেক জমি রয়েছে অব্যবহৃত। সেগুলোকে নতুন করে বিন্যাস করা যেতে পারে।”
ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে নালিশ করে মন্ত্রীকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা থেকে সরে যাচ্ছে। অনেক ছোট ছোট বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। যে কারণে ব্যাংক ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসায়ও সমস্যা হচ্ছে।
“আমি ব্যাংকের বোর্ডে বসি, আবার ব্যাংকের গ্রাহকও। দুটো জায়গা থেকেই আমার মনে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মনোযোগী হচ্ছে না।”
তিনি ফরেন এক্সচেঞ্জ এ্যাক্ট-১৯৪৭ কে যুগোপোযোগী করা, এসএমই’র সংজ্ঞা পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেন।
নিহাদ কবীর বলেন, “এসএমইতে ফোকাস করার কথা বলা হলেও মূলত ছোট ছোট শিল্প তা পাচ্ছে না। আমাদের দেশে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোই মুলত মিডিয়াম সাইজের প্রতিষ্ঠান। যে কারণে এসএমইর সুবিধা তারা নিচ্ছে। এজন্য ছোট আর বড় এরকম করা ভালো। আর মিডিয়াম রাখতে হলে তা আরও স্পেসিফিক করা দরকার।”
সদস্য আখতার মতিন চৌধুরী বলেন, “মন্ত্রণালয়ের সাথে দপ্তর, অধিদপ্তরের সমন্বয় না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।”
মামুন রশীদ বলেন, “সরকার গ্যাস উত্তোলনে ফ্লোটিং গ্যাস টার্মিনাল স্থাপনের কথা বলে এলেও এখনও কোনো কিছু হয়নি। অথচ দেশে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। আমরা যখনই পেট্রোবাংলা, বাপেক্স এর কাছে গ্যাস চাচ্ছি তারা বলছে গ্যাস নেই। তাহলে কেন গ্যাস উত্তোলনে সরকার মনোযোগী হচ্ছে না।”
তিনি রান্নার ও যানবাহনের জন্য সরবরাহ করা গ্যাসের দাম সমন্বয় করে শিল্পের জন্য গ্যাসের সংস্থান করার পরামর্শ দেন।
এমসিসিআই প্রবৃদ্ধি ও অর্থনীতির উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করে।
তাতে সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে ৮টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করেছে তারা।
চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও বিনিয়োগে স্থবিরতা দূর, বাজেট ঘাটতি কমানো, রপ্তানি পণ্য বাড়ানো, শক্তিশালী উৎপাদনশীল শির্প ভিত্তি তৈরি, অবকাঠামো দূর্বলতা ধুর, অর্থনৈতিক সুশাসনে ধীর গতির উন্নয়ন, আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা।
অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বক্তব্য শুনে বলেন, “সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানো যৌক্তিক। তবে এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। আর বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া কল কারখানার অব্যবহৃত জমি বিষয়েও আমার কলিগদের সাথে কথা বলবো।”
এসএমই শিল্প কিভাবে সুবিধা পায় সেটা অবশ্যই দেখা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।