মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে দুই সপ্তাহের মধ্যে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পঁয়তাল্লিশ মাস বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি শুরুর আশা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2022, 12:47 PM
Updated : 21 July 2022, 04:17 PM

মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সফর থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “উনি বললেন, ’আপনার ওয়ার্কার কবে নাগাদ আসবে?’”

”তো, আমার মিশনের সাথে আলাপ করলাম, তারা জানাল, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে। উনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের ওয়ার্কার খুব দরকার’।”

মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে (জিটুজি প্লাস) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।

কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই ১০ এজেন্সিকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট’ করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারা পরেও মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান।

সরকারের তরফে নানা দেন-দরবার আর করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শ্রমিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে গত ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া।

এরপর গত বছরের ডিসেম্বর মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

গত জুনের শুরুতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের ঢাকা সফরের সময় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, জুনের মধ্যে মধ্যেই কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু তার কথা শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি।

মালয়েশিয়ায় মোট কত কর্মী যেতে পারে- এ প্রশ্নের উত্তরে ওই সময় ইমরান আহমদ বলেছিলেন, “এমওইউতে পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেওয়ার কথা। এ বছরের মধ্যে ২ লাখ নেওয়ার কথা। আমাদের তো মনে হচ্ছে, এই বছরের মধ্যেই পাঁচ লাখ যাবে।”

বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করলাম। বললেন যে, তাদের ওয়ার্কার দরকার, বাংলাদেশি ওয়ার্কার তারা চান।

”আমি বললাম, আমরা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আমরা দিতে চাই। তবে একটা বিষয়, আমাদের ওয়ার্কার যারা আসবে তারা যেন এক্সপ্লয়টেড না হয়, বৈষম্যের শিকার না হয়, তাদের যেন ওয়েলফেয়ার দেখা হয়।”

এর জবাবে শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য না করার আশ্বাস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “উনি বললেন, ‘আমরা একটা আইন করেছি, এই আইনের অধীনে যারাই কাজ করবে মালয়েশিয়াতে, কেবল বাংলাদেশি না, যে কোনো ওয়ার্কার্স, তাদের আমরা ভালো আবাসন দিব, তাদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। আমরা এটার নিশ্চয়তা দিচ্ছি’।”

এমওইউ অনুযায়ী দেশের বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর কথা বলে আসছিল বাংলাদেশ সরকার।

এর মধ্যে এক চিঠিতে মালয়েশিয়া সরকার জানায়, তারা ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্ট ও আড়াইশ সাব-এজেন্টের মাধ্যমে কর্মী নিতে চায়।

রিক্রুটিং এজেন্টের সংখ্যা এভাবে সীমিত করে রাখলে আগের মতো সিন্ডিকেশনের সুযোগ তৈরি হওয়ার আশঙ্কার কথা বলে আসছে বাংলাদেশে এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ সব এজেন্সির তালিকা দিয়েছে ওদেরকে। আমরা চাই, উন্মুক্ত ও অবাধ। কোনো সিন্ডিকেট-ফিন্ডিকেট হবে না। বাংলাদেশের এই পজিশন। আমাদের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী এটা নিয়ে খুব দেনদরবার করেছেন, আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চাই।

”ওরা বলছে, এতগুলো এজেন্সি থেকে যদি আমরা লোক নিই, তাহলে ব্যবস্থাপনায় অসুবিধা হতে পারে। সেজন্য তারা নির্ধারণ করেছে। আমরা বলেছি, আপনারা যেভাবে চান নির্ধারণ করেন, শুধু আমাদের ওয়ার্কারদের ওয়েলফেয়ারটা খেয়াল রাখবেন। ওরা যাতে নির্যাতিত না হয়, তাদের থেকে এমন ধরনের চাঁদা চাইবেন না, যাতে তারা অত্যাচারিত হয়।”

ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ বর্তমান কর্মীদের

মালয়েশিয়ায় যেসব বাংলাদেশি শ্রমিকের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে বা শেষ হওয়ার পথে, তাদরেকে সেটার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেশটির প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের সাথে আলোচনার সূত্র ধরে তিনি বলেন, “আমি বললাম, আমি শুনেছি, আপনার এখানে অনেক বাংলাদেশি ওয়ার্কার আছে। তাদের ওয়ার্ক পারমিট এক্সপায়ার হয়ে গেছে। আর কারও কারও চলে যাচ্ছে। তারা আমার সাথে দেখা করেছিল এবং তারা তাদের দুঃখের কাহিনী বলেছে। তারা বললো, আমরা এখানে ডেট এক্সপায়ার হয়ে যাচ্ছি, দেশ থেকে আবার নতুন লোক আসতেছে, এটা কী ধরনের ব্যাপার?

“উনি বললেন যে, ‘নো, আমি এক্ষুণি ঘোষণা দিচ্ছি, যারা এক্সপায়ার হয়েছে কিংবা হচ্ছে তারা এক্সটেনশনের জন্য অ্যাপ্লাই করুক, আমরা তাদেরকে কাগজপত্র দেব’। এটা খুব সুসংবাদ।”

অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “উনি বলেছেন, ’আমি ঘোষণা দিলাম, যারা এক্সপায়ার হয়ে যাচ্ছে, তারা যেন এক্সটেন্ট করতে পারে’। তবে, তাদেরকে এজন্য অ্যাপ্লাই করতে হবে।”